গল্প

শেষ কবিতা আসলে যেরকম...

শৌভিক মুখোপাধ্যায় Jan 17, 2021 at 8:27 am গল্প

– চলে যাচ্ছিস!
– হ্যাঁ!
– কিন্তু কেন? এর আগেও তো অনেকবার আমি দেরি করে এসেছি। মিনিটখানেক কথার লড়াই হয়েছে, তারপর সব ঠিক। আজ কী হল?
– দেখ, এতদিন থাকতাম মানে আজও থাকব, এই ধারণাটা ভুল। সূর্য নিভে যাওয়ারও এক-এক দিন এক-এক সময় থাকে। আর আমি তো...
– তিরি, আমি ইচ্ছে করে করিনি। বিশ্বাস কর...
– এর মধ্যে আবার বিশ্বাস করার কথা আসছে কেন? বিশ্বাস না করলে এতক্ষণ সবার মাপা নজর সামলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকব কেন!
– তাহলে... কী হল... আইসক্রিম খাবি?
– তুরুপ, এভাবে হয় না।
– মানে? কেন? আজ হঠাৎ কী হল ... বিকেলে ফোন করলি। দেখা হবে বললি। সূর্য ডোবার আগে ম্যানেজ করে হাজিরও হলুম, কিন্তু এখন কী হচ্ছে কেন হচ্ছে সবটাই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
– ছোট মাথায় এত কষ্ট নিচ্ছিস কেন! কাল থেকে আমরা বন্ধু। কেমন?
– বন্ধু! এত সহজ! বন্ধুর চেয়ে একটু বেশি এগিয়ে এসেছি যখন, তখন ফিরে গিয়ে আবার দাঁড়াতে বলছিস!
– কেন? সম্ভব না?
– তুই বল , সম্ভব কি না! আজ আমার কাছে যে জায়গায় তুই আছিস সেই জায়গা থেকে এক রাতের মধ্যে ফিরিয়ে দেব করে... এগোনো যত সহজ, পিছিয়ে দেওয়া… ততটা কি?
– সোজা ব্যাপার, আমাকে ছাড়াই এগোস আজ থেকে। সরি, কাল থেকে...
– আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না তিরি। জাস্ট বুঝতে পারছি না।
– আসি। আর এগোতে আসিস না। তাড়াতাড়িই অভ্যাস শুরু হওয়া ভালো।
– দাঁড়া!
– কেন?
– দেওয়ালের সঙ্গে যখন প্রেম করিসনি, তখন একতরফা বলে তুই থামতে পারিস না। আমায় জবাব দিয়ে দিলি যখন, জবাবদিহিটাও দিবি। কারণটা বল!
– কী হবে শুনে! নতুন করে কিছু তো বদলাবে না।
– দরকার আছে। কারণটা শুনি, তারপর ঠিক করব, আমি না তুই, কার জন্যে করুণা বরাদ্দ রাখব!
– জোর করছিস?
– আলবাত। আজ থেকেই অভ্যেস বদলাবার কথা বলছিলি না ? ... আমি এই মুহূর্ত থেকে কাউকে ছেড়ে কথা বলছি না। উত্তর দে!
– হুম! এর মধ্যেই উন্নতি হয়েছে। বাহ!
– সেটা নিয়ে ভেবে তোর দরকার নেই। উত্তর দে।
– আসলে আমি একটা কবিতার জন্ম দেখতে এসেছিলাম , কিন্তু...
– বলে যা, আমি শুনছি।
– যতদিন গেল কবিতারা আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে শুরু করল। আমি কবির কাছে কবিতার জন্ম দেখতে এসেছিলাম। থেকেছিলাম। প্রতি মুহূর্তে সংলগ্ন হয়েছিলাম একটু একটু করে, আর পরমুহূর্তেই আশা করছিলাম তুই শব্দকে নামিয়ে আনবি চোখের সামনে... কিন্তু তুই ক্রমশ আমার মধ্যে ডুবে যেতে শুরু করলি। এখনও প্রচুর পড়িস ঠিকই, কিন্তু লেখা, কই! নেই তো! তাই সরে যাওয়াই ভালো। আবার তুই লিখতে শুরু কর।
– হা! হা! হা!
– হাসছিস?
– হ্যাঁ! করুণার পাত্রের প্রতি হাসি ছাড়া আর কী বরাদ্দ থাকে! যাক গে, আয়! সন্ধে হল...
– নীতিন, কিছু মনে করিস না প্লিজ! আমি তোর ভালো চাই! তোর এক-একটা লেখা এত ভালো, এভাবে সেখান থেকে সরিয়ে এনে...
– থাক না!
– ...তোকে কেউ খারাপ বলুক আমি চাই না। বন্ধুর খারাপ কেউ চাইতে পারে, বল?
– নূপুর! তোর বাস! সিগনাল খুললেই উঠে পড়িস! এখন রাস্তা পার হতে হবে না।
– হুম! ভালো থাকিস!
– শোন।
– কী!
– কবিতা লেখা আমি ছাড়িনি। শুধু মাধ্যম বদলেছিলাম। এ পর্যন্ত কাটানো প্রত্যেকটা দিনে কবিতা লিখে গেছি। প্রত্যেকটা দিনই এক-একটা কবিতা হয়ে আছে। আর আছে বলেই, তুই না জানিয়ে ছেড়ে যেতে পারিসনি! আমার কথা শুনতে এসেছিস। শুনে যা, আমি তোর মধ্যে কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জীবনের চেয়ে লেখা যখন বড়ো হল...
– তুরুপ!
– বাস এসে গেছে । ওঠ। ইচ্ছে ছিল না তোকে এভাবে চোখে আঙুল দিয়ে কবিতাগুলো পড়িয়ে দেওয়ার ... তবু... আমার একমাত্র পাঠিকা যখন আর কোনোদিনও আমার কাছে পৌঁছোতে পারবে না, তখন এই লেখাগুলোই তাকে ভালো রাখবে জেনেই বলে দিলাম শেষমেশ। আসি।
– তুরুপ!

– আমার নাম নীতিন। নীতিন রায়। তুরুপ, একটু আগেই তার শেষ কবিতা লিখে চলে গেছে।


[ অলংকরণ :  অভীক ]


#গল্প #রবিবারের গল্প #বাংলা গল্প #Story #শৌভিক মুখোপাধ্যায় #সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

18

Unique Visitors

219123