'চলমান' পামগাছ : ইকুয়েডরের জঙ্গলে 'হেঁটেচলে' বেড়ায় রহস্যময় এই গাছ
বলা নেই-কওয়া নেই, আচমকা একটা গাছকে 'লম্বা লম্বা পা' ফেলে হেঁটে চলে বেড়াতে দেখলে নির্ঘাত ভির্মি খাব আপনি-আমি। কিন্তু এ কোনও অলৌকিক বা রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজের গল্প নয়। ইকুয়েডরের গভীর ট্রপিক্যাল রেন ফরেস্টে সত্যিই স্থান পরিবর্তন করে এক বিশেষ প্রজাতির গাছ। নাম তার ক্যাশাপোনা (Cashapona)। পাম গোত্রের এই গাছ চলমান পাম (Walking Palm) নামেও পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Socratea exorrhiza।
'লম্বা লম্বা পা' না বলে লম্বা লম্বা শিকড় বললেই অবশ্য যথাযথ হয়। এ গাছের শিকড় মাটির ওপরে অনেকটা পায়ের মতোই খাড়া দৃশ্যমান। আর তাই দিয়েই দিব্যি স্বচ্ছন্দভাবে স্থান পরিবর্তন করে এই গাছ। ক্যাশাপোনা গাছের এই তাক লাগানো আচরণ ১৯৮০ সালে প্রথমবার চিহ্নিত করেন গবেষক জন. এইচ. বডলি। এই গাছের উচ্চতা হয় প্রায় ১৬-২০ মিটার এবং ব্যাস ১২-১৬ সেমি। কীভাবে স্থান পরিবর্তন করে এই গাছ? রহস্য ভেদ করেছেন স্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্ভিদবিজ্ঞানী, পিটার ভ্র্যানস্কি। তাঁর মতে, টিকে থাকার তাগিদেই শিকড়ের সাহায্যে জায়গা পরিবর্তন করতে পারে তারা৷ কখনও কখনও দিনে দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত৷ আসলে ওই অঞ্চলে ভূমিক্ষয়ের হার খুব বেশি৷ আর জঙ্গল গভীর হওয়ার সর্বত্র সূর্যের আলোও পৌঁছতে পারে না৷ তাই গোড়ার মাটি যখন আলগা হয়ে আসে, তখন এই পাম গাছগুলো অপেক্ষাকৃত শক্ত মাটি এবং বেশি আলোর সন্ধানে উঁচু উঁচু নতুন ঠেসমূলজাতীয় শিকড় তৈরি করে৷ এক দিকে যখন সেই নতুন শিকড় শক্ত মাটিতে ক্রমশ গেঁথে যেতে থাকে, পুরনো শিকড়গুলো ধীরে ধীরে মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এভাবে গাছটি নিজের পুরনো অবস্থান থেকে খানিকটা সরে যায়। এ ভাবেই গাছটি একটু একটু করে আগের জায়গা থেকে সরে যায়৷ ভ্র্যানস্কি-র কথায়, "এ ভাবে পুরোপুরি জায়গা বদল করতে একটি গাছের প্রায় দু’বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে৷" কখনও কখনও নিজের প্রথম অবস্থান থেকে প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত সরে যেতে দেখা যায় গাছগুলিকে।
ঋণ : natureandculture.org
আরও পড়ুন: জলবায়ু-পরিবর্তনের ফলে ঘাতক হয়ে উঠতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী এই ফাঙ্গাস