ছত্রাক থেকে ছিলিম: গাঁজা চাষের অভিনব পন্থার হদিশ
“গাঁজার নৌকা পাহাড়তলি যায়”, মীরাবাই সে কথা জানলেও কোনোদিন হয়ত ভাবেননি যে বিজ্ঞানীরা সেই পাহাড়তলির গাঁজাকে ল্যাবরেটরির গলিতে এনে ফেলবেন। আর শুধু আনবেন না, দস্তুর মতো তার চাষ করবেন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীবের দেহে!
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জে কিসলিং ও তাঁর সহকারীরা বিকার-ফ্লাস্কের মধ্যে ছোটখাটো একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন বললেও বোধহয় অত্যুক্তি হয় না। এই বিপ্লবে তাঁদের ইনকিলাব হয়েছে এক সর্বব্যাপী ছত্রাক – ইস্ট। বিস্কুট থেকে বিয়ার, পাঁউরুটি থেকে আপ্পাম – ইস্টের ফার্মেন্টেশন ক্ষমতার পরিচয় আমাদের অজানা নয়। খাদ্যশিল্প বা ওষুধশিল্প, যেখানেই ব্যাপক হারে ফার্মেন্টেশেনের প্রয়োজন হয়েছে, উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে জিনগতভাবে রূপান্তরিত ইস্ট প্রতিবার আমাদের সহায় হয়েছে। ইস্ট গবেষণার সহযোগিতা না থাকলে ইনসুলিনের অতি-উৎপাদনের স্বপ্ন কোনোদিনই বাস্তবায়িত হত না। তাই কোনোকিছু অধিক পরিমাণে বানাতে হলে ইস্টের ঘাড়েই সে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই স্বাভাবিক। কিসলিংরাও সেই কাজটাই করেছেন, তবে একটা নয়, দুটো আলাদা ইস্টে।
গাঁজা বা ক্যানাবিসের মূল উপাদানটিকে বলা হয় ক্যানাবিনয়েড। তা, গাঁজা গাছের প্রকারভেদ হিসেব করলে প্রকৃতিতে প্রায় ১০০ রকম ক্যানাবিনয়েড পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সবচাইতে সহজলভ্য হল দুটি – টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (THC) আর ক্যানাবিডিওল (CBD)। গবেষকরা একদল ইস্টের মধ্যে জেনেটিক কারিকুরি করে THC বানানোর উৎসেচক ঢুকিয়ে দিয়েছেন, আরেক দলের মধ্যে একইরকম কারিকুরি করে ঢুকিয়েছেন CBD বানানোর উৎসেচক। উভয় প্রকার ইস্ট সাধারণ শর্করা গ্যালাকটোজ খেয়ে বিপাকক্রিয়ায় তৈরি করে ক্যানাবিজেরোলিক অ্যাসিড (CBGA), সেখান থেকেই একদল বানায় THC আর অন্যদল বানায় CBD; তারপর নির্দিষ্ট তাপে এই দুইয়ের মিশ্রণে তৈরি হয় বাবার প্রসাদ!
কিন্তু গাঁজা জিনিসটা তো ডালভাত নয় যে দুবেলা দুমুঠোর জায়গায় চারমুঠো জুটলে ভালোই হয়। যে দেশে নায়িকার ব্যাগে গাঁজা ছিল কিনা, তাই নিয়ে রাতের পর রাত টিভি সাংবাদিক খাপ বসাতে পারেন, সে দেশে এই গবেষণা আপাতভাবে সত্যিই কোনও অর্থ বহন করে না। কিন্তু দেশের চৌহদ্দির বাইরে বেরলে দেখব, বহু দেশেই এলাকা বিশেষে নির্দিষ্ট মাত্রার গঞ্জিকা সেবন আইনত মান্য। আবার বিশ্বস্বার্থের নিরিখে দেখলে, THC আর CBD দিয়ে মৃগী, প্রদাহ এবং মানসিক দুশ্চিন্তার দুর্দান্ত চিকিৎসা সম্ভব। বাজারচলতি যে কোনও ভালো মৃগীরোধী ওষুধ বা উদ্বেগজনিত স্ট্রেসের ওষুধ নিয়ে তার উপাদান তালিকায় চোখ রাখুন, এই দুটি যৌগের নাম নজরে পড়বেই। অথচ গাঁজা চাষের আইনগত ঝক্কি তো আছেই, উপরন্তু এই চাষ যথেষ্ট সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। ইস্টের পেটে তাকে যখন একবার ঢুকানো গেছে, সেই সমস্ত বাধা পেরিয়ে এহেন জৈব ছিলিমের প্রসাদ পাওয়া শুধু আর কিছু বছরের অপেক্ষা।
..................
তথ্যসূত্র : Complete biosynthesis of cannabinoids and their unnatural analogues in yeast, Nature, 2019
#cannabinoids #yeast #বিজ্ঞান #ফিচার #silly পয়েন্ট