ফিচার

সংরক্ষিত দুশোর বেশি স্তন্যপায়ীর লিঙ্গ : আইসল্যান্ডের আজব সংগ্রহশালায় লিঙ্গ-রাজনীতির পাঠ?

বিবস্বান দত্ত July 1, 2022 at 6:56 am ফিচার

সারা পৃথিবীতে কত আশ্চর্য জিনিসই না রয়েছে। রয়েছে কত অদ্ভুত মিউজিয়াম। এমন সমস্ত জিনিস সেখানে প্রদর্শিত হয়, যে পৃথিবীর বহুদেশ তাদের প্রদর্শনযোগ্যতা নিয়েই হয়ত প্রশ্ন তুলবে। এইরকমই এক আশ্চর্য সংগ্রহশালা রয়েছে আইসল্যান্ডে। নাম The Icelandic Phallological Museum।

এই সংগ্রহশালা Phallology চর্চার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। বৈজ্ঞানিক বা বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রের বাইরেও প্রচুর সাধারণ দর্শক নিছক আগ্রহবশতই ঘুরতে আসেন এই মিউজিয়ামে। কী কী রয়েছে এখানে? কেন আর কীভাবেই বা শুরু হয়েছিল এই আশ্চর্য সংগ্রহশালা? 

এই সংগ্রহশালায় আইসল্যান্ডের দুশটিরও বেশি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর লিঙ্গ সংরক্ষিত রয়েছে। রয়েছে ষোল রকম প্রজাতির তিমির পঞ্চান্নটি লিঙ্গ,পোলার বিয়ারের সংরক্ষিত লিঙ্গ, সাতটি ভিন্ন প্রজাতির সীল এবং ওয়ালরাসের ছত্রিশটি লিঙ্গ। এছাড়া স্থলজ স্তন্যপায়ীর একশ পনেরোটিরও বেশি লিঙ্গের নমুনা এইখানে সংগৃহীত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মানুষের নমুনাও।


এই মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা Sigurður Hjartarson একজন ঐতিহাসিক। ১৯৭৪ সালের এক গ্রীষ্মে তাঁকে এক গ্রামে পাঠানো হয়। সেইখানে পশু চরানোর জন্য চাবুক হিসেবে তিনি একটি ষাঁড়ের লিঙ্গ পান। এটিই তাঁর সংগৃহীত প্রথম লিঙ্গের নমুনা। এরপর থেকেই তাঁকে খানিকটা উত্যক্ত করার জন্যই তাঁর সহকর্মীরা বিভিন্ন রকম তিমির লিঙ্গ উপহার দিতে থাকেন। কিন্তু Hjartarson ছিলেন প্রকৃত গবেষক। লিঙ্গের নমুনা সংগ্রহের এক আশ্চর্য নেশা তাঁকে পেয়ে বসে। 


বর্তমানে এই মিউজিয়ামের কিউরেটর Sigurður Hjartarson-এর সন্তান Hjörtur Gísli। 


পৃথিবীতে এ ধরণের সংগ্রহশালা সম্ভবত এই একটিই। কিন্তু এই সংগ্রহশালার গুরুত্ব অপরিসীম।

লিঙ্গচর্চা কেবল জীববিদ্যার অন্তর্ভুক্ত নয়। সমাজ বিজ্ঞানেও এর গুরুত্ব রয়েছে। যুগ থেকে যুগান্তরে লিঙ্গ বা পুরুষাঙ্গ কেবল এক শরীরী অঙ্গ হয়েই থাকেনি। তৈরি করেছে এক ক্ষমতা কাঠামো। এক রাজনৈতিক বয়ান। যেখানে পুরুষাঙ্গ ক্ষমতার চিহ্নায়ক হয়ে দেখা দিয়েছে। ঠিক এই জায়গা থেকেই লাঁকা phallus এবং penis এই শব্দদুটিকে কার্যত আলাদা করে দেন। penis তাঁর কাছে এক জৈব বাস্তবতা। phallus এক তাত্ত্বিক পরিভাষা। এক সমাজ –মনবৈজ্ঞানিক চিহ্নায়ক। 

ফ্রয়েড শিশুর বিকাশের তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেকার স্তরকে phallic phase বলে চিহ্নিত করেছিলেন। ফ্রয়েড মনে করেছিলেন যে এই স্তরে শিশু মনে করে লিঙ্গই একমাত্র genital organ। এবং সে আস্তে আস্তে এও বুঝতে পারে, কোনও কোনও শিশুর এই অঙ্গ রয়েছে। এবং কারও কারও এই অঙ্গ নেই। কেন কারও কারও এই অঙ্গটি নেই, এই প্রশ্নটিই তাকে দাঁড় করায় castration complex এর সামনে। পুরুষশিশুর মনে জন্মায় লিঙ্গছেদের ভীতি। যা ধীরে ধীরে তাকে আকৃষ্ট করে তোলে মায়ের প্রতি। এবং নারীশিশুর মনে জন্মায় এক অদম্য রাগ। সে মনে করে তাঁর লিঙ্গছেদ হয়েছে। এবং এই ছেদনের জন্য সে দায়ী করে তার মাকে। ফ্রয়েডের তত্ত্বের অনেক বিরোধী বয়ান পরবর্তীকালের মনোবৈজ্ঞানিকরা সামনে এনেছেন। তবে তাতে সমাজ মনোবিদ্যায় লিঙ্গের গুরুত্ব কমেনি। 

লাঁকা তাঁর Psychoanalytic তত্ত্বে phallus কে প্রাথমিকভাবে লিঙ্গপার্থক্যের চিহ্নায়ক হিসেবে বর্ণনা করেন। আগেই বলা হয়েছে, লাকাঁ penis এবং phallus শব্দদুটিকে পরস্পরের প্রতিশব্দ হিসেবে দেখেননি। phallus-এর সমাজমনোবৈজ্ঞানিক গুরুত্ব তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মনে রাখা প্রয়োজন আইসল্যান্ডের সংগ্রহশালাটির নাম Phallological Museum। 

Phallo এবং logocentrisme শব্দদুটিকে মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল এক তত্ত্ব প্রস্থান। নাম Phallogocentrism। দেরিদা একে বর্ণনা করেন 'the system of metaphysical oppositions' বলে। বস্তুত দেরিদার deconstruction তত্ত্বের আঁতের কথা যে logocentrisme   তা কীভাবে phallus নিয়ন্ত্রিত তাই Phallogocentrism এর মাধ্যমে ফুটে ওঠে। 

ফরাসি নারীবাদী স্কুল écriture feminine আবার এই Phallogocentrism এর পরাপাঠ সামনে নিয়ে আসে। Catherine Clément এবং Hélène Cixous, "The Newly Born Woman" (1975) বইয়ে প্রথাগত Phallogocentrism তত্ত্বের "dual, hierarchical oppositions" এর সমালোচনা করেন। দেখান phallogocentric চিন্তনে চিরটাকাল নারীরা কীভাবে "colonized" হয়ে থেকেছে। 

আসলে ভেবে দেখতে গেলে phallus শেষ পর্যন্ত এক hierarchical authority কে চিনিয়ে দেয়। চিনিয়ে দেয় এমন এক ক্ষমতা কাঠামো যা এক অবদমনের ইতিহাস রচনা করেছে। The Icelandic Phallological Museum হয়ত সেই ইতিহাসকেই মূর্ত করে তোলে।



ছবি: ইন্টারনেট

#বাংলা # ফিচার # বিবস্বান দত্ত # লিঙ্গ রাজনীতি # আয়ারল্যান্ড #The Icelandic Phallological Museum #Phallology

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

57

Unique Visitors

182807