ফিচার

কচুরিপানা নিয়েও গান লিখতে হয়েছে নজরুলকে

টিম সিলি পয়েন্ট July 17, 2020 at 9:10 am ফিচার

না। কচুরিপানা বললেই যে অতিপরিচিত গানটা আমাদের সবার মনে পড়ে যায়, সেটা নয়। তবে সত্যিই কচুরিপানা নিয়ে গান লিখেছিলেন কবি নজরুল ইসলাম। অবশ্য কচুরিপানার গুরুত্ব বা সৌন্দর্য নিয়ে নয়। বরং তার উল্টোটা। আকাশবাণীর হয়ে নানাবিধ ফরমায়েশি গানের মধ্যে একটি কচুরিপানা- বিরোধী গানও লিখেছিলেন নজরুল।

১৯৩০ সাল থেকেই কবিতার চেয়েও বেশি করে গান রচনার দিকে ঝুঁকে পড়ছিলেন নজরুল। গান পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তির আমন্ত্রণ প্রবল হারে বাড়ছিল। ইতিপূর্বেই ১৮২৮ সালে তিনি হিজ মাস্টার্স ভয়েস রেকর্ড কোম্পানিতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। বেতার – অনুষ্ঠানের ফরমায়েশ ও গ্রামোফোন কম্পানির লাভের হিসেব হয়তো বা তাঁর অজান্তেই তাঁকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছিল। বাংলা গানের গর্ভে তখন মুকুলিত হয়ে উঠেছে একটি বিপুল সম্ভাবনাময় বাজারের ইঙ্গিত। নজরুলের মতো বিপুল বিখ্যাত, বহুপ্রজ গীতিকার ও শিল্পীকে এ বাজার ছেড়ে দিল না। নানাভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল। প্রথমদিকে গান রচনার মধ্যে তিনি সুখ খুঁজে পাচ্ছিলেন। তবে অচিরেই নজরুল নিজেও অনুভব করলেন, একটা অসহায় বন্দীদশার মধ্যে পড়ে গেছেন তিনি। খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন তাঁর ‘যুগস্রষ্টা নজরুল’ বইতে লিখেছেন – “ব্যবসায়ীরা যখন তাঁর সামনে তুলেন ধরলেন তাঁদের অর্থের থলি, গানের ভেতরে পেলেন মনের খোরাক, তখন তিনি হারিয়ে ফেললেন নিজের সূক্ষ্ম বিবেচনাশক্তি। সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করলেন তিনি তাঁদের কাছে।” কোনও শিল্পকর্ম যান্ত্রিকভাবে করে যেতে বাধ্য হলে তার নান্দনিক মূল্য বলে যেমন কিছুই অবশিষ্ট থাকেন, তেমনই স্রষ্টার মনেও তা জমিয়ে তোলে ক্লান্তি। যান্ত্রিকভাবে অসংখ্য গান রচনা করতে করতে বিদ্রোহী কবির কবিতার জগতটাই যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে শুরু করল। অগুনতি মধ্যমমানের বা উদ্দেশ্যমূলক ফরমায়েশি গান লিখতে হচ্ছিল তাঁকে। এর সবচেয়ে করুণ উদাহরণ বোধহয় এই কচুরিপানা- বিরোধী গানটি। ১৯৩৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর বেতারে গানটি সম্প্রচারিত হয়। গানের কথাগুলি ছিল এরকম –

ধ্বংস করো এই কচুরিপানা
এরা লতা নয় পরদেশি অসুর- ছানা ।।
ইহাদের সবংশে করো করো নাশ
এদের দগ্ধ করো করো ছাইপাঁশ
এরা জীবনের দুশমন গলার ফাঁস
এরা দৈত্যের দাঁত রাক্ষসের ডানা ।।
এরা ম্যালেরিয়া আনে আনে অভাব নরক
এরা অমঙ্গলের দূত ভীষণ মড়ক
এরা একে একে গ্রাস করে নদী ও নালা
যত বিল ঝিল মাঠঘাট ডোবা ও খানা।।

নজরুলের প্রতি এ অনুযোগ চিরকালই ছিল যে তিনি তাঁর অবিশ্বাস্য প্রতিভা নানাভাবে নানা খাতে অপব্যায় করেছেন। নজরুল নিজেও একাধিক বক্তব্যে একথা কার্যত মেনে নিয়েছেন। কচুরিপানা সত্যিই কতটা ক্ষতিকর বা সেই সেই সূত্রে এই গানটির ব্যবহারিক মূল্য একেবারে অস্বীকার করা যায় কিনা, এসব তর্ক উঠলেও উঠতে পারে। কিন্তু এইসব গানের স্রষ্টা হিসেবে নজরুলের নাম দেখলে বুকের ভিতর একটা হালকা চিনচিনে ভাব চলেই আসে।



তথ্যঋণ : নজরুল জীবনী / অরুণকুমার বসু
পোস্টার : বিবস্বান দত্ত, অর্পণ দাস

#ফিচার

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

9

Unique Visitors

215870