ফিচার

টমাস হার্ডি, রাজস্থান ও এক আশাভঙ্গের কাহিনি

বিপ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য্য June 2, 2021 at 4:09 am ফিচার

হার্ডি এবং ভারতবর্ষ - এই দুটি শব্দ বোধহয় চট করে একসঙ্গে উচ্চারিত হতে দেখা যায় না। অথচ না হবার কোনও কারণ নেই। ভারতবর্ষের প্রায় প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের পাঠক্রমেই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে নিয়ম করে হার্ডি হাজির থাকবেনই। অবশ্য টমাস হার্ডির জীবনে বা সাহিত্যে ভারতবর্ষের সেভাবে উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে অন্তত একটি ছবির নাম করা যায়, যা ভারতবর্ষের পটভূমিকায় তাঁর উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। ছবিটির নাম ‘তৃষ্ণা’ (২০১২)। পরিচালক মাইকেল উইন্টারবটম।

উইন্টারবটম ২০০৩ সালে একটি তথ্যচিত্রের জন্য ছবি তুলতে রাজস্থানের ওসিয়ান প্রদেশে আসেন। তখনই তাঁর মাথায় আসে এক নতুন খেয়াল- টমাস হার্ডির ‘টেস অফ দ্য ডার্বারভিলস’ উপন্যাসটিকে রাজস্থানের মরুভূমিতে ফুটিয়ে তুললে কেমন হয়? বিষয় হিসেবে হার্ডি উইন্টারবটমের কাছে নতুন নয়, এর আগে তিনি তাঁর ‘জুড দি অবস্কিওর’ এবং ‘দ্য মেয়র অফ কাস্টারব্রিজ’ উপন্যাস নিয়ে কাজ করে ফেলেছেন। ‘তৃষ্ণা’ ছবির গল্প টেসের মতই এক গ্রাম্য মেয়েকে নিয়ে, ভাগ্যের ফেরে যাকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। এখানে মূল গল্পের এঞ্জেল ক্লেয়ার ও অ্যালেক ডার্বারভিলের জায়গা নিয়েছে একটিই পুরুষ চরিত্র - ব্রিটিশ ব্যবসায়ী জয় সিংহ। বাবার হোটেলের কারবার সামলাতে রাজস্থানে আসে জয়। একটি হোটেলে তৃষ্ণাকে নাচ করতে দেখে জয় তার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তাকে নিজের হোটেলে কাজের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে রাজি না হলেও মূল গল্পে ঘোড়ার গাড়ি অকেজো হয়ে যাবার মতোই হঠাৎ তৃষ্ণার বাবার জিপগাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করলে পরিবার চালানোর দায়ে তৃষ্ণা জয়ের হোটেলে কাজ শুরু করে। তৃষ্ণার প্রতি জয়ের পক্ষপাতিত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে, অবশেষে একদিন উত্যক্তকারী দুই যুবকের হাত থেকে তৃষ্ণাকে বাঁচানোর অছিলায় তাকে ধর্ষণ করে জয়। মর্মাহত তৃষ্ণা বাড়ি ফিরে আসে এবং চুপিচুপি পেটের বাচ্চা নষ্ট করবার পর রোজগারের দায়ে তার কাকার বাড়ি কাজ করতে যায়। জয় তৃষ্ণাকে খুঁজে বের করে, এবং তৃষ্ণাকে রাজি করায় মুম্বইয়ে তার সঙ্গে সহবাস করতে। বাবার মৃত্যুর পর কিছুটা সংবেদনশীল হয়ে পড়লেও তৃষ্ণাকে ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে জয়। রাজস্থানে ফিরে আসবার পর অত্যাচারের মাত্রা চরমে ওঠে। তৃষ্ণাকে নিয়মিত নিজের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে জয়। অবশেষে একদিন সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায় তৃষ্ণার, রান্নাঘরের ছুরি দিয়ে জয়কে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় সে। জয়কে খুন করে নিজের বাড়ি ফিরে এলেও তীব্র আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকে তৃষ্ণা। অবশেষে একদিন এক নির্জন স্থানে গিয়ে সেই ছুরি দিয়েই নিজেকে শেষ করে দেয় সে। টেস ডার্বারভিল উপন্যাসের শেষে আইনের হাতে আত্মসমর্পণ করলেও উইন্টারবটমের নায়িকা নিজেই তার জীবনের অন্তিম ভবিতব্য নির্ধারণ করে।

তৃষ্ণার ভূমিকায় ফ্রিডা পিন্টো ছাড়াও এ ছবিতে দেখা গিয়েছে অনুরাগ কশ্যপ, কল্কি কোয়েচলিন, হুমা কুরেশি, ভিকি কৌশলের মত অভিনেতাদের। সঙ্গীত পরিচালনায় রয়েছেন অমিত ত্রিবেদী। হঠাৎ টমাস হার্ডির গল্প একবিংশ শতাব্দীর রাজস্থানে এনে ফেললেন কেন? উত্তরে উইন্টারবটম জানালেন, হার্ডির গল্প একটা পরিবর্তনশীল ইংরেজ সমাজের কথা বলে। এমন একটা সময় যখন ধনতন্ত্র ও যন্ত্রসভ্যতার দাপটে দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের গ্রামগুলোর চেনা জীবনযাত্রা হারিয়ে যেতে বসেছে। ভারতবর্ষেও বর্তমানে রয়েছে এমন অনেক গ্রাম, যেখানে সবেমাত্র লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া - বদলে যেতে শুরু করেছে রোজনামচার খতিয়ান। ঊনবিংশ শতাব্দীর গ্রাম্য তরুণী টেস ডার্বারভিলের সমাজের চাপে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়ার গল্প তাই হালফিলের রাজস্থানি ঘরানায় এসে দিব্যি মানিয়ে যায়!  




[কভার ছবি: আলোচ্য ছবিটি থেকে নেওয়া একটি স্থিরচিত্র]

#বাংলা #ফিচার #বিপ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য্য #টমাস হার্ডি #তৃষ্ণা #ফ্রিডা পিন্টো #অনুরাগ কাশ্যপ #কল্কি কোয়েচলিন #হুমা কুরেশি #ভিকি কৌশল #মাইকেল উইন্টারবটম #টেস অফ দ্য ডার্বারভিলস

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

19

Unique Visitors

216200