সাম্প্রতিক পাঁচটি কবিতা
..................
ফরাসি অনুষঙ্গে দেশি কবিতা
আমার বন্ধু সালমান আর রাইয়ানা
আইফেল টাওয়ারের সামনে তোলা ছবি পোস্টায়,
আমি ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রাসেঁজের সামনের জ্যামি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সে ছবিতে লাইক দিয়ে কিছুটা ফরাসি ফিল পাই।
মাথায় ২ ফোঁটা বৃষ্টি পড়লে ভাবি,
কালিদাসি মেঘে তো মিশে আছে
বোদলেয়ারের বাচ্চাকাচ্চা।
ভাবনার ১২টা বাজায়ে
আষাঢ় মাস তার
মুষলমেধা দেখালে
আলিয়ঁস ছাড়িয়ে
১টা ক্যাফেতে বসে
অর্ডার করি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই;
আমাদের দেহ নয় শুধু
আমাদেরই রক্তমাংস
একই সঙ্গে এ দেহ
বাংলা আলুর সমাধিগৃহ।
কাঁটা-পোড়া-সেদ্ধ আলুর শ্রাদ্ধ সেরে
বর্ষণদিনে জলদি বাসায় ফিরে
বিদেশি কোনো রেইনি মুভি ডাউনলোড করি,
সাবটাইটেল ছাড়াই চোখ পেতে ভিজি
প্যারিসের রাস্তায়,
রিমঝিম ভাষায়।
মুভি অন রেখেই ডুবে গেলাম ঘুমের কাদায়,
আর আমার প্রায় অর্ধেক দেশ ডুবে যায় বন্যায়।
ঘুম থেকে ওঠার আগেই পানিপ্লাবিত স্বপ্নের মাঠে
মরতে বসা কৃষক ও গরুর
গবাদি কান্নার নীচে চাপা পড়ে
অসমাপ্ত ফরাসি মুভির নিদ্রাবিঘ্নিত দর্শক ক্যালকুলেট করছে;
অন্তত স্বপ্নের বন্যায়
চোখ বুঁজে ডুবে বাঁচার জন্য মড়ার এই দুই বাঙালি চোখে
কতটা ঘুম সে
জাগিয়ে রেখেছে!
...........
সকাল সকাল
কত কথা বলে
কত কিছু ছিঁড়ে
তীব্র তাজা ক্ষুধায়
কিছু না পেয়ে
খেয়ে-টেয়ে
বাসি বার্গার;
যা চমকায় সবই কি বিদ্যুৎ?
গ্লাসভরা ছন্দের দুধ।
বুকোস্কির বাক্যে
কোহেনের গানে
তুমি থাকলে
এহেন হালফিলে
প্যারাডাইস বাঁচল
যতো পাস্ট টেন্সে।
চোখের চাখাতে
কাজ হয়ে গেলে
কে এর চে' নিচে নামে!
কবরে নামার আগে
নানাপ্রকার নিচে নামা
প্র্যাক্টিস করা লাগে।
কোনও না কোনও
শালার ছেলের
মিটিংয়ের মিনিটসে
আমাদের উপরে ওঠা
নিশ্চিত হতে পারে।
শিয়াল-শকুনের
লালায় ভিজার আগে
এই গরমে কুরবানি হবো
কতটা শেয়ারে;
তারও আগে এ আদম
পাবে কি আষাঢ়ি কদম?
নাকি ঘামের মল্লারে,
ভেজা আন্ডারওয়্যারে
দুনিয়াদারির আগুনে পুড়ে
কোনো শান্ত সাবওয়ে ধরে
ঢুকে পড়বে তার
ব্যক্তিগত শান্তিনিকেতনে
কিংবা
অশান্তির হেডকোয়ার্টার্সে!
..........
শুক্কুরবারের কবিতা
কেউ দাওয়াত না দিলেও
শুক্রবার দুপুরগুলো ভেসে থাকে
কেমন যেন দাওয়াত-দাওয়াত গন্ধে।
শৈশবকে খুন করে
এই এত্ত বড়ো হয়ে
পায়ের তলায় সর্ষে মেখে
কোথাও গিয়ে
নাকে-মুখে মুড়ি খেয়ে
পানি পানের আগেই
সাধের শুক্কুরবার ঝুলিয়ে রাখি
এ আমার টাইমলাইনে।
আর ধরো,
কোনো শুক্রবারে কোথাও না গিয়ে
একটুখানি বসে যদি থাকি
পাড়ার মোড়ের ট্র্যাডিশনাল টঙে,
হারানো নাইন্টিজে দেখা
০১টা জালালি কইতরের মুখ মনে করে,
বাইশের বিহানে
অতীত নামের সাবেক সব রঙিন রুবিক্সে
যখন চতুর্পাশ ভরে গেছে ২৫ রকম প্রাঙ্কে;
তখন তুমি কি ফিরায়ে দেবে
মোর লস্ট ফ্রাই ডে?
.........
আব্বাস কিয়োরোস্তামির বার্থডে নোট
এখন অতিসকাল
ঘরে গুমোট, বাইরে বৃষ্টি।
তেহরানের কোনো কবরের ছায়া
এসে দোল খায়
নবোদয় হাউজিং-এর বিছানায়।
আসন্ন আস্ত দিনের
সবজেটে-রক্তমাংসল দেহের
স্যুপ, কিমা, কারির স্বাদ
চেখে দেখা হয়
ঘুমঘুম রসনায়।
ছেলেটা দৌড়ায়
মেয়েটা পালায়
অলিভের ছায়ায়
মহাকালের লুকপলান্তি খেলায়
বারবার এই বান্দার পা হড়কায়।
খালি রাস্তায়
আরোহীশূন্য গাড়িটা ছুটে যায়
বন্ধ মিউজিয়ামের দরোজায়;
আজ কত নম্বর বিপদসংকেত?
সব মাছধরা ট্রলারকে
উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
বৃষ্টি জোর বেগে না
তবে আকাশে কালো মেঘ
মাটিতে কাদার ক্লোজআপ!
কিয়োরোস্তামির কবর থেকে
০৩টা ফুল
০৫ টা প্রজাপতি
০১টা হাওয়া এসে
সকালটা বুড়ো হওয়ার আগেই আমাকে
গোধূলির মায়ার মতো
ঝরিয়ে দিয়ে যায়।
..........
হুম
পৃথিবী নাকি ছোটো হয়ে আসছে
আকাশেরও কাছে চলে আসছে মহাকাশ।
ছোটো পৃথিবীর ভিতরে
মানুষের বাচ্চারা জন্ম নিচ্ছে
বড়ো হচ্ছে
খাচ্ছে
ঘুমাচ্ছে
ঘামছে
এবং
০১টা মানুষ আর কিছু না পারুক
পুরান পৃথিবীতে
অন্তত নতুন আরও ০১টা কবরের
সম্ভাবনা তৈরি করে চলেছে!
***********************************
[অলংকরণ : অভীক আচার্য]
#কবিতা #silly পয়েন্ট #পিয়াস মজিদ