মোচাঘণ্ট
পরীক্ষার শেষ ঘন্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে খাতা গুছিয়ে প্রস্তুত হয়ে বসা। আমার খাতা, সাদা খাতায় কলম- কালির আঁচড় কেটে তাকে বারবার অন্যের হাতে তুলে দেওয়া। এই নিয়ম দুনিয়ার, তোমার যা সব কিছু, ভালো না মন্দ, ঠিক না বেঠিক, দোষ না গুন - সবটুকু নির্নয় করবে অপরে। তাদের যুক্তি - বুদ্ধির বিচারে। সাদা পাঁচটা পৃষ্ঠা সুতো দিয়ে বেঁধে, স্কুলের বাইরে বেরিয়ে এসে দেখতাম, বড়ো বটগাছে কোকিল ডাকছে। কতো চেষ্টা করেছি, কিছুতেই দেখতে পাই নি। বৃথা চেষ্টা জলাঞ্জলি দিয়ে, দুপুর রোদে বাড়ি ফিরে এসেছি। বসন্তের দুপুরের আলাদা মায়া। ঝিরঝিরে হাওয়া, ঝকঝকে রোদ, বিষন্ন কানাগলি। রোদ নিভে আসা বিকেলে, মায়ের দিকে এগিয়ে যেতাম।
ও মা, মোচাঘন্ট রাঁধো না কেন?
- দাদা খেত।
- ও মা, দরজায় কড়া নাড়লে আতকে ওঠো কেন?
- ওরা এসেছিল
- কারা?
- ওরা।
মা আধো তন্দ্রায়।
চোদ্দ বছরের মা মরা মেয়ে। বাবা, দাদা, ভাই। শোক নেই। করলে ভাত, জল দেবে কে? ভাত রাঁধে উনুনের আঁচে। এক জনের ভাত একটু বেশি রাখতে হয়। যে ঘরের ছেলেরা দেশের শত্রু বনে যায়। বোনকে ঘুমোতে নেই, বাপকে কুঁজো হয়ে যেতে হয়। ছেলের দোষ? কেন অপরে ভাত পাবে না সেই প্রশ্ন করা। কেন করবে হে? তুমি খাচ্ছ। তুমি পড়ছ। ব্যস চুপ। আবার প্রশ্ন কী? সবাইকে খেতে নেই। বেঁচে থাকতে নেই। যে ছেলেটা রাস্তার পিছন গলি দিয়ে ঢুকে পড়ে মধ্য রাতে। বোনের বেড়ে দেওয়া ভাত গোগ্রাসে গিলে নেয়। দরজার কড়া ভেঙে ঢুকে, তার রক্তে মন্ড হয়ে যায় মোচার ঘ্যাট। বুড়ি মাগী আধো রাতে উঠে বন- জঙ্গল পেড়িয়ে মোচা, কাঁচকলা বিক্রি করে যায় শহরের বাজারে। আধপেটা ভাত কেন? শুধু মাত্র এই প্রশ্ন করে একটা ছেলের ঘিলু মিশে যায় মোচার খোলার সাথে।