একটা নতুন কবিতার বই
বই : ও অনন্তলতা কবি : পূর্বা মুখোপাধ্যায় প্রকাশক : ভাষালিপি প্রচ্ছদ : সঞ্জীব চৌধুরী
......................................
ক্ষীণতনু বইখানি জুড়ে সাজানো রয়েছে মায়া। দুয়ার জড়িয়ে ধরেছে অনন্তলতা। এ বই নিয়ে লেখার অধিকারী আমি নই। তাই এ লেখা অপেক্ষায় রইল তার যোগ্য লেখকের। এখানে শুধু এক সামান্য পাঠক এঁকে রাখছে তার মুগ্ধতাটুকু। পূর্বা মুখোপাধ্যায়ের “ও অনন্তলতা”।
“জ্যোৎস্নাস্পদেষু, তুমি কই?
আমি ন্যাড়া ছাদে। ভাঙা আলসের ওপর।
কুয়োপাড়ে। ঝুঁকে দেখলে জলে নেমে ফালাফালা হই।
কেন ফালাফালা?
না তাকালে মিটে গেল জ্বালা!
তাকালে বিচিত্রসুখে নিজেকে ফুরোই।”
যেন কোনও নিভৃত দ্বিরালাপ। কবিতার কথক এবং আরেকজনের সঙ্গে। যাঁর আশ্চর্য সম্বোধন জ্যোৎস্নাস্পদেষু! তিনি রয়েছেন ন্যাড়া ছাদে। ভাঙা আলসের ওপর। কুয়োপাড়ে। যেখানে জ্যোৎস্না থাকে! কুয়োর জলের বুকে, চাঁদ ভেঙে যায় অনর্গল। “ঝুঁকে দেখলে জলে নেমে ফালাফালা হই”। জলের কাঁপন যেন ফালা করছে চাঁদের প্রতিবিম্ব। একটি দৃশ্যকল্প। তবে শুধু সেইমাত্র নয়। এ নিজেকে ফুরিয়ে ফেলার সেই আশ্চর্য সুখ। এই বই এমনই কিছু আশ্চর্য কবিতার সমাহার। আরেকটি কবিতা পড়া যাক।
"আমি সেই আল, উদ্দালক।
শস্যখেতে জলে জলে মাছ ভেসে আসে
তাই আঁশগন্ধ, অন্য কিছু নয়।
আমি যত্ন জানি বলে আজও তুমি
অন্ধকার অনিশ্চিতে ভেসে ফিরে আসো।
পায়েসপাতার ঘ্রাণে, অন্নসরা উথলে খিদে দিই, চিরকাল?"
না। এ কবিতা নিয়ে লিখব না কিছুই। লিখব না কারুকৃতি। পৌরাণিক অনুষঙ্গ। আসলে কবিতা পড়া তো এক সুদীর্ঘ যাত্রা। অচেনা ফুল কুড়াতে কুড়াতে, অজানা নদীবাঁক দেখতে দেখতে পাঠক কবিতার কাছে আসে। এ লেখা কেবল, বাংলা কবিতার অজানা নদীবাঁকের পৌঁছসংবাদটুকু দিল। আসলে পূর্বা পাঠককে বারবার এনে দাঁড় করান এক আশ্চর্য অপ্রত্যাশিতের সামনে। সেই বিস্ময়বিন্দুতে দাঁড়িয়ে কয়েক আঁজলা ভালোলাগা ভাগ করে নিলাম। পূর্বা মুখোপাধ্যায়ের কবিতার আলাপ এইটুকু। আরোহ –অবরোহ পেরিয়ে একদিন এ লেখা বিস্তারে যাবে। ততদিন রাতবালিশের পাশে জ্যোৎস্নামাখা বইখানি থাকুক।
..............................
#বইয়ের খবর #Book Review #পূর্বা মুখোপাধ্যায় # ও অনন্তলতা #ভাষালিপি #বিবস্বান দত্ত #সিলি পয়েন্ট