নিবন্ধ

ভাঙা বুকের পাঁজর দিয়া : অতিমারির দিনে থিয়েটার

সৌপ্তিক July 14, 2021 at 12:37 pm নিবন্ধ

হল বন্ধ। ওটিটিতে চিল করার বিকল্প পাকাপোক্ত। সিনেমা আর ওয়েব সিরিজের তালিকা ক্রমবর্ধমান। সিনেমা আর ওয়েবসিরিজের বাজারে থিয়েটার অল্প মানুষ দ‍্যাখে। হোক অল্প, তবুও তো মানুষ। দেশের গণতন্ত্র তো বলে অল্প বলে অধিকারকে পাশ কাটানোর উপায় নেই। কাজেই প্রশ্ন ওঠে। হল বন্ধ। শো বন্ধ।থিয়েটারওয়ালারা করছে কী? বাঁচছে কী উপায়ে? তারাও কি ওটিটির আশ্রয় পেয়েছে? নাকি ওসব অন্য দেশেই হয়, আমাদের দেশে ওসব কষ্টকল্পনা?

থিয়েটারওয়ালারা মরছে। বিশেষত তারা, যাদের কখনও কেউ থিয়েটারওয়ালা বলে মনে করেনি। যে লোকটা সেট বানায়, ভাড়া দেয়, কিংবা যার আলোর ব্যবসা, বা সেই ব্যবসায়ীর জিম্মায় যে ছেলেটা কাজ করে, বা যারা দূরদূরান্ত থেকে এসে কলকাতার গ্রিনরুমে তুলি দিয়ে চোখ আঁকে- তারা। ২০২০ আর ২০২১-এ হল খোলা থেকেছে অল্প দিনের জন্য। তারই মাঝে কিছু উৎসব, কিছু শো, কিছু অর্থ বিনিময়, কিছু পেমেন্ট মিটিয়ে দেওয়া আর বাকিটা ধারবাকি।


হল খোলার কোনও সম্ভাব্য দিন আমরা জানি না। সরকার যথাযথ ব্যবস্থা করতে পারেনি মহামারি আটকানোর, আর তার জন্য ভুগতে হচ্ছে সকলকে। থিয়েটার প্রশ্ন তোলে। তাই তাকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। ভোটের বাজারে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে যারা নাটক করে তাদের কাঠি করা, ক্ষমতার আশু কর্তব্য। এই তো লন্ডনে অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবার থিয়েটার করার জন্য কী জেদটাই না করে বসলেন। বিগত পঁচিশে জুন 'Cinderella' মিউজিকাল প্রোডাকশন হওয়ার কথা ছিল। একুশে জুন অব্দি লন্ডন লকডাউনে ছিল। কিন্তু তারপর হঠাৎ সিদ্ধান্ত হয় লকডাউন বাড়বে। ফলত বাতিল করতে হবে এই অভিনয়। ওয়েবার কোর্টে গেলেন। তাঁর যুক্তি, যদি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল হতে পারে, যদি উইম্বলডন হতে পারে, যদি ইউরো কাপও হতে পারে দর্শক নিয়ে, তবে থিয়েটার কেন নয়? কোর্টে যাওয়ায় পঁচিশে জুন অভিনয় হল না বটে, তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে থিয়েটার হল খুলল। 

আরও পড়ুন : মহামারি-উত্তর বাংলা থিয়েটার : সমস্যা ও সম্ভাবনা / অনুরণ বসুরায়

কথিত আছে বঙ্গের বিশিষ্ট নাট্যজনেরা গ্রান্টের তাগিদে বছরে একবার দিল্লিতে মাথা ঠুকতে যান। আধুনিক বাংলা নাট্যে 'ভারত কেশরী শ্যামাপ্রসাদ' নাট্য অভিনীত হয়। এঁদের থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় কি? নাক সিঁটকোবেন না। বাংলা থিয়েটার এখনও বেঁচে আছে। প্রচারের আলোর বাইরে অনেক কিছু অন্ধকারে মুখ ঢেকে থাকে। সাতাশে জুন রোববার বনগাঁ স্টেশনে একটি থিয়েটার হয়। স্টেশনের সিঁড়িতে বসেন দর্শকেরা। সামনে প্ল্যাটফর্মের ছোট্ট অংশে অভিনীত হয় আমতা পরিচয়ের নাট্য 'এলাদিদি'। বনগাঁর থিয়েটার ফোরাম আয়োজিত  'থিয়েটারের হেঁশেল'-এ যেন বাংলা থিয়েটার তার না-মুড়ানো নটে গাছকে আবার বাড়তে দ‍্যাখে। হল না খুললেও থিয়েটারকে থিয়েটারের মানুষকে বাঁচানোর অদম্য জেদের লড়াই।


যদি এসব শুনে ভাবেন, ধুস! কনজিউমারিজমের ভরা বাজারে বনগাঁয়ে শেয়াল রাজা হয়ে লাভ কী? হত একটা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থিয়েটারের, তবে বুঝতাম। বাংলা থিয়েটারের ওটিটি প্ল্যাটফর্মও কিন্তু মজুত আছে। অনেকেই জানেন না। থিয়েপ্লেক্স। গুগল প্লে স্টোরে সার্চ করলে পাবেন। তাতে মজুত আছে কালজয়ী সব বাংলা নাটক। অনেকেই বলবেন, 'অনলাইনে আবার থিয়েটার হয়!' এ অস্বস্তি অনস্বীকার্য।  তবে এ কথাও মানার দরকার আছে ওটিটিতে থিয়েটার সংরক্ষণ করা যায়। সেই কাজই খুব সফলভাবে করেছেন থিয়েপ্লেক্সের নির্মাতারা। মাঠে ময়দানে কিংবা মোবাইলের হার্ড ডিস্কে থিয়েটারের দামালদের টিকে থাকার লড়াইটা কিন্তু লকডাউন থামিয়ে দিতে পারছে না। কেউ না কেউ বলেই উঠছে, 'থিয়েটারের জন্য ধর্মাবতার'।


........................ 

[ কভার ছবির শিল্পী: Jean Beraud ]

#বাংলা #নিবন্ধ #সৌপ্তিক #থিয়েটার # থিয়েটারের হেঁশেল #এলাদিদি # ওটিটি #অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবার #থিয়েপ্লেক্স

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

88

Unique Visitors

181496