'একুশে'-র গানই অমর করেছে আবদুল গাফফার চৌধুরীকে
'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি / আমি কি ভুলিতে পারি...।" এমন কোনো শিক্ষিত বাঙালি পাওয়া দুষ্কর যার অন্তত এই দুটি লাইন জানা নেই। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পকর্ম সম্ভবত এই গানটিই। বছরের পর বছর বিপুল জনপ্রিয়তায় অভিনন্দিত হতে হতে হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাঙালির গর্বের অভিজ্ঞান। বাংলা ভাষার অধিকারের জন্য প্রতিবাদ মিছিল করতে গিয়ে সে-বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি প্রাণ হারিয়েছিলেন অনেকে। রক্তে ভেসে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথ। তারই প্রতিক্রিয়ায় এ-গান লিখেছিলেন উনিশ বছরের তরুণ আবদুল গফফার চৌধুরী। তখন তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র। এই একটি গানই রাতারাতি তাঁকে এনে দিয়েছিল খ্যাতি।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার উলানিয়া গ্রামে। বাবা ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী ছিলেন ব্রিটিশ-ভারতের কংগ্রেস নেতা। গাফফার চৌধুরী ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। লেখালিখি এর আগেই শুরু করেছিলেন। ১৯৪৯ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, ২১ তারিখ ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে যান আহত ছাত্রদের দেখতে। ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে তিনি মাথার খুলি উড়ে যাওয়া একটি লাশ দেখতে পান। লাশটি ছিল ভাষাশহিদ রফিক উদ্দীন আহমেদের। এই ভয়ংকর দৃশ্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গাফফারের চেতনায় ধরা দেয় কবিতার লাইনগুলি। আব্দুল লতিফ এতে সুরারোপ করেন এবং বিভিন্ন সভা ও জমায়েতে গাইতে থাকেন। অচিরেই এই গান মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে - বাংলা ভাষা আন্দোলনের পবিত্র প্রতীকে পরিণত হয়। পরে ১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদ এই গানে নতুন করে সুর করেন এবং তাঁর করা সুরটিই বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখন এই সুরটিই প্রচলিত। ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে প্রকাশিত হয় গানটি।
আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, যুক্ত থেকেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে। সমসাময়িক রাজনীতি-অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে কলাম লেখার জন্য তাঁর বিশেষ খ্যাতি ছিল। ১৯৭১ সালে পূর্ববাংলার মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে কলকাতা চলে আসেন। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র 'সাপ্তাহিক 'জয়বাংলা'-য় লেখালিখি শুরু করেন। পাশাপাশি 'দৈনিক আনন্দবাজার' ও 'যুগান্তর' পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
আরও পড়ুন - 'একুশে'-র প্রথম কবিতা / আহ্নিক বসু
লেখালিখির জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কারের মতো সম্মান। অথচ মানুষ তাঁকে মনে রেখেছেন তরুণ বয়সে লেখা গানটির জন্যই। গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৯ মে, ৮৮ বছর বয়সে গাফফার চৌধুরীর মৃত্যু হয়। ১৯৬১ সালের ১৯ মে বরাক উপত্যকার ভাষা শহিদদের মৃত্যুর দিন। সেই একই দিনে 'একুশে'-র গানের রচয়িতারও জীবনাবসান হল।
#আবদুল গাফফার চৌধুরী #একুশে ফেব্রুয়ারি #ভাষা দিবস #International Mother Language Day