কোভিড অতিমারি এবং এক গভীর অন্তর্ঘাতের গল্প
দুটো খুব আপাতনিরীহ ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক –
ঘটনা এক - কোভিড অতিমারির কারণে স্কুল বন্ধ। তাই সরকার থেকে মিড-ডে মিলের সঙ্গে প্রতি মাসে একটা করে প্রশ্নপত্র বিলি করা হচ্ছে, যার নাম ‘মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’। সঙ্গে নির্দেশ – ‘ছেলেমেয়েরা বাড়িতে বসে সেই কাজগুলো করে নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে জমা দেবে’। তা প্রথমদিকে এই প্রশ্নপত্রে কোনও নম্বর দেওয়া থাকত না, কিন্তু বছরের শেষ দিকে এসে যখন বোঝা গেল, বার্ষিক পরীক্ষা আর নেওয়া সম্ভব হবে না, তখন ওই ‘মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’-কে ভিত্তি করেই একটা মূল্যায়নের ব্যবস্থা করার চেষ্টা হল। তাই নভেম্বর মাসের প্রশ্নপত্রে নম্বর যোগ করা হল। স্কুলে স্কুলে সেই প্রশ্নপত্র পৌঁছনোর পর দেখা গেল, বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নপত্রে ‘পূর্ণমান’-এর কোনও সামঞ্জস্য নেই। অর্থাৎ বাংলায় প্রশ্ন হয়েছে তিরিশ নম্বরের, কিন্তু অঙ্কে হয়েছে পঞ্চাশ নম্বরের। আবার ইতিহাস হয়তো সাতচল্লিশ নম্বরের। শুধু তাই-ই নয়, একাধিক বিষয়ে দেখা গেল, পূর্ণমান যা, বিচ্ছিন্নভাবে প্রশ্নের মানগুলি যোগ করে তা আসছে না। অর্থাৎ পূর্ণমান হয়তো পঞ্চাশ, কিন্তু নম্বরগুলো যোগ করে হচ্ছে পঁয়তাল্লিশ। বোঝা গেল, সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে থাকা যে শিক্ষা-নিয়ামকেরা এই সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন, তাঁদের কাজ কতটা দায়সারা। একটি বার্ষিক মূল্যায়নের জন্য প্রশ্নপত্র বানাবেন যাঁরা, প্রশ্নপত্রের ‘পূর্ণমান’ কত হবে – সেটুকুও জানিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করা হয়নি।
ঘটনা দুই - মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনুপ্রেরণায়’ সম্প্রতি চালু হয়েছে ‘বাংলার শিক্ষা দূরভাষে’ প্রকল্প। ছাত্রছাত্রীরা তাদের কিছু জানার বা বোঝার থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে একটি টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে তা জেনে নিতে পারবে। প্রত্যেক জেলার শিক্ষা-পরিদর্শকের (ডিস্ট্রিক ইনসপেক্টর অফ স্কুলস, সংক্ষেপে ডি.আই) দপ্তর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠানো হয়েছে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে – ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে যেন অবশ্যই ওই নম্বরে ‘ফোন করানো’ হয়, কারণ বিষয়টির সঙ্গে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর মান-সম্মানের প্রশ্ন জড়িত। অথচ ছাত্রছাত্রীরা সেই টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে কেমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হল? ফোন করার পর প্রথমে ফোনটি ধরেন কন্ট্রোল রুমের কোনও কর্মী। তিনি ‘কল’-টি ট্রান্সফার করেন একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার কাছে। উক্ত শিক্ষক বা শিক্ষিকা ফোন ধরে বললেন, তিনি সেই মুহূর্তে স্কুলের মিড ডে মিল বিলির কাজে ব্যস্ত আছে। অন্য একজন জানালেন, তিনি রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে ফেঁসে আছেন। এমনকী একজন এও জানালেন যে তিনি ওইদিন ছুটি নিয়েছেন, তাই কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না। বোঝা গেল, কোনও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই শুধুমাত্র কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকার ফোন নম্বরের ওপর ভরসা করে এতবড় একটা প্রকল্প চালু করে দেওয়া হয়েছে।
‘শিক্ষা’ সম্পর্কে আমাদের সরকারের ‘মানসিকতা’-টা ঠিক কেমন, তা বুঝতে উপরের দুটো উদাহরণই সম্ভবত যথেষ্ট।
বিগত দু’বছরের কোভিড অতিমারির সময় জুড়ে আমাদের রাজ্যের শিক্ষাদপ্তরের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন, দায়সারা কাজকর্মের অজস্র নমুনা দেখা গেছে। এবং এখনও যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রকের দায়িত্বে হাতবদল ঘটেছে, কিন্তু পরিস্থিতির বদল হয়নি। অথচ এরই মধ্যে রাজ্য সরকারের প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক অ্যাপ-এর উদ্বোধন করা হল। ‘প্রচ্ছন্ন’ শব্দটা বোধহয় ভুল-ই বলা হল। কেননা খোদ স্কুল পরিদর্শকের তরফে হোয়াটসঅ্যাপ করে বিভিন্ন স্কুলের প্রধানশিক্ষকদের ওই অনুষ্ঠানে হাজির হতে বলা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক প্রধানশিক্ষক সরাসরি শিক্ষার এহেন বাণিজ্যিকীকরণের তীব্র সমালোচনা করেন। একটি বেসরকারি সংস্থাকে এমন নির্লজ্জভাবে ‘প্রমোট’ করার বদলে সরকার তার নিজস্ব পরিকাঠামো ব্যবহার করে এমন কোনও অ্যাপ কেন তৈরি করছে না – সেই প্রশ্নও তাঁরা তোলেন।
পশ্চিমবঙ্গে যে-কোনও একটি বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়ম স্কুল চালাতে সমস্ত পরিকাঠামো সহ যে মাসিক যে খরচ হয়, যে কোনো একটি সরকারি বা সরকার-অনুমোদিত স্কুলের শুধুমাত্র শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দিতেই তার সমান খরচ হয়। জনগণের পকেট থেকে আসা এই বিপুল পরিমাণ টাকা নিছক ‘নষ্ট করা’ হয়েছে বিগত দু-বছর ধরে। (অনেকেই এই ‘নষ্ট করা’ শব্দবন্ধটি নিয়ে আপত্তি জানাতে পারেন, তাঁদের জন্য বলি, যে ব্যয় কোনোরকম ফল দেয় না, তাকে ‘নষ্ট’-ই বলা হয়।) অথচ চাইলে অনায়াসে এই বিপুল পরিমাণ মানব সম্পদকে অন্যভাবে কাজে লাগানো যেতে পারত। আমাদের রাজ্যের শিক্ষাদপ্তরের নিজস্ব অনলাইন পোর্টাল রয়েছে, রয়েছে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ তথ্যপঞ্জী বা ডেটাবেস। সেই ডেটাবেস কাজে লাগিয়ে একজন শিক্ষককে তাঁর বাড়ির কাছাকাছি থাকা অন্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনোর সহায়তার কাজে নিযুক্ত করা যেতেই পারত। একজন শিক্ষককে যদি ভোটের কাজে অথবা জনগণনার কাজে নিয়োগ করা যায়, তবে কোভিডজনিত জরুরি অবস্থার কারণে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে পাঠানোই বা যাবে না কেন?
অথচ যা হল, তা এর একেবারে উলটো। মাসের পর মাস ছেলেমেয়েদের মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক বিলি করা হল, অথচ সেই খাতাগুলো দেখার বা মূল্যায়নের কোনও সরকারি নির্দেশ পর্যন্ত জারি করা হল না (একমাত্র শেষ নভেম্বর মাসেরটি ছাড়া)। ফলে ‘সরকারি অর্ডার না থাকার’ অজুহাতে সেই খাতাগুলো শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছুঁয়েও দেখলেন না। ছেলেমেয়েরা বৃথাই পাঁজা পাঁজা উত্তর লিখে জমা করল। সেই বিপুল পরিমাণ উত্তরপত্র ডাঁই হয়ে পড়ে রইল টিচার্স রুমের কোনায় অথবা কোনও গুদাম ঘরে – যথাসময়ে পুরনো কাগজের দরে বিক্রি হবার জন্য।
অনলাইন পঠনপাঠনের ব্যাপারেও একই কথা বলা যায়। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কারা অনলাইন ক্লাস করতে সক্ষম আর কারা নয় -- ইচ্ছে করলেই সরকারের তরফে একটা খুব সাদামাটা সমীক্ষা করে তা বার করে ফেলা সম্ভব ছিল। তারপর যাদের স্মার্টফোন আছে, তাদের জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেত, আর যাদের নেই, তাদের জন্য রাখা যেত বিকল্প পঠনপাঠনের ব্যবস্থা। যাদের স্মার্টফোন নেই, তাদের যদি স্কুলে এসে পড়াশুনোর সুযোগ দেওয়া হত, তাহলে অনায়াসে কোভিড সংক্রান্ত দূরত্ববিধিও রক্ষা করা যেত আর ছাত্রছাত্রীদের একটা বিরাট অংশকে শিক্ষার অঙ্গন থেকে অকালে বিদায় নিতে হত না।
করা যেতে পারত এরকম অনেক কিছুই। কিন্তু বাস্তবে যা হয়েছে এবং আজও হয়ে চলেছে – সন্দেহ হয় – তার পিছনে গোটা ব্যবস্থাটাকে ভিতর থেকে ধ্বসিয়ে দেওয়ার এক নিবিড় অন্তর্ঘাত ক্রিয়াশীল। এবং সেই কাজে আমাদের শিক্ষক-সমাজকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক সময়ই তাঁরা নিজেরাও বুঝতে পারেন না যে তাঁরা আসলে কালিদাস-বৃত্তিতে নিযুক্ত, অর্থাৎ যে ডালে তাঁরা বসে আছেন, সেই ডালটিকেই তাঁদের দিয়ে কাটানো হচ্ছে। একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।
কমবেশি দু-বছরের এই কোভিড অতিমারির সময় জুড়ে আমাদের রাজ্যের শিক্ষাদপ্তর স্কুল বন্ধ করে রাখা ছাড়া ছাত্রস্বার্থে আর কোনও সুপরিকল্পিত গঠনমূলক কাজ করে উঠতে পারেনি। দলে দলে ছাত্র স্কুলছুট হয়ে তামিলনাড়ু-কেরালা-রাজস্থান-মুম্বইতে কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছে, শয়ে শয়ে ছাত্রী উঠে বসতে বাধ্য হয়েছে বিয়ের পিঁড়িতে। শিক্ষাদপ্তরের কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। অথচ সেই অতিমারি পর্বেই ‘উৎসশ্রী’ নামের একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করে শিক্ষকদের স্বেচ্ছা-বদলির প্রায় নিঁখুত একটি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অসংখ্য শিক্ষক বদলি নিয়ে তাঁদের বাসস্থানের কাছাকাছি স্কুলে চলে এসেছেন।
অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, শিক্ষকদের নিজ বাসস্থানের কাছে বদলির মধ্যে দোষের কী আছে! আপাতভাবে সত্যিই কিছু নেই। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে আমাদের রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার কী ভয়ানক এবং সুদূরপ্রসারী ক্ষতি এর ফলে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষকদের প্রায় সকলেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিযুক্ত শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। যাঁরা শহুরে নন, তাঁরাও চাকুরি পাবার অব্যবহিত পরেই নিকটবর্তী শহরে বাসা নেন – সন্তানের শিক্ষা, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসা ইত্যাদি নাগরিক সুযোগ-সুবিধার লোভে। ফলে এতদিন এ রাজ্যের গ্রামগঞ্জের স্কুলগুলোর অধিকাংশ শিক্ষকই নিকটবর্তী মফস্বল শহরে থেকে নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে এসেছেন। এবার স্বেচ্ছা-বদলি নিয়ে তাঁদের বেশিরভাগই চলে এলেন শহরে, নিজ নিজ বাসস্থানের কাছাকাছি। ওদিকে খালি পড়ে রইল গ্রামের স্কুলগুলি।
আমাদের রাজ্যের শহরাঞ্চলের স্কুলগুলি বহুদিন ধরেই ছাত্রের অভাবে ধুঁকছে, কারণ বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়ামের দাপট। ফলত উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে শিক্ষকবদলির কার্যক্রম শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিপুল বৈষম্য এবং তৎপ্রসূত নৈরাজ্যের জন্ম দিল। একদিকে শহরের স্কুলগুলোতে ছাত্রসংখ্যা তলানিতে অথচ শিক্ষক উদবৃত্ত, অন্যদিকে গ্রামের স্কুলগুলিতে ছাত্রসংখ্যা বিশাল অথচ সেখানে শিক্ষকের তীব্র অভাব। পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তবর্তী জেলাগুলির এমন একাধিক মাধ্যমিক বা উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলের কথা এই প্রতিবেদকের জানা আছে, উৎসশ্রীর বদলি-পর্বের পরে যেখানে মাত্র ছয় বা সাতজন শিক্ষক অবশিষ্ট আছেন। এবং যাঁরা আছেন, তাঁদেরও আর পড়ানোর দিকে বিশেষ মন নেই, বদলি পাবার অপেক্ষায় দিন গুণছেন তাঁরাও।
একদিকে তো দীর্ঘদিন এ রাজ্যের স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ, তার ওপর যেখানে প্রকৃত প্রয়োজন, সেখানেই কৃত্রিমভাবে আরও অভাব তৈরি করে দেওয়া হল। অন্যদিকে যেখানে আদৌ প্রয়োজন নেই, সেখানে উদবৃত্ত কর্মীদের টেনে নিয়ে গিয়ে প্রায় বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেবার ব্যবস্থা করা হল। কী বলা যায় একে --- শিক্ষাব্যবস্থাকে ভিতর থেকে ধ্বসিয়ে দেবার গভীরতর চক্রান্ত ছাড়া?
এহ বাহ্য, এ রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যটি হল শিক্ষকদের কাজ না করার জন্য সরকারের তরফে পরোক্ষ প্রণোদনা, অতিমারির সময়ে যা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই এ রাজ্যে পঠনপাঠনের গুণমান বিচারের জন্য কোনও সক্রিয় স্কুল-পরিদর্শনের রেওয়াজ নেই। স্কুল পরিদর্শকের দপ্তর একটা আছে বটে, কিন্তু তাও কাগজপত্রের ভারে ভারাক্রান্ত। দপ্তরের আধিকারিকরা ফাইল সই করতে করতেই কর্মদিবস অতিবাহিত করেন, অফিসের চার দেওয়ালের বাইরে পা রাখার সুযোগই পান না। এ রাজ্যের স্কুলশিক্ষকদের কাজের কোনোরকম মূল্যায়নের ব্যবস্থাই নেই। একটি স্কুলে সমস্ত ছাত্র মাধ্যমিক বা উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করলেও তার জন্য কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকাকে জবাবদিহি করতে হয় না, তাঁদের বেতনের থেকে এক পয়সাও কাটা যায় না।
অতিমারির দীর্ঘ দু-বছর এই শিক্ষকদের আরও অলস, আরও কর্মবিমুখ করে দেওয়া হল। পরিচিত একজন প্রধানশিক্ষক সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের কাছে আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘এই লম্বা ছুটির পর স্কুল খুললে ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখো করতে যতটা না কষ্ট হবে, তার থেকে বেশি কষ্ট হবে শিক্ষকদের ক্লাসমুখো করতে।’ বাড়িতে বসে বসে কর্মহীন আলস্যে দিনযাপন করলে শুধু শরীরে নয়, মনে-মাথায় সর্বত্রই মেদ জমে। সেই বিপুল পরিমাণ মেদ ঝরানোর কোনও বন্দোবস্ত সরকারের তরফে করা হবে কি? কোনও ওরিয়েন্টেশন ওয়ার্কশপ? কোনও রিফ্রেশার কোর্স? নাহ, এখনও পর্যন্ত তো তেমন কিছুর কথাই শোনা যায়নি।
আরও পড়ুন : ঘুমপাড়ানি গান কিংবা বাংলার শিক্ষা / পূর্বা মুখোপাধ্যায়
এ রাজ্যের শিক্ষকশ্রেণি সম্ভবত এই বিষয়ে একেবারেই অনবহিত যে, এই সর্বাত্মক চাকুরিগত নিরাপত্তা, কোনোরকম শাস্তির আশঙ্কাহীন এই কাজের পরিবেশ – এগুলো সবই অন্যতর কিছু বিপদের অশনি-সংকেত বহন করে। বাজার অর্থনীতির একটি মূল কথা হল – যখন তোমাকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কিছু দেওয়া হবে, জানতে তখন তুমিই পণ্য, তোমাকেই ব্যবহার করে বৃহত্তর কিছু লাভের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে আসন্ন সম্পূর্ণ বেসরকারিকরণই সেই লাভ, আজ যার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছেন দিদিমণি-মাস্টারমশাইরা। একদা ঠিক এভাবেই একেবারে ভিতর থেকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতের একমাত্র সরকারি টেলিকমিউনিকেশন সংস্থাটিকে। কোভিড-অতিমারি এসে সেই গোপন কার্যক্রমকে আরও খানিকটা এগিয়ে দিল।
.................................
[মতামত লেখকের ব্যক্তিগত]