ফিচার

দ্বিতীয় ফিল্ডসজয়ী মারিয়ানা আর আট মাত্রার গোলকঘর

অর্পণ পাল Dec 2, 2022 at 8:08 pm ফিচার

কানাডার গণিতজ্ঞ জন চার্লস ফিল্ডস-এর নামে চালু হওয়া গণিতের সবচেয়ে বড় সম্মান ফিল্ডস মেডেলকে অনেকেই বলে থাকেন গণিতের নোবেল। চার বছর অন্তর ঘোষিত হওয়া এই পুরস্কারের ছিয়াশি বছরের ইতিহাসে এ যাবৎ প্রাপকদের তালিকায় রয়েছেন মাত্র দু-জন মহিলা। ২০১৪ সালে পেয়েছিলেন ইরানের মরিয়ম মির্জাঘানি, আর এই দু হাজার বাইশ সালে পেয়েছেন ইউক্রেনের মারিয়ানা ভায়াযোভস্কা (Maryna Viazovska)।




মারিয়ানার বয়স এখন আটত্রিশ, নিয়ম আছে যে ফিল্ডস মেডেল চল্লিশের বেশি বয়স্ক কাউকে দেওয়া যায় না। অবশ্য তিনি একা নন, ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথেমেটিক্যাল ইউনিয়নের উদ্যোগে প্রদত্ত এই পুরস্কারের জন্য ঘোষিত হয়েছিল মোট চারজনের নাম। এঁরা পাবেন মোট পনেরো হাজার কানাডিয়ান ডলার। 

  রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে-করতে এমনিতে ইউক্রেনের হাল বেশ খারাপ। মারিয়ানা যদিও অনেকদিন ধরেই সুইৎজারল্যান্ডে প্রবাসী, কিন্তু তাঁর পরিবার-পরিজন তো রয়েছেই কিয়েভ শহরে। বিশেষ করে তাঁর মা-বাবা, যাঁরা মাতৃভূমি ছাড়তে চাননি শত বিপদের মধ্যেও। তাঁদের সঙ্গেই রয়ে গিয়েছেন মারিয়ানার পঁচাশি বছরের বৃদ্ধা ঠাকুমাও। 

  আর এটাও ঠিক যে এইরকম মানসিকতার মধ্যে দিন কাটাতে হলে কোনোভাবেই গণিত নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যায় না। ভাগ্যিস তাঁর আসল কাজ যুদ্ধের আগেই শেষ করতে পেরেছিলেন। 

  মারিয়ানার কাজের বিষয় সংখ্যাতত্ত্ব, আর যে কাজের জন্য এই পুরস্কার, সেটার বিষয় 'স্ফিয়ার প্যাকিং'। কোনো একটা বাক্সের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কটি গোলাকার বস্তু ধরতে পারে, সেই ব্যাপারটাকে বলে স্ফিয়ার প্যাকিং। 

ফলের দোকানে ঠিক যেভাবে আপেল সাজানো থাকে স্তূপাকারভাবে, ওইটাই স্ফিয়ার প্যাকিং-এর মূল বিষয় বা সবচেয়ে সহজ উদাহরণ। চারশো বছরেরও বেশি আগে ১৬১১ সালে জোহানেস কেপলার বাক্সের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলক সাজানোর উপায় হিসেবে এই ফল সাজানোর পথ নেওয়ার কথা বলেছিলেন, কিন্তু তিনি এর ব্যাখ্যা বা প্রমাণ দিয়ে যাননি। আর সেই যে ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেছিলেন পরবর্তীকালের গণিতজ্ঞেরা, সেই খাটুনির ফল মিলল ১৯৯৮ সালে এসে! থমাস হেলস নামে এক অধ্যাপক আড়াইশো পাতা অঙ্ক কষে কেপলারের সেই অনুমানকে অবশেষে প্রতিষ্ঠা দিলেন। 

  ত্রিমাত্রিক বাক্সের মধ্যে তো গোল বল সাজানোর উপায় জানা গেল। কিন্তু ওখানেই না থেমে এরপর বিজ্ঞানীরা লেগে পড়লেন আরও বেশি মাত্রার স্থানের মধ্যে (অবশ্যই গাণিতিক উপায়ে, বাস্তবে তিন মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার স্থান কল্পনা করাই মুশকিল) কীভাবে আর কত সংখ্যায় গোলক সাজানো যেতে পারে যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যায় গোলককে দলে নেওয়া যেতে পারে। 

  মারিয়ানার কাজের বিষয় ছিল আট আর চব্বিশ মাত্রার স্থানে গোলককে আঁটবার ফরমুলা বের করা। তাঁর এই সংক্রান্ত পেপারটি পড়ে আর এক গণিতজ্ঞ বলেন যে এর বিষয়বস্তু এতই সহজ, বিশ্বাসই হতে চায় না যে সমাধানটা এতদিন অধরাই ছিল। 

আরও পড়ুন: চিন-আবিষ্কৃত ষষ্ঠ চন্দ্রখনিজ নতুন দিশা দেখাবে নিউক্লিয়ার ফিউশন গবেষণায়

 আর সেই থমাস হেলস? তিনি তো একবার এমনও বলেছিলেন, 'আমার মনে হচ্ছে রামানুজন ফিরে এলেই একমাত্র এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যেতে পারে।'

না, রামানুজনকে লাগেনি; ইউক্রেনের এক চল্লিশ-অনূর্ধ মহিলা মারিয়ানা সমাধান করেছেন জটিল সে সমস্যার। আর সঙ্গতভাবেই স্বীকৃতিও পেতে দেরি হয়নি তাঁর। 


#গণিত #মারিয়ানা #নোবেল #ফিচার #সিলি পয়েন্ট #অর্পণ পাল

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

35

Unique Visitors

219088