'ফিউচার লাইব্রেরি প্রজেক্ট' : 'আজি হতে শতবর্ষ পরে'-র গ্রন্থাগার
কাজ গুছিয়ে রাখা হচ্ছে এখন থেকেই। জমা নেওয়া হচ্ছে নামজাদা লেখকদের পাণ্ডুলিপি। কিন্তু সেসব বই আকারে প্রকাশ পাবে একশো বছর পর। ২০১৪ সাল থেকে এমনই আশ্চর্য এক ভবিষ্যৎ-গ্রন্থাগারের উদ্যোগ শুরু করেছে নরওয়ের অসলো শহরের 'ফিউচার লাইব্রেরি ট্রাস্ট' নামে এক সংস্থা। এই একশো বছর ধরে প্রতি বছর একটি করে পাণ্ডুলিপি বেছে নেওয়া হবে এবং সেগুলি ২১১৪ সালে প্রকাশ পাবে।
এই 'ফিউচার লাইব্রেরি প্রজেক্ট'-এর মূল ভাবনা কেটি প্যাটারসন ( Katie Paterson)-এর মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনি নরওয়ের একজন শিল্পী। নরওয়ের নর্ডমার্কার অরণ্যে রোপণ করা হয়েছে একশোটি পাইন গাছ। এই গাছগুলি থেকেই আসবে একশোটি বইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ। লেখকরা সকলে এই শর্তেই লেখা দিচ্ছেন যে পাণ্ডুলিপি আলো দেখবে সুদূর ২১১৪ সালে। পাণ্ডুলিপিগুলি গোপনে সযত্নে সংরক্ষিত থাকবে অসলোর পাবলিক লাইব্রেরিতে। পাণ্ডুলিপি নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছেন আট সদস্যের এক বিশেষজ্ঞের দল। ২০১৪ সালে মার্গারেট অ্যাটউড ( Margaret Atwood)-এর Scribbler Moon নামে একটি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি দিয়ে এই উদ্যোগের সূচনা হয়। এরপর এই কয়েক বছরে জমা নেওয়া হয়েছে ডেভিড মিশেল (David Mitchell), এলিফ শাফাক (Elif Shafak), জুডিথ স্কালান্সকি (Judith Schalansky) প্রমুখ সাহিত্যিকদের কোনও সাহিত্যিকের একাধিক পাণ্ডুলিপি বিবেচিত হবে না। একশোটি পাণ্ডুলিপি নেওয়া হবে একশোজন সাহিত্যিকের থেকেই। বইগুলি মাত্র ১০০০ কপি করেই ছাপা হবে। যে তাৎক্ষণিক সন্তুষ্টি আজ আমাদের জীবন ছেয়ে ফেলেছে, তার বাইরে বেরিয়ে কিছু করতে চাওয়ার ইচ্ছে থেকেই কেটি প্যাটারসনের এই ভাবনা। এই দ্রুতগতির জীবনে দীর্ঘ অপেক্ষার মূল্য হয়তো আমরা অনেকেই ভুলতে বসেছি। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য লেখকদের এই বিশেষ পাণ্ডুলিপিগুলির জন্য কেটি তাই পাঠককে অপেক্ষা করাতে চান। এ যেন টাইম মেশিনে চড়িয়ে বইকে একশো বছর পরে পাঠিয়ে দেওয়া। পাঠক তার জন্য অপেক্ষা করবেন কিনা, সেটাও তো একটা পরীক্ষার বিষয়। শতবর্ষ পরে সত্যিই বই জিনিসটার চেহারা কেমন হবে, আদৌ বই বলে কিছু টিকবে কিনা, টিকলেও ছাপার অক্ষরে থাকবে কিনা - সেসব বিতর্ক উড়িয়ে তিনি ছাপা বইয়ের পক্ষেই আগাম বাজি ধরে রাখছেন।
....................
ঋণ : thegurdian.com
#Future Library project #Katie Paterson #Margaret Atwood