বাংলায় বিজ্ঞান ও পরিবেশ-আন্দোলনের 'ভ্যানগার্ড' : প্রয়াত সমর বাগচী
বিজ্ঞান ছিল তাঁর নেশা ও পেশা। প্রকৃতি-পরিবেশ ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তাই এই দুই জরুরি বিষয়কে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয়ে ওঠা আন্দোলনে তিনি ছিলেন একেবারে সামনের সারিতে। প্রতিটা অন্যায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্বিধাহীন ছিল তাঁর প্রতিবাদ। বস্তুত, গত কয়েক দশকে তাঁর মাপের অ্যাকটিভিস্ট বাঙালি সমাজ পায়নি। গতকাল (বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই) ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন 'চিরতরুণ' সমর বাগচী।
সমরবাবুর জন্ম বিহারের পূর্ণিয়ায় ১৯৩৩ সালে। গ্রাজুয়েট হয়ে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে 'ধানবাদ স্কুল অফ মাইনস' এ যান তিনি। কর্মজীবন শুরু করেন ম্যাগমা মাইনস-এ। পরে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামের অধিকর্তা হন। এ-সময় তিনি বিজ্ঞানকে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় করতে সারা ভারত চষে বেড়িয়েছেন। প্রায় তিনশোর বেশি স্কুলে গিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করেছেন। শিশুদের বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার সুচিন্তিত উদ্যোগ নিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজ্ঞানচর্চাকে গবেষণাগার থেকে সাধারণ মানুষের সমতলে নিয়ে যাবার জন্য যাঁদের অবদান সবচেয়ে বেশি, তাঁদের একজন সমর বাগচী। আটের দশকে তাঁর পরিচালনায় দূরদর্শনে সম্প্রচারিত বিজ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠান 'কোয়েস্ট' ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল। মুনাফালোভী পুঁজিনির্ভর বাজার ব্যবস্থা কীভাবে প্রতিনিয়ত শেষ করছে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, সে-বিষয়ে আমৃত্যু সোচ্চার ছিলেন তিনি। গান্ধীজী ও রবীন্দ্রনাথের ভক্ত সমরবাবু ছিলেন কর্মযোগী। অফুরন্ত উদ্যম ছিল তাঁর। শেষ বয়সেও বিভিন্ন সেমিনার, সভা, জমায়েতে সশরীরে যোগ দিয়েছেন। ২০১৯ সালে ছাত্রযুবদের আয়োজিত এনআরসি-সিএএ বিরোধী মিছিলে হেঁটেছেন, স্লোগানও দিয়েছেন। দেওচা-পাচামি প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। শেষ কিছুকাল দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজ্যের মেধাজীবী-মহলে। বিজ্ঞান আন্দোলন ও পরিবেশ আন্দোলন দুই-ই হারাল এক বিরাট মাপের সংগঠককে।