শোধ
- টাকাটা এবার লাগবে বিশুদা। আর কত ঝোলাবে? সাধুদা সমানে তাড়া মারছে। সামনে ভোট। খরচাপাতি কম?
- পঞ্চাশ হাজার টাকার জন্য তোমাদের ভোট আটকে যাবে? কারখানাটা খুলতে দাও, দিয়ে দেব। বুঝতেই তো পারছ অবস্থাটা। একটু টাইম দাও। কারখানাটা খুলুক।
- তোমাদের কারখানা মায়ের ভোগে। আর খুলেছে।
- খুলবে। বিজয়দা বলল খুলবে। মালিকের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে বলল। আর কটা মাস সময় দাও।
- কী বলি বলো তো তোমায়? এরপর সাধুদা ছেলেপিলে পাঠালে আমি কিন্তু জানি না।
- আমাকে মারলেও কি কিছু পাবে? সাধুকে একটু বোঝাও। তুমি বললে শুনবে। তোমার বউদির একশো দিনের কাজের টাকা আটকে আছে কতদিন। গলার একটা হার ভাঙিয়ে মাস-দুই চালালাম। আর দু-দিন পর ভিক্ষে করতে হবে। কোত্থেকে দেব বলো। কারখানাটা খোলা অবধি একটু মাপ করতে বলো।
- পঞ্চাশ তুমি ক-মাসে শোধ দিতে পারবে? তুমি নিজেই বলো। এখন যদি কারখানা খোলেও, কত মাইনে দেবে? আদ্ধেক টাকায় কাজ করাবে। তিন বছরেও তুমি পারবে না পঞ্চাশ শোধ করতে।
- অল্প অল্প করে দিয়ে দেব। পাঁচ-দশ করে যখন যেমন পারব। সাধুর টাকা মেরে কি এখানে বাস করতে পারব? দিয়ে দেব। কটা দিন একটু সময় দিতে বলো। বিষ খাবারও পয়সা নেই। থাকলে বিষ খেয়ে নিতাম।
- আচ্ছা ঠিক আছে, কেঁদো না। অন্য কিছু একটা উপায় করতে হবে তাহলে। ভাবছি।
- হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি চাইলেই হবে। তুমি আমায় বাঁচাও, পলাশ।
- দ্যাখো, আমি বললে সাধুদা আমার কথা ফেলবে না।
- জানি তো। তুমি বললেই হবে, আমি জানি। সাধুর সঙ্গে একটু কথা বলো পলাশ। তুমি তো আমার ছোটো ভাইয়ের মতো, বলো?
- ঠিক আছে, ঠিক আছে, হাতটা ছাড়ো। আমার কথা শোনো। আবদার করলেই তো হল না। একটা তো ইয়ে আছে। ভোটের সময় এই টাকাটা কম না। ভাবছি কী করা যায়।
- তুমি বললেই হবে পলাশ। তুমি বাঁচাও ভাই আমায়। সারাজীবন তোমার কাছে…।
- আচ্ছা, তোমার মেয়ে তো এবার মাধ্যমিক দেবে, না?
- এবার না। পরের বার। কেন?
- বেশ বড়সড় হয়ে গেছে কিন্তু। দেখলে অনেকটা বড় লাগে। ঠিক আছে, মাঝে মাঝে যাব তোমাদের বাড়ি।
- আমাদের বাড়ি? কেন?
- কেন? যেতে পারি না?
- না, মানে...।
- দ্যাখো বিশুদা, মাগনায় তো কিছু হয় না এ দুনিয়ায়। হয় কি?
- আমি কালকেই যদি দশ-পনেরো দিয়ে দিই? পুরোটা পারব না। দশ-পনেরো হয়ে যাবে।
- সে তো আবার কারও থেকে ধার করবে। এদিকের মাটি তুলে ওদিকে ফেলে লাভ আছে কিছু? তার চেয়ে আমার কথাটা শোনো। টাকাটা ফেরত দিতে হবে না। আমি কথা বলে নেব সাধুদার সঙ্গে।
- না না। টাকা ফেরত দেব। ধার নিয়েছি ফেরত কেন দেব না?
- ঘাবড়াচ্ছ কেন? আমি কি বাঘ-ভাল্লুক? তোমার মেয়ে তো চেনে আমায়। যাব। একটু বসব। চা-টা খাব, গল্প করব একটু - এই তো ব্যাপার। তুমি বাড়ি থাকো না। বউদিকেও একশো দিনের কাজে প্রায়ই বাইরে-বাইরে থাকতে হয়। তো আমি একটু টেক কেয়ার করলে প্রবলেমটা কোথায়?
- পলাশ, আমার মেয়েটা ছোটো।
- আরে তুমি কাঁদছ কেন? আজব ব্যাপার মাইরি! কী ভাবো বলো তো আমায়? অ্যাঁ? আমি কি বাঘ-ভাল্লুক, নাকি রাক্ষস-খোক্কস? তোমার মেয়েকে খেয়ে ফেলব? আচ্ছা শোনো, হামিরপুরের ওইদিকে নতুন ভেড়ি কাটছে শুনেছ তো? তোমায় একটা মাটির পারমিট করিয়ে দিচ্ছি। খুশি? আরে ছাতার মাথা, এখনও কাঁদে।
- মেয়েটা বড্ড ছোটো পলাশ।
- ঠিক আছে। তাহলে আজ বিকেলের মধ্যে পঞ্চাশ হাজার দিয়ে দাও।
- ভগবানকে একটু ভয় কর।
- ভগবান অনেক দূরে থাকে, বিশুদা। এতদূর ওনার হাত পৌঁছবে না। এখানে সাধুদাই ভগবান। দ্যাখো, তোমার ভালোর জন্যই বলছি, এই নিয়ে আর বাওয়াল কোরো না। তোমাদের তো থাকতে হবে এখানে, নাকি? চোখটা মোছো, চোখটা মোছো। আমার কথাটা শোনো। তোমাদের যে-কোনও প্রবলেম, এবার থেকে আমার প্রবলেম। আমি আজকে থেকে তোমাদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড। তোমাদের প্রবলেম এখন থেকে আমার প্রবলেম, বুঝেছ? টেনশন করার কোনও দরকার নেই। চিল মারো। কালকে হামিরপুর চলো, দাঁড়িয়ে থেকে পারমিট করিয়ে দিচ্ছি।
- মেয়েটার বিয়ে দিতে পারব না পলাশ। আমি তোমার পায়ে ধরছি।
- আরে বাবা, কেউ জানতে পারলে তবে তো! মানুষ মানুষের বাড়ি যায় না? এতে এত চাপ খাওয়ার কী আছে! আমি বলছি তো, কেউ জানতে পারবে না। প্রমিস। তুমি শুধু বউদি আর মেয়ের সঙ্গে একটু কথা বলে রেখো। ফালতু ঝামেলা চাই না। কেমন? ব্যাস। আর কিচ্ছু তোমায় ভাবতে হবে না। বাকি সব আমার ওপর ছেড়ে দাও। তোমার টাকা আমি ভুলে যাচ্ছি। সাধুদাকে ম্যানেজ করে নেব। মাটির পারমিট হাতেগরম পেয়ে যাচ্ছ কালকেই। প্লাস, তোমাদের সব দায়িত্ব আজ থেকে আমার। আর কোনও কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। ওক্কে? খুশি? এই নাও, এই লজেন্সটা দিও মেয়েকে। বোলো আমি দিয়েছি, কেমন? কী নাম যেন ওর? সুস্মিতা, না?
************************
[এই গল্পের মূল ভাবনা সাম্প্রতিক একটি বাস্তব ঘটনা থেকে নেওয়া। বোলপুর থানা এলাকার ঘটনা। ১২ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে সমস্ত সংবাদমাধ্যমে খবরটি বেরিয়েছিল। গল্পের খাতিরে কিছু কিছু বিষয় পরিবর্তন করা হয়েছে]।
অলংকরণ : অভীক আচার্য
#সিলি পয়েন্ট # গল্প # রোহন রায় #শোধ #web portal #Rohan Roy #silly point