নিবন্ধ

লাল নীল সবুজেরই...

দোয়েল রক্ষিত June 30, 2021 at 6:41 am নিবন্ধ

১,২,৩....১০.. না, ১২। মোট ১০টা ওয়েবিনার আর ২টো পারফরম্যান্সের অংশ হয়েছি এই মাসে। প্রত্যেকটিরই উপলক্ষ্য ছিল ‘প্রাইড’ এবং কুইয়ার আন্দোলনের বিষয়। অন্যান্যবার এই সমস্ত অনুষ্ঠান এবং আলোচনা অফলাইনে হয়ে থাকে। কিন্তু গত দু বছর ধরে, পরিস্থিতির কারণে সব অনলাইনেই হচ্ছে। এখন আর ভেন্যু বুক করা নেই, পুলিশ বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার ঝামেলা নেই, বাস ট্রেন ধরে যথাস্থানে যথাসময়ে পৌঁছানোর প্রশ্ন নেই। অনেক কিছুই বদলে গেছে, অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু বদলায়নি আমাদের মঞ্চ ও মাইক পাওয়ার সময়সীমা। আর সহজ হয়নি আমাদের জীবনযাপন।

মিথ্যে বলব না, আমি সারা বছরই কম-বেশি কুইয়ার বিষয়ক অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখার কিংবা নানা বিষয় উপস্থাপন করার সুযোগ পাই। ধন্যবাদ আমার প্রিভিলেজ এবং সোশ্যাল ক্যাপিটালকে। কিন্তু তার সংখ্যা কখনোই মাসে ৪ বা ৫ পেরোয় না। এর একটা বড় কারণ জুন মাস বাদ দিলে বাকি মাসগুলোতে শুধুমাত্র কুইয়ার অন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন এবং সংগঠনেরা এই জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। আর জুন মাসের পয়লা তারিখটা এলেই, বাকি সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে টোকেনবাজি করতে। এরই সুবাদে যারা কুইয়ারদের মধ্যে একটু পরিচিত, তাদের গুগল ক্যালেন্ডার ভরে ওঠে রিমাইন্ডারে। আর যারা তেমন পরিচিত নয় তারাও একটা-দুটো আলোচনায় ডাক পেয়ে যায়। কারণ লোক দিয়ে মাঠ, থুড়ি, মাস ভরাতে হবে তো।


সমস্ত ব্র্যান্ডের লোগোতে, চ্যানেলে, খবরের কাগজ-পত্রিকার পাতায় পাতায় ঝিকিমিকি রামধনু, সোশ্যাল মিডিয়ার পেজগুলোতে "লাভ ইজ লাভ"-এর অতিমারি, আর সবার কথাবার্তায় কেমন একটা 'বসে অ্যাপ্রপ্রিয়েট করো' প্রতিযোগিতার মনোভাব! এই সবকিছু মিলিয়েই পুরো প্রাইড মাসটা মেলায় পরিণত হয়। আর যে কথাটা ভুলিয়ে দেওয়া হয় এই পদ্ধতিগত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, সেটা হল প্রাইডের শুরুয়াত হয়েছিল পুলিশের গায়ে ছোঁড়া কিছু ইঁট-পাটকেল আর মলোটভের শিখায়। মূলস্রোত বালতি বালতি রামধনু রং ঢেলেও সেই শিখা নিভাতে পারবে না, যতদিন না ‘কুইয়ার’-রা তাদের শিকল থেকে মুক্ত হচ্ছে।

আরও পড়ুন : আমার আকাশও নীল / অপ্রকাশ সেন

ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টের মাধ্যমে ট্রান্স ব্যাক্তিদের আইনি নিপীড়ন, স্কুল-কলেজ-কর্মক্ষেত্র এমনকি পরিবারের মধ্যে কুইয়ার ব্যক্তিদের শোষণ, সমাজে বাড়তে থাকা সমষ্টিগত ঘৃণা, এবং কুইয়ার কমিউনিটির মধ্যে সিস, উচ্চবর্ণ, উচ্চবর্গের প্রতিনিধিদের হাতে বাকিদের কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার প্রচলিত সংস্কৃতি -- এই সমস্ত বিভিন্ন স্তরের শ্রেণীবিন্যাস এবং ভেদাভেদ থেকে যতদিন না আমাদের সমাজ মুক্ত হচ্ছে, ততদিন প্রাইডকে ঝকমকে গ্ল্যামারাস মোড়কে ঢেকে রাখলে চলবে না। ৩৭৭ বাতিল হওয়াটা ভারতের কুইয়ার আন্দোলনের পথে একটা ছোট্ট মাইলফলক মাত্র। আরো বড়ো বড়ো বাধা রয়েছে আমাদের মুক্তির পথে। সেগুলো পার করতে হলে প্রাইডকে একটা মাসের গণ্ডির বাইরে বের করতে হবে। যে কুইয়ার ব্যক্তিরা সারা বছর কথা বলার সুযোগ বা জায়গা পায় না, তাদেরকে মঞ্চ এবং মাইক্রোফোন ফিরিয়ে দিতে হবে। সংসদ থেকে সিনেমা -- প্রত্যেক ক্ষেত্রে কুইয়ার মানুষদের প্রতিনিধিত্ব শুধুমাত্র কুইয়ার মানুষদেরই করতে দিতে হবে। আর এই সুবৃহৎ 'প্রজাতন্ত্রে' কুইয়ার প্রজাদের নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষার্থে কড়া আইন তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এত্তোগুলো কাজ এক মাসের মেলা বসিয়ে করে ফেলা যায় ভেবে অনেকেই এখনও নিজেদের পিঠ চাপড়ে চলেছে! 


আরও পড়ুন : AS PARROTS CATCH FIRE, ROSES DRAW FLAME / Trijit Acharyya

....................................

[কভার পোস্টার : অর্পণ দাস] 


#সিলি পয়েন্ট #ওয়েবজিন #web portral #pride month #LGBTQ #Lgbt Community #দোয়েল রক্ষিত

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

47

Unique Visitors

219190