উৎপলকুমার বসুর গদ্য সংকলন ‘সদাভ্রাম্যমাণ’
বই : সদা ভ্রাম্যমাণ লেখক : উৎপলকুমার বসু প্রকাশক : ভাষালিপি সম্পাদনা : অরুণাভ সরকার প্রচ্ছদ : হিরণ মিত্র প্রথম প্রকাশ : কলকাতা পুস্তকমেলা, ২০১৫ দ্বিতীয় মুদ্রণের দাম : ৩০০ টাকা
ভাষালিপি ২০০৫ সালে উৎপল বসুর গদ্যসংগ্রহ প্রকাশ করেছিল। সে বই যাঁরা পড়েছেন তাঁদের কাছে বর্তমান সংকলনের স্বাদ কিছুটা চেনা ঠেকবে। কিন্তু যাঁরা উৎপলবাবুর কবিতাই পড়েছেন শুধু, এ বই তাঁদের কিঞ্চিৎ অবাক করতে পারে। ধ্রুপদী টেস্ট ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ঝোড়ো টি-টোয়েন্টি ইনিংস দেখে যেমন চমক লাগে, অনেকটা সেরকম। উৎপলবাবুর বহুমুখী আগ্রহের ব্যাপ্তি, তাঁর কলমের জোরকে নতুন করে চেনাবে এই সংকলন। এখানে মোট ৫৪ টি ছোটো ছোটো গদ্য রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে একটি অনুবাদ এবং উৎপলবাবুর দুটি সাক্ষাৎকার। সম্পাদক অরুণাভ সরকার গদ্যগুলিকে আলাদা আলাদা গোত্রে সুবিন্যস্ত করেছেন। গদ্যগুলি কোনও না কোনও পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও বেশিরভাগই এর আগে অগ্রন্থিত ছিল। সেগুলিকে এক মলাটে এনে উৎপল বসুর অনুরাগীদের ধনব্যাদার্হ হয়েছেন ভাষালিপি এবং এই বইয়ের পরিকল্পনা ও রূপায়নের সঙ্গে যুক্ত সকলে।
বিনয় মজুমদার, অ্যালেন গিনসবার্গ, শঙ্খ ঘোষ বা তারাপদ রায়কে নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণাগুলি অমূল্য। এছাড়া আলোচনার তালিকায় সেকালের ঈশ্বর গুপ্ত, নবীনচন্দ্র সেনের পাশাপাশি আছেন একালের আল মাহমুদ, অরুন্ধতী রায় বা মালয়ালি কবি কমলা দাস। রয়েছে ৮ টি বুক রিভিউ। তাতে কবিতার বই যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সমাজ-সংস্কৃতি ও দর্শন বিষয়ক বইও। অরিন্দম চক্রবর্তীর ‘দেহ গেহ বন্ধুত্ব : ছ’টি শারীরক তর্ক’, বরুণ চৌধুরীর গদ্যসংগ্রহ বা শিল্পী যোগেন চৌধুরীর একমাত্র কাব্যগ্রন্থ ‘হৃদয় ট্রেন বেজে ওঠে’-র আলোচনা বিশেষ মনোগ্রাহী। ডঃ কুমুদকুমার ভট্টাচার্যের ‘রাজা রামমোহন : বঙ্গদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি’ এবং তাঁরই সম্পাদনায় শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্নের ‘বিদ্যাসাগর জীবনচরিত ও ভ্রমনিবাস’ বইদুটির যে অসাধারণ মনোজ্ঞ সমালোচনা উৎপলবাবু করেছেন, তা থেকে টের পাওয়া যায় তাঁর সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টির গভীরতা। ‘বিবিধ’ পর্যায়ে চিত্রকলা, ফিল্ম স্টাডিজ, লিটল ম্যাগাজিন, সনেট ইত্যাদি নানা বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে স্বচ্ছন্দে বিহার করেছেন তিনি। লোকমাতা দেবী ছদ্মনামে টেলিভিশন পত্রিকায় সংস্কৃতি-বিষয়ক কিছু লঘুরসের গদ্য তিনি লিখেছিলেন। সেগুলি থেকে নির্বাচিত ১৬ টি গদ্য রাখা হয়েছে এখানে। ইমানুয়েল কান্টের একটি বিখ্যাত চিঠির অনুবাদ ‘জ্ঞানদীপ্তি কাকে বলে’ (সরাসরি মূল জার্মান থেকে নয়, ক্যাথরিন পোর্টারের ইংরেজি অনুবাদ থেকে অনূদিত) এই সংকলনের প্রধান একটি আকর্ষণ। কবির সঙ্গে সাইমন জাকারিয়া ও তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারদুটি উপরি পাওনা।
এই সংকলন উৎপল বসুর মনন, বীক্ষণ ও কবিসত্তাকে সমগ্রতায় ধরতে চেয়েছে। কঠিন ছিল সে কাজ। শুধুমাত্র তাঁর গদ্যে বা সাক্ষাৎকারে একজন কবিকে ছুঁতে পারা সহজসাধ্য নয়। কিন্তু বহুমুখী ও বিচিত্র বিষয়াশ্রয়ী লেখার সমাহারে এ প্রয়াস সে দুঃসাহস দেখিয়েছে। বেশিরভাগ লেখাই স্বাদু ও সুখপাঠ্য। আবার কিছু লেখা উৎপল বসুর কবিতার মতোই - জলের অধিকারে পাঠকের আঙুল স্পর্শ করতে চায়। হিরণ মিত্রের প্রচ্ছদ যথারীতি অসাধারণ। ভাষালিপির ছাপা, বইয়ের বাঁধাই বা কাগজের মান বরাবরই ভালো। তবে মৃদু একটি অভিযোগ রয়েছে। গদ্যগুলির প্রকাশকাল এবং কোন কোন পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিল, সেই তথ্য থাকলে সংকলনটি পরিপূর্ণতা পেত বলে মনে হয়।
#বাংলা #বই #বইয়ের খবর #উৎপল কুমার বসু #সদা ভ্রাম্যমান #গদ্যসংকলন #বিনয় মজুমদার #শঙ্খ ঘোষ #অরিন্দম চক্রবর্তী #বরুণ চৌধুরী #যোগেন চৌধুরী #ইমানুয়েল কান্ট #Books #Bengali Books #Book Review