রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে নাটক লিখে পরিচালনা করেছিলেন নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ
শিল্পসাহিত্যের সমঝদার হিসেবে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের নামের সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। শুধু শিল্পরসিক নন, তিনি নিজেই ছিলেন সাহিত্যিক ও শিল্পী। মেটিয়াবুরুজকে শিল্প-সাহিত্যের পীঠস্থানে পরিণত করেছিলেন তিনি। নৃত্যকলায় পারদর্শী ছিলেন। একাধিক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। গান লিখেছিলেন। লিখেছিলেন একটি নাটকও। পরিচালনাও করেছিলেন নিজেই।
তখনও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নবাব হননি। ১৮৪৩ সালে ভাই সিকান্দর হাসমতের সম্মানে এক জলসায় মঞ্চস্থ করেন নিজের লেখা গীতিনাটক ‘রাধা কানহাইয়া কা কিসসা’। রাধা-কৃষ্ণের আখ্যানকে তিনি রূপ দিয়েছিলেন নাটকে। নাটকটি রচিত হয় উর্দুতে। 'রহস' নামে এক বিশেষ আঙ্গিকে রচিত এই নৃত্যনাট্য সে সময় শিল্পবোদ্ধাদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। পণ্ডিতরা এটিকেই প্রথম আধুনিক উর্দু নাটক বলে চিহ্নিত করে থাকেন।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে সে এক ক্রান্তিকাল। ইংরেজরা ক্রমে দখল নিচ্ছে সারা দেশের। অযোধ্যা দখল করে ওয়াজিদ আলিকে বন্দি করে পাঠানো হয় তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায়। নবাবকে সপরিবারে গৃহবন্দী করে রাখা হয় কলকাতার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের বন্দর এলাকা মেটিয়াবুরুজে। সেটা ১৮৫৬ সালের মে মাস। নতুন শহরে এসেও নবাব শিল্পচর্চা থেকে বিরত থাকেননি। পরের বছর মহাবিদ্রোহের সময় তাঁকে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে বন্দী করে রাখা হয়েছিল ২৫ মাসের জন্য। তারপর মুক্তি পেয়ে ব্রিটিশ সরকারের পেনসনের টাকায় মেটিয়াবুরুজে নিজের মনের মতো পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। কার্যত অধীনতামূলক মিত্রতা হলেও রাজকীয় চালচলনে কোনও ঘাটতি রাখতেন না নবাব। খরচ করতেন প্রচুর। রাজত্ব হারানোর মনোকষ্টে ভুগতেন। সে কারণেই বোধহয় মেটিয়াবুরুজের দিনগুলোকে তিনি রাঙিয়ে তুলেছিলেন জলসা, গজল ও ধ্রুপদ সঙ্গীতে। তাঁর জলসায় সৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর, যদুভট্ট, অঘোরনাথ চক্রবর্তীর মতো বহু জ্ঞানীগুণী মানুষের সমাগম ঘটত। উস্তাদ নিয়ামতুল্লাহ খান নাকি তাঁর দরবারেই উদ্ভব করেছিলেন আধুনিক সরোদের। কলকাতা পেয়েছিল নিজের সাংস্কৃতিক আইকনকে। শোনা যায় বিরিয়ানিও নাকি কলকাতায় এসেছিল নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের হাত ধরেই। জীবনের শেষ একত্রিশ বছর নবাব এভাবেই বিলাসিতা ও শিল্পচর্চার মধ্যে কাটিয়েছিলেন।
#সিলি পয়েন্ট # ওয়াজিদ আলি শাহ # মেটিয়াবুরুজ # মৃণালিনী ঘোষাল # ফিচার #Mrinalini Ghoshal # Wazid Ali Shah # Nawab # silly point #web portal