ফিচার

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ঋণ ছিল স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের, মেটাতে হয় সুদও

তোড়ি সেন Mar 1, 2023 at 7:04 am ফিচার

মেটাতে হবে বড় অঙ্কের টাকা। প্রাপক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। আর ধার করেছেন যিনি? তিনি আর কেউ নন, খোদ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ্ঞে হ্যাঁ। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। জমিদারের ছেলে হলেও, ধার করতে হয়েছিল রবীন্দ্রনাথকে। এমনিতে বিশ্বভারতী পরিচালনার খরচ চালাতে গিয়ে বারে বারেই অন্যদের অনুদানের উপর নির্ভর করতে হয়েছে তাঁকে, সে কথা সকলেরই জানা। তেমন কোনও কারণেই কি এবারেও ধার করতে হয়েছিল তাঁকে? তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবেই বা ঋণ দিতে পারে কোনও ব্যক্তিকে? কী ঘটেছিল ঠিক?

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার পুরনো কার্যবিবরণী থেকে জানা যাচ্ছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা পাওয়ার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের। না, কোনোরকম অনুদান হিসেবে ওই টাকা দেবেন না ব্যক্তিটি। বস্তুত তিনি ঋণ মেটাবেন। সুদে আসলে তার পরিমাণ প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। সেকালের হিসেবে টাকার অঙ্কটা মোটেই কম নয়। আর ওই বিবরণেই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে ওই পরিমাণ টাকা ফেরত পাবে বিশ্ববিদ্যালয়। বস্তুত, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই সভায় কার্যত তাঁর একটি অনুরোধ নিয়েই আলোচনা হয়েছিল। টাকা পরিশোধ করার জন্য আরও কিছুদিন বাড়তি সময় চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন কবি।

এমনিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কবির রীতিমতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর একাধিক রচনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাঁকে সাম্মানিক ডি.লিট উপাধিও দেওয়া হয়েছিল। সমাবর্তন বা অন্যান্য বিশেষ অনুষ্ঠানে একাধিকবার ভাষণ দিয়েছেন কবি। কিন্তু এসব ছাড়াও, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তাঁর কাঁধে চেপে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঋণের বোঝা। আসলে কুষ্টিয়ায় ‘ঠাকুর কোম্পানি’ নামে এক ব্যবসা শুরু করেছিলেন এই পরিবারের দুই ছেলে, বলেন্দ্রনাথ ও সুরেন্দ্রনাথ। সম্পর্কে তাঁরা দুজনেই রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র। কিন্তু সুরেন্দ্রনাথের উদাসীনতা আর বলেন্দ্রনাথের সরলতার সুযোগে দ্রুতই ব্যবসার ভরাডুবি ঘটে। সুরেন্দ্রনাথ নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন আগেই, বলেন্দ্রর অকালমৃত্যুর ফলে সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ল রবীন্দ্রনাথের উপরেই। সব দেনাপাওনা মিটিয়ে ব্যবসা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কবি। এদিকে পাওনাদারদের টাকা মেটাবার সংগতি যে তাঁর নেই। বাধ্য হয়ে স্যার তারকনাথ পালিতের কাছ থেকে মাসিক সুদের কড়ারে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা ধার করলেন কবি।

সেটা ছিল ১৮৯৯ সাল। বছরের পর বছর ঘুরে গিয়েছে, কিন্তু ওই বিপুল ধার কবি শোধ করে উঠতে পারেননি। এদিকে ১৯১২ সালে নিজের সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে দিলেন তারকনাথ পালিত। কেবল জমি বাড়ি আর নগদ টাকাই নয়, তাঁর দেনাদার ব্যক্তিদের থেকে প্রাপ্য টাকার মালিকও হবে বিশ্ববিদ্যালয়, এমনটাই নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ফলে, এবার সরাসরি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধমর্ণ হয়ে দাঁড়ালেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৬ সালের ১১ অক্টোবর লস এঞ্জেলস থেকে রথীন্দ্রনাথকে লেখা চিঠিতেও এই ঋণ শোধের কথা জানাচ্ছেন কবি। আরও জানাচ্ছেন, ঋণ শোধের মেয়াদ ১৯১৭ সাল পর্যন্তই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে সে বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময় পেয়েছিলেন তিনি। বোঝাই যায়, বিশ্বভারতীর ব্যয়ভারের উপর এই বাড়তি ঋণের বোঝা মেটাতে ভালোমতোই হিমশিম খেতে হয়েছিল রবীন্দ্রনাথকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি থেকে জানা যায়, সেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষমেশ ঋণ শোধ করে দিতে পেরেছিলেন বিশ্বকবি।

.................... 

#calcutta university #Rabindranath Thakur #রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর #কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

9

Unique Visitors

176548