ফ্রিজ-লাইব্রেরিতে ভরে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ডের রাস্তাঘাট
রুমাল থেকে বেড়াল হয়ে যাবার কথা আমরা সুকুমার রায়ের গল্পে পড়েছি। কিন্তু ফ্রিজ থেকে লাইব্রেরি? আজ্ঞে হ্যাঁ। তবে গল্প না। একেবারে নির্জলা সত্যি। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড আর ক্রাইস্টচার্চ শহরের রাস্তাঘাটে হাঁটলেই ইতিউতি দেখা মিলবে ফ্রিজ-লাইব্রেরির। ব্যাপারটা আর কিছুই না, পুরনো এবং ব্যবহারের অযোগ্য ফ্রিজগুলোকে রাস্তার ধারে বই-ভর্তি করে রেখে দেওয়া হচ্ছে। বইয়ে ভরা ফ্রিজগুলোর মাথায় লেখা থাকছে ‘Book Stop’। সঙ্গে উল্লেখ করা থাকছে ‘Free Little Library’ কথাটিও। কেউ চাইলেই সেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারেন, পড়া শেষ হলে রেখে দিতে পারেন। নিজেরা বই দানও করতে পারেন এই লাইব্রেরিগুলোতে। সব মিলিয়ে বইপ্রেমীদের জন্য এ এক অবাধ আনন্দভোজ।
এই চমৎকার ভাবনাটি এসেছে লেই তোতু নামে এক ডিজাইনারের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে। ‘Book Stop’ নামে এই অলাভজনক উদ্যোগটি তিনি প্রথম চালু করেন অকল্যান্ডের মাউনট রস্কিল এলাকায়। ৩১ নম্বর স্কাউট এভিনিউয়ে অবস্থিত তাঁর প্রথম ফ্রিজ লাইব্রেরিটি। খুব কম সময়ের মধ্যেই বিষয়টি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আরও আরও ফ্রিজ লাইব্রেরির দাবি আসতে থাকে তোতুর কাছে। ফ্রিজ এবং বই - দুয়েরই যোগান আসতে শুরু করে উৎসাহী মানুষজনের কাছে থেকে। শুধু অসাধারণ আইডিয়ার জোরেই অকল্যান্ডের বইপ্রেমীদের কাছে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে গেল ফ্রিজ লাইব্রেরি।
প্রধানত সামনে স্বচ্ছ কাঁচের দরজাওয়ালা ফ্রিজই তোতু লাইব্রেরির জন্য ব্যবহার করেন। এই মিনি লাইব্রেরিগুলোর জন্য তিনি বেছে নেন রাস্তার তুলনামূলক নিরিবিলি একটা কোণ। বেশ কয়েকটা লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ার জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থাও রেখেছেন তিনি। ফ্রিজগুলোর গায়ে তিনি লিখে রাখেন বই পড়ার উপযোগিতা বিষয়ক কিছু কথা।
স্ক্রিনমুখী নতুন প্রজন্মকে বইয়ের দিকে ফেরাতে চান তোতু। তাঁর নিজের কাছে বইয়ের প্রসারের পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ফ্রিজের মতো বিশালবপু একটা যন্ত্রকে ঠিকঠাক পুনর্ব্যবহার করতে পারা। Electronic Waste যেখানে গোটা পৃথিবীর জন্যই একটি গভীর সমস্যার বিষয়, সেখানে খারাপ হয়ে যাওয়া ফ্রিজের এমন একটি ব্যবহারের ভাবনা সত্যিই প্রশংসা দাবি করে। তোতুর মতে, এই ফ্রিজগুলি অন্তত পনেরো বছর লাইব্রেরির কাজে ব্যবহার করা যাবে।
….……………………
ঋণ : https://www.rnz.co.nz