অনলাইন ক্লাসের গল্প: ইচ্ছে আর উপায়
২০২০-র মার্চ, মানে প্যান্ডেমিকের শুরুর থেকে, আমি কোথায় থাকি জিজ্ঞেস করলে আমি বলি কলকাতা আর টরন্টোর মাঝামাঝি। যদিও (কী ভাগ্যিস) সেই শুরুতে বর্ডার বন্ধ হওয়ার ঠিক আগে কলকাতায় পালিয়ে এসেছিলাম। এখানে অবশ্য আমায় সেই লোমহর্ষক গল্প বলতে বলেনি। তারপর বাবা মা ভাইয়ের সঙ্গে এতদিন থেকে এই সবে টরন্টো ফিরেছি।
এই মাঝখানের কলকাতা থাকাটাও জায়গার হিসেবে। সময়ের হিসেবে, এবং মানসিক ভাবেও সেই সময়টা আমি কলকাতা আর টরন্টোর মাঝামাঝি ছিলাম। কারণ গোটা সময়টাই টরন্টোর সময় ধরে ক্লাস করা এবং ক্লাস নেওয়া দুটোই চলছিল। শুধু আমি নই। সারা পৃথিবীর নানান দেশে থেকে আসা আমাদের ইউনিভার্সিটির স্নাতক/স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রীরা, যারা বাড়ি ফিরে গেছিল, এবং আবার ইউনিভার্সিটিতে ফিরতে পারেনি (বা আমার মত, ফিরতে চায়ওনি), তারা সবাই গত প্রায় দু-বছর নিজের নিজের জায়গা থেকে অনলাইন ক্লাস করেছে। টরন্টোর লোকেরা টরন্টো থেকে অনলাইন ক্লাস করেছে। আমাদের দেশের স্কুল কলেজের ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস ছাত্রছাত্রীদের যেভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করে, এক্ষেত্রে সেভাবে করেনি। ওই দেশে স্নাতকস্তরে যারা টাকা দিয়ে পড়ে, তারা বেশিরভাগ প্রথম বিশ্বের নাগরিক হিসেবে নানান সুযোগ-সুবিধা পায়। আর আমাদের মত গরিব দেশের লোক যারা ওই দেশে পড়াশুনা করে, তাদের নিজেদের (প্রচুর) পয়সা আছে। তাই তাদের নিজেদের বাড়িতে ইন্টারনেট অ্যাকসেস আছে ধরে নেওয়া যায়।
তবুও এদেশ থেকে ওই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার কিছু সমস্যা তো ছিলই। সবার একরকম ইন্টারনেট স্পিড না থাকা -- ভারত, চিনের মত পূর্বপ্রান্তের লোকেদের সারা রাত জেগে কাজ করা -- তারপর, লকডাউন যখন মাঝে মাঝে খুলেছে, তখন টরন্টোর লোকেরা লাইব্রেরি থেকে বই তুলতে পেরেছে, অন্যান্য জায়গায় সেই সুযোগ না থাকা, এইসব তো ছিলই। তবে যে দেশে দু-বছর ধরে লক্ষ লক্ষ বাচ্চার প্রাথমিক শিক্ষা বন্ধ থেকেছে, সে দেশের মানুষ হিসেবে আমার এগুলো বিশেষ চোখে লাগেনি।
আমার মতো যারা স্কলারশিপের ভরসায় স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ছে, এবং টরোন্টোর হিসেবে রাম-গরিব, ইউনিভার্সিটি কীরকমভাবে তাদের সাহায্য করেছে, তা দেখে শুরুর দিকে আমি বেশ অবাক হয়েছি। আমরা যারা ক্লাস করার পাশাপাশি ‘টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে খানিক আয় করি, তাদের বাড়িতে যে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার মত ব্যবস্থা না থাকতেই পারে সেটা ধরে নিয়ে চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার-হেডফোন ইত্যাদি কেনার ফান্ড বরাদ্দ হয়েছিল। সর্বদাই কেউ না কেউ জিজ্ঞেস করছে, কী অসুবিধা হচ্ছে বলো বাছা, এবং কোনও সমাধান না করতে পারলেও মন দিয়ে শুনছে। সমস্ত ডেডলাইনের চাপ যথাসম্ভব লাঘব করার চেষ্টা করছেন প্রোফেসররা (দু-চারজন ইয়ে লোক বাদে), কারণ সেইটাই ইউনিভার্সিটির নিয়ম। আমরাও নিয়মমতো স্নাতকস্তরের যাদের পড়ানোর দায়িত্বে থাকি তাদের ইমেল করে করে খবর নিচ্ছি কী সমস্যা। আমার হয়ত একটা প্রবন্ধ জমা দেওয়ার কথা -- তা আমার সুপারভাইজার আমি না চাইতেই বলছেন, যে তোমার একটু দেরি হলে আমি কিছু মনে করব না, এক্সট্রা সময় লাগলে নির্দ্বিধায় বল, ইত্যাদি। ইউনিভার্সিটির নানান স্তরে ইমারজেন্সি গ্রান্টের ব্যবস্থা হয়েছে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য। আমি ডিপার্টমেন্টের ইউনিউয়ানে যাই-টাই, সেইখানকার সামান্য রেস্ত দিয়ে আমরা ‘গ্রোসারি ফান্ড’ করেছি। যতদিন ওই খাতে বরাদ্দ টাকা ছিল, ততদিন ছাত্রছাত্রীরা অ্যাপ্লাই করলেই পেয়েছে। তোমার কী দরকার, কেন দরকার, এইসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয় না। কারণ ইউনিয়নে যা টাকা থাকে তা ছাত্রদেরই টাকা, যার যার সততার দায়িত্ব তার নিজের, ইউনিয়ন কৈফিয়ৎ চাইতে পারে না।
ইউনিয়ন আবার ইউনিভার্সিটিকে চাপে রাখে ভীষণভাবে। আমি এমএ ক্লাসে ইউনিভার্সিটির জেস্টর অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড চুরি করা এবং কারচুপি করে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে অ্যাকাউন্ট-পিছু তিনটে করে আর্টিকেল ফ্রিতে নামানো ইত্যাদিতে অভ্যস্ত। আমি ইউনিভার্সিটি চেয়ার-টেবিল কেনার টাকা দেবে শুনে আপ্লুত হয়ে পরি। ইউনিয়ান কিন্তু এ-জাতীয় জেসচারে বিশ্বাস করে না। বারবার মনে করায় যে ইউনিভার্সিটি প্রাথমিকভাবে একটি ব্যবসায়িক সংস্থা, এবং সক্কলকে পাওনাগণ্ডা বুঝে নিতে উৎসাহ দেয়।
খানিক চোখ সয়ে গেলে আমিও বুঝতে পারি যে ফাঁক আছে. জেস্টর পাসওয়ার্ড ধরিয়ে দিয়েছে বলে মোটেই কিছু সব পেয়েছির দেশ নয়। যেমন, ইউনিভার্সিটি খোলা থাকলে নানান মিটিং উপলক্ষে আমাদের সপ্তাহে একটা মিল অন্তত ফাউ হয়ে যায়। অনলাইন হয়ে সেই ফাউ মিলটি ডকে উঠেছে। অথচ ইউনিয়ন থেকে আমরা যে শুক্রবার করে একসাথে বসে লেখাপড়া করার জন্য রাইটিং গ্রুপের ব্যবস্থা করে থাকি, সেখানের স্ন্যাক্সের টাকা বেঁচে যাচ্ছে বলে আমরা অনলাইন রাইটিং গ্রুপে যে আসছে তাকেই কফি খাওয়ার পয়সা দিচ্ছি। ওরা দিচ্ছে না কেন? মিটিং-মিলের বেঁচে যাওয়া টাকা কোথায় যাচ্ছে? ইউনিয়নের কল্যাণে এসব কূট প্রশ্ন এখন আমার মাথাতেও আসে।
এইসব শুধু টাকাপয়সা নিয়মকানুনের কথা না। ছাত্রের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পর্কের কথা, নাগরিকদের সঙ্গে শাসনব্যবস্থার সম্পর্কের কথা। যা একেবারে গোড়ার কথা। এটা না বললে পরিস্থিতিটা ঠিক বোঝানো যায় না, আর ওই পরিস্থিতিই অনেকটা ঠিক করে দেয় কীভাবে কীরকম পড়াশোনা হবে ক্লাসে-টাসে। এইবার ক্লাসের কথা বলি।
শুরুর দিকে সকলেই ঘেঁটে গেছিল। অনলাইন ক্লাস, তাও আবার নাটকের ডিপার্টমেন্টে! তারপর আস্তে আস্তে অভ্যেস হয়ে গেল। অসুবিধা তো বটেই। এখন আমি ডিরেকশন আর প্লেরাইটিং সংক্রান্ত দুটো ক্লাসে পড়াতে সাহায্য করি। প্লেরাইটিং যে ভদ্রমহিলা পড়ান, তিনি ডিভাইসিং-এর কাজ করেন। অর্থাৎ, বসে বসে একা একা সাহিত্য রচনা করা নয়, সকলে মিলে, শূন্য থেকে শুরু করে, শারীরিক-মানসিক কসরতের মাধ্যমে এক জায়গায় পৌঁছনো। যেখানে পরস্পরকে ছোঁয়া যায় না, চোখে চোখ রাখা যায় না, সেখানে সে সব কাজ কী করে হবে?
হয় না, আলাদা আলাদা ঘরে নিজের নিজের কম্পিউটারের সামনে বসে যেটুকু করা সম্ভব, সেটুকু হয়। ডিরেকশনের ক্লাসেও তাই। এই কোর্সটার প্রোফেসর এই ধরে নিয়ে এগোচ্ছেন যে অনলাইন পারফরমেন্স নয়, দর্শকের সঙ্গে এক বাতাসে নিশ্বাস নিয়ে যেভাবে নাটক চিরকাল ধরে হয়েছে, সেইরকম নাটকের ডিরেকশন দিতে শেখানোই এই কোর্সের উদ্দেশ্য। অনলাইনে সেটার অনেকগুলো দিক সম্পর্কে হাতেকলমে কাজ শেখা অসম্ভব। সেইটা মেনে নিয়ে ক্লাস হচ্ছে। একটা করে নাটক পড়ে ছাত্রছাত্রীরা বলছে তারা কীভাবে সেটা করতে চায় ইত্যাদি। আমি স্টেজে একটা গাছ দেখাতে চাই বলা, আর সত্যি স্টেজে একটা গাছ দেখানোর মধ্যে যে বিশাল দূরত্ব, এইটা বারবার ছাত্রছাত্রীদের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এইটা একরকম পথ। মুখোমুখি বসে যেভাবে শেখা যায়, তার একটা ভগ্নাংশ অনলাইনে হচ্ছে।
অন্যদিকে, এইভাবেও কেউ কেউ ভাবছেন, যে মুখোমুখি বসে ক্লাস করা আর অনলাইন ক্লাস করার কোনও তুলনা হয় না। অনলাইন ক্লাস মুখোমুখি ক্লাসের একটা অসম্পূর্ণ টুকরো নয়, পুরোপুরি আলাদা একটা ব্যাপার, সেখানকার পেডাগজি (পড়ানোর প্রণালী) এবং পড়ানোর বিষয়বস্তু মুখোমুখি ক্লাসের ছায়ামাত্র হলে চলবে না। অনলাইন ক্লাস তো শুধুমাত্র অসুবিধাই তৈরি করছে না, নানান রাস্তা খুলেও দিচ্ছে। যেমন ধরা যাক, অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে দেশবিদেশের জ্ঞানীগুণী মানুষদের গেস্ট স্পিকার হিসেবে ক্লাসে আমন্ত্রণ জানানোটা কত বেশি সহজ! সুতরাং অনলাইন ক্লাসের নিজস্ব সুবিধা অসুবিধা অনুযায়ী নতুন সিলেবাস, বিশেষত, নতুন পেডাগজি তৈরি করতে হবে। এটা আরেকটা পথের শুরু।
গত বছর একটা ক্লাস করছিলাম, যেখানে প্রোফেসর এইরকমভাবে এগোচ্ছিলেন। যেটা মুখোমুখি হলে তিন ঘন্টার ক্লাস হত, সেটাকে কমিয়ে করেছিলেন দেড়ঘন্টা। ক্লাস শুরু হত মাইন্ডফুল মেডিটেশান দিয়ে, তারপর কে কেমন আছি, একটু কথাবার্তা। একটা ডিস্কাশান বোর্ড থাকত যেখানে সারা সপ্তাহ আলোচনা চলত। যে যার সময় মতো বোর্ডে মতামত লিখে যেত, ক্লাসে যা পড়া হচ্ছে সে ব্যাপারে। ক্লাসে প্রেজেন্টেশন দেওয়া এখানে একটা ব্যাপার। প্রায়ই ছাত্রছাত্রীদের নিজের মতো করে বাকি ক্লাসকে একটা চ্যাপ্টার, বা একটা বিষয় ধরে খানিকটা পড়াতে হয় – নিজে কী বুঝেছি, বুঝিয়ে বলা আরকি। তার বদলে এই ক্লাসে আমরা নিজের মতো মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন তৈরি করে আপলোড করে দিতাম, সেটা যে যার সময়মতো দেখত, তারপর সেটা নিয়ে কিছু কথা হত ক্লাসে, কিছু ডিস্কাশান বোর্ডে। কম্পিউটারের সামনে ক্যামেরা অন করে আর বিশজনের দিকে টানা তাকিয়ে থাকাটা খুব ক্লান্তিকর। আবার আমরা যে সকলে মিলে একটা ক্লাস, এই অনুভুতিটা তৈরি করার জন্য ওই একসাথে আসাটা জরুরি। সেইটা মাথায় রেখে এই ব্যবস্থা।
এই দ্বিতীয় যে পথটার কথা বললাম, সময় সুযোগ সমস্ত থাকলেও এটা সব ক্লাসের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। এই প্রোফেসর ক্লাসের সিলেবাসটা অনেকটা বদলে নিয়েছিলেন সেটাকে অনলাইন ক্লাসের উপযোগী করে তোলার জন্য। যেসব বিষয় অনলাইন পড়ানোর একেবারে অনুপযোগী সেগুলো বাদ রেখেছিলেন। স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রীদের জন্য অপশনাল ক্লাসে সিলেবাস বদলানো সহজতর। তোমার সিলেবাস পছন্দ না হলে তুমি অন্য ক্লাস করো! অন্যদিকে, নাটকের ডিরেকশনের প্রাথমিক স্তরের ক্লাসে আমরা প্যান্ডেমিকের দুবছর সিলেবাস সম্পূর্ণ বদলে দিয়ে অনলাইন পারফর্মেন্সের ডিরেকশান দেওয়া শেখাব, এটা অনেক বড়ো, বিতর্কযোগ্য সিদ্ধান্ত, এবং শিক্ষকের একার নয়, প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত। সুতরাং এতটা স্পষ্টভাবে দ্বিতীয় পন্থা অবলম্বন না করলেও, অনেকেই ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে এই কথাটুকু মাথায় রেখে চলছিলেন যে অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম রাখতে হবে, পুরনো নিয়মে চলবে না। ক্লাস শুরুর আগে যে-যার জায়গায় দাঁড়িয়ে একটু হাত পা নেড়ে ওয়ার্ম-আপ করে নেওয়া, পরস্পরের খবরাখবর নেওয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুখোমুখি ক্লাসে পৌঁছনোর জন্য বাস থেকে নেমে দৌড়, তাড়াতাড়ি এলে করিডোরে দাঁড়িয়ে গল্প, ক্লাস শুরু হওয়ার আগের হইচই, এইসবের বদলে কিছু তো একটা থাকতে হবে। অফিশিয়ালি এইসব চেষ্টা চলছিল, এবং চোরাপথেও চলছিল। ক্লাস করতে করতে চোখাচোখি, ফিসফিসানির বদলে হোয়টস্যাপ বা ওরকম কিছুতে কথাবার্তা!
অনলাইন ক্লাসে ভিডিও অন রাখা হবে, না, হবে না, এইটা আরেকটা বিতর্কের জায়গা। সত্যি, পড়ানোর সময় ভিডিও অফ করে রাখলে খুব অসুবিধা হয়। কারো মুখ দেখা যাচ্ছে না, কোন শব্দ নেই – শিক্ষক তো লাইভ পারফর্মার, লাইভ অডিয়েন্সের অস্তিত্ব টের না পেলে পারফর্ম করবেন কী করে? স্নাতকস্তরের ক্লাসে দেখতাম, বেশিরভাগ সময়, সেই অসুবিধা স্বীকার করেও শিক্ষক বলছেন অসুবিধা হলে ভিডিও বন্ধ করে দাও। সবার বাড়িতে তো একরকম অবস্থা নয়, সকলে ভিডিও খুলে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নাই করতে পারে। আমরাও দেখাদেখি টিউটরিয়ালে তাই বলতাম। লেকচারের পর টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে লেকচারের খুঁটিনাটি আলোচনা করেন, বুঝতে সাহায্য করেন, সেইটাকে এখানে বলে টিউটোরিয়াল। তবে দেখতাম, ভালো ক্লাস/টিউটোরিয়াল হলে অনেকেই ক্যামেরা অন করে রাখত। আলাদা করে বলতে হত না।
আমাদের, পিএইচডি স্টুডেন্টদের ক্লাসে আবার ক্যামেরা খোলা রাখাটাই দস্তুর। কারো বিশেষ অসুবিধা থাকলে, প্রোফেসরকে বলে অফ করতে পারে, তবে কিছু না বলে ক্যামেরা অফ করে দেওয়াটা নেহাত অসভ্যতা। এখানে আবার একটা টাকা-পয়সা-ক্ষমতার কথা এসে পরে। স্নাতকস্তরের ছাত্রছাত্রীরা টাকা দিয়ে পড়ে। আমরা পড়ার জন্য টাকা পাই। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে, ক্রেতা আর কর্মচারীদের জন্য নিয়ম তো আলাদা হবেই।
এই বলে শেষ করি, যে ভালো করে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার জন্য টেকনোলজি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল হওয়াও দরকার। সারাজীবন মুখোমুখি ক্লাস নিয়ে যাদের অভ্যাস, তাদের পক্ষে হঠাৎ অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া, এবং ছাত্রছাত্রীদের অভ্যস্ত হতে সাহায্য করা সহজ কথা না। তার জন্য শুধু সদিচ্ছা থাকলে হয় না, সময় দিতে হয়, শ্রম দিতে হয়। তার চাইতেও বড় কথা, প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য দরকার হয়। শিক্ষকরা মানুষ, তাঁদের বাড়িতে মানুষজন আছে। বুড়োবুড়ি বাচ্চাকাচ্চা অসুস্থ মানুষের দেখাশোনা, আর দশটা ঘরের কাজ ছেড়ে, প্যান্ডেমিক সংক্রান্ত অসুবিধা এবং টেনশন সামলে, এই বিশাল পরিবর্তনের পিছনে সময় দেওয়াটা সামান্য ব্যাপার নয়। আমাদের ইউনিভার্সিটি ইউনিয়ানের তাড়া খেয়ে হলেও, বেশ খানিকটা সাহায্য করেছিল, অন্তত আমাদের মতো সহকারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। আমাদের দেশে যে শিক্ষকরা এইধরনের কাজ পুরোপুরি নিজের দায়িত্বে করছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য ছাড়া, তাঁদের প্রণাম জানাই।
(লেখক সেন্টার ফর ড্রামা থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো-র গবেষক এবং টিচিং অ্যাসিস্টেন্ট)
#কোভিড #লকডাউন #শিক্ষা #অনলাইন ক্লাস #টরন্টো #সম্ভাবনা #ফিচার #সিলি পয়েন্ট #দেবলীনা ত্রিপাঠী