আমেরিকা থেকে উপহার হিসেবে এসেছিল শান্তিনিকেতনের প্রথম ছাপার মেশিন
আমেরিকার লিঙ্কন শহর থেকে উপহার হিসেবে এসেছিল শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ের প্রথম ছাপার মেশিনটি। ১৯১৭ সালে ব্রহ্মবিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য এই উপহার পাঠিয়েছিলেন নেব্রাস্কা প্রদেশের লিঙ্কন শহরের অধিবাসীরা। নাম ‘দ্য লিঙ্কন প্রেস’। মেশিনের গায়ে ধাতুর পাতে খোদাই করা ছিল: ‘প্রেজ়েন্টেড টু দ্য বয়েজ় অব শান্তিনিকেতন’। আর মার্কিন মুলুকের এই উপহার দিয়েই যাত্রা শুরু করেছিল ‘শান্তিনিকেতন প্রেস’।
শান্তিনিকেতনকে ঘিরে রবীন্দ্রনাথের নিরীক্ষা ও কর্মকাণ্ড তথাকথিত প্রথম বিশ্বের দেশগুলির কাছে বেশি করে পৌঁছতে থাকে কবির নোবেল প্রাপ্তির পর। বিদ্যালয় শিক্ষার এই অন্যতর মডেল আকর্ষণ করেছিল অনেককে। ১৯১৭ সালের ৮ জানুয়ারি আমেরিকার নেব্রাস্কা স্টেটের লিঙ্কন শহরে অলিভার থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘ন্যাশনালিজ়ম’। ওই দিনই লিঙ্কনের বাসিন্দারা রবীন্দ্রনাথকে একটি মুদ্রণযন্ত্র উপহার দেন। তবে মেশিন পেলেও ব্যবহার শুরু করতে করতে আরও এক বছর লেগেছিল। সরকারের থেকে ছাপাখানার লাইসেন্স জোগাড় করতে সময় লেগে গিয়েছিল। তাছাড়া সে সময় শান্তিনিকেতনে ছাপার মেশিন চালানোর কাজ কেউ জানতেন না। সব মিলিয়ে ১৯১৮ সালে শুরু হয় ছাপাখানার কাজ। উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, এই ছাপাখানার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আর এক উজ্জ্বল বঙ্গসন্তান সুকুমার রায়ের নাম।
অনেকেই জানেন না, স্বনামধন্য কবি, শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায় বাংলা মুদ্রণশিল্পের ক্ষেত্রেও একজন পথিকৃৎ ছিলেন। মুদ্রণবিদ্যায় বিদেশি ডিগ্রি ছিল তাঁর। ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তিনি ১৯১৮ সালে কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন আসেন। সুকুমার বেশ কিছুদিন শান্তিনিকেতনে থেকে নিমাই ও বিষ্ণু নামে দুই ছাত্রকে কম্পোজ ও ছাপার যাবতীয় খুঁটিনাটি শেখান। এই দুই ছাত্রের হাত থেকেই ১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয় বিদ্যালয়ের প্রথম নিজস্ব মুদ্রিত বই ‘গীতপঞ্চাশিকা’। এই বইটি রবীন্দ্রনাথের পঞ্চাশটি গানের সঙ্গে দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের করা স্বরলিপির সংকলন। প্রকাশনার নাম দেওয়া হয় ‘শান্তিনিকেতন প্রেস’। এরপর বেরোয় ‘অনুবাদচর্চা’ এবং ‘Selected Passage for Translation from English to Bengali’ নামে একটি ইংরেজি বই। ১৯২০ সালে আরও একটি বড় ছাপার মেশিন আসে। তারপর থেকে বিদ্যালয়ের কাজের পাশাপাশি বাইরে থেকেও ছাপার কাজের অর্ডার নেওয়া হতে থাকে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর অনেক বড় আকারে প্রেসের কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ সময় ধরে বহুসংখ্যক উৎকৃষ্ট বই প্রকাশ করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে এই প্রেস। ২০১৮ সালের শেষ দিকেই এই প্রেসে ছাপার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কর্মীদের অন্যান্য বিভাগে বদলি করা হয়। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেসগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ফলে কাগজে-কলমে বন্ধ হয়ে যায় শতাব্দীপ্রাচীন এই ছাপাখানা। নতুন কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের নিজে হাতে তৈরি এবং সুকুমার রায়, নন্দলাল বসু, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ বহু মনীষীর স্মৃতিবিজড়িত এই প্রেসের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে।
................................
#সিলি পয়েন্ট #web portal #webzine #Rabindranath Thakur #Shantiniketan #Press #রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর #শান্তিনিকেতন প্রেস #শান্তিনিকেতন #সুকুমার রায় #গীতপঞ্চাশিকা #টিম সিলি পয়েন্ট