ফেরার ট্রেন
মানুষ যা সর্বস্ব দিয়ে চায় তা না পেলে ভীষণ একা হয়ে ওঠে।
ঝড়ের মধ্যে ছুটে চলেছে ট্রেন।
ঝড় বললে ভুল হবে। এলোমেলো হাওয়া। অঝোরে বৃষ্টি। ইতিউতি পিছলে যাওয়া প্ল্যাটফর্মের এলইডি আলোর দুপাশ ঘেরা অন্ধকার। ঘন কালো সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে রাত-সফর। জানলা বন্ধ, না হলে বৃষ্টি ছাঁটে কামরা ভেসে যাবে। উপরের বাঙ্কে চেক-লাল গামছা শুকোচ্ছে আঠারো-ঊনিশের ছেলে। ছাতা ভুলে এসেছিল ঘরে। অথবা সামর্থ্যে জোটেনি। এতক্ষণের গভীর পর্যবেক্ষনের প্রত্যুত্তরে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
কিছু লোক উঠল। এই দুর্যোগে যাদের বাড়ি যেতেই হবে (কিছু স্নেহ,মায়া সশঙ্ক উদ্বেগে তাদের জন্যে রাতের খাবার সাজিয়ে জেগে আছে) অথবা যাদের কোথাও থাকার জায়গা নেই। নিজের বাড়িটুকু ছাড়া। আক্ষরিক অর্থেই এরা একঘরে।
কামরা-শেষের লম্বা সিটে টানটান হয়ে ঘুমোচ্ছে বাজাড়ু। কোলে মার্কেটের সওদা কিনে ভোর ভোর ফেরার সুযোগ হবে কি? সে জানে না। মুখের উপর গামছা আড়াল দিয়ে শুয়ে পড়েছে তাড়াতাড়ি। বাকিদের সঙ্গে গতকালের লাভ-লোকসানের হিসেব নেই। আজ সে একা। আগামীকাল লাভ হোক বা লোকসান, সবটুকু তার।
হঠাৎ গোলমালের শব্দ ছিটকে আসে, এলোমেলো পায়ে আবগারি রাজত্বে লড়ে যাচ্ছে দুই মক্কেল। বিষয় বোঝার সুযোগ না দিয়ে ছেড়ে আসে ট্রেন। আবার অন্ধকার সুড়ঙ্গ। বোজা চোখ। কাঁধে আলতো টোকায় চোখ খুলে সহকর্মীর হাসিমুখ। অবসর ভালো কিন্তু পড়ে পাওয়া অবসর অবসন্ন করে তোলে কি না, সেই তর্কে কয়েকটা স্টেশন পেরোয়। খিলে খিলে হাসির অভদ্রতায় কিছু ভুরু কুঁচকে ওঠে। সহকর্মীর স্টেশন এলে সে নেমে যায়। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে বিষণ্ণতা।
মেট্রোর ডিসপ্লে বোর্ডে লাস্ট মেট্রোর সময় দৌড়োতে বলে। হাঁফাতে হাঁফাতে মেট্রোয় ঢুকে বুঝতে পারি, আসলে মুঠো ভরা ছিল না কখনই।
কোনদিনও।
পোস্টার : অর্পণ দাস
#মুক্তগদ্য #রুহ আমন