আপনি ‘জাজমেন্টাল’? সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে আপনার নিজেরই : জানাচ্ছে গবেষণা
অপ্রিয় বা অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সম্মুখীন আমাদের রোজই কমবেশি হতে হয়। কোনও কোনও পরিস্থিতি সত্যিই অনতিক্রম্য, কোনও কোনওটা আবার আমাদের বা অন্য কারো ভুল অথবা দূরদৃষ্টির অভাবের জন্য ঘটে। তাই প্রতিদিনের নানা ঘটনা আমাদের প্রভূত অস্বস্তি, বেদনা ও উদ্বেগ দেয়। মনোবিদরা বলেন, আমাদের anxiety, stress বা আরও জটিল মনোবিকলনের ওপর সবচেয়ে গভীর প্রভাব ফেলে জীবন, জগৎ ও চারপাশের মানুষজন বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত ও মতামত। অর্থাৎ, সোজা কথায়, আমরা ‘জাজমেন্টাল’ কিনা, বা কতটা ‘জাজমেন্টাল’, তার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে আমাদের নিজেদের ভালো থাকা।
আজকের সময়ে অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে ‘Judgemental’ শব্দটি। চারদিকে বিচারকের আঙুল দেখতে দেখতে আমরা অনেকেই ক্লান্ত, ভীত, বিধ্বস্ত। ‘জাজমেন্টাল’ মানে কী? কাদের বলব 'জাজমেন্টাল'? সহজ করে বললে, খুব সহজেই বা খুব সামান্য সময়েই কোনও ব্যক্তি বা ঘটনা বিষয়ে একটা নিশ্চিত সিদ্ধান্তে চলে আসার প্রবণতা থাকে যাঁদের, তাঁদের আমরা ‘জাজমেন্টাল’ বলি। যাঁরা জাজমেন্টাল তাঁদের সঙ্গ বেশিরভাগ মানুষ সাধারণত পছন্দ করেন না, তাদের ঘনিষ্ঠ হতে দ্বিধা বোধ করেন। ‘জাজমেন্টাল’-রা তাঁদের চারপাশের লোকজনের জন্য ক্ষতিকর আবহ তৈরি করেন। কিন্তু মনোবিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণা জানাচ্ছে, তাঁরা নিজেদের অজান্তে সবচেয়ে ক্ষতি করেন নিজেদের। ‘উচিত-অনুচিত’ বা ‘ঠিক-ভুল’-এর মাপকাঠিতে সবসময় দুনিয়াকে মাপতে থাকলে, কিংবা চট করে অন্যের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার অভ্যেস থাকলে এই মনোভাবের সবচেয়ে বড় শিকার হবেন আপনি নিজেই। Mindfulness পত্রিকার কয়েক বছর আগের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা কম জাজমেন্টাল তাঁদের উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ইত্যাদি বিষয়ক সমস্যা বেশ কম। অন্যদিকে অভিজ্ঞতা, ভাবনা বা আবেগকে কাটাছেঁড়া করে যাঁরা চটজলদি কোনও একপেশে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চান, তাঁদের মধ্যে এই জাতীয় সমস্যার প্রকোপ অনেক বেশি। অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ, প্রতিক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি, মননশীলতা কোনও কিছু বর্ণনা করার ধরণ ইত্যাদি পরীক্ষা করে সমীক্ষকেরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যাঁরা সত্যকে সহজে গ্রহণ করতে পারেন, ভিন্নমতকে সম্মান করতে পারেন, তাঁরা অনেক সুখী।
আরও পড়ুন : মেনস্ট্রুয়াল কাপ : ভাবনা, দুর্ভাবনা পেরিয়ে / প্রজ্ঞা দেবনাথ
নন-জাজমেন্টাল হওয়া সহজ নয়। অনেকে নন-জাজমেন্টাল হওয়াকে ইতিবাচক মনোভাবের সঙ্গে এক করে দেখেন। হ্যাঁ, নন-জাজমেন্টাল মনোভাব আসলে শেষ বিচারে এক ধরনের ইতিবাচক মনোভাবই। কিন্তু ইতিবাচক মনোভাব মাত্রেই নন-জাজমেন্টাল নয়। নন-জাজমেন্টাল হওয়ার অর্থ কোনও পরিস্থিতি বিষয়ে চটজলদি স্থির সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিস্থিতিকে বুঝতে শেখা। Mindfulness পত্রিকার সমীক্ষা বলছে, কোনও পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ামাত্র পাঁজিপুথি মিলিয়ে ইস্পাতকঠিন মতামত তৈরি করে ফেলাটাই সমস্যার। কোনও কিছুর গায়ে ‘ঠিক-ভুল’-এর লেবেল এঁটে দেবার জন্য ব্যস্ত হওয়া বা নিজের মতামতে পাথরের মতো অনড় থাকা - এসবই ‘জাজমেন্টাল’ মনোভাবের অঙ্গ। এই মনোভাব শুধু যে বাকিদের ক্ষতি করে তা নয়, নিজের মনের মধ্যে এক গভীর দগদগে ক্ষত তৈরি করে রাখে। তাই ‘জাজমেন্টাল’ লোকেরা বাকিদের সুখ যত না কাড়ছেন, নিজেদের সুখ কাড়ছেন তার চেয়ে অনেক বেশি।
তথ্যঋণ : mentalhelp.net
#শরীর ও মন #ডিপ্রেশন #মানসিক স্বাস্থ্য #জাজমেন্টাল #judgemental #সিলি পয়েন্ট #শ্রীপর্ণা সেনগুপ্ত #বাংলা পোর্টাল #ওয়েবজিন #webportal