হাড়গিলে বাঁচানোর উদ্যোগ, অসমের প্রাণীবিজ্ঞানী পেলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মান
![](https://firebasestorage.googleapis.com/v0/b/sillypoint-3.appspot.com/o/images%2Fthumbs%2Fdh0Ow1677353922382Leptoptilos_dubius_(Assam%2C_2007)_1366x1366.jpg?alt=media)
“সাড়ে চার ফুট লম্বা পাখি। রাস্তায় ময়লা খুঁটে খুঁটে খেত। এখন যেমন দেখছেন কাক চড়ুই, তখন ছিল হাড়গিলে। গঙ্গার জলে মড়া ভেসে যেত, তার উপর চেপে দিব্যি নৌসফর করত।” 'গোরস্থানে সাবধান' উপন্যাসে ফেলুদা বলেছিল জটায়ুকে। আজ্ঞে হ্যাঁ। একসময় কলকাতায় সত্যিই কাক-চড়ুইয়ের মতো দাপিয়ে বেড়াত এই অদ্ভুতদর্শন পাখি। মূলত সারস বা মদনটাক প্রজাতির এই পাখিরা কলকাতা থেকে বহুদিনই বিদায় নিয়েছে। শুধু কলকাতা না, গোটা দুনিয়াতেই এরা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায়। এদের রক্ষা করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্মান পেলেন অসমের প্রাণীবিজ্ঞানী ডঃ পূর্ণিমা দেবী বর্মণ।
এমনিতেই এখন কম্বোডিয়া ও ভারত ছাড়া আর কোথাও হাড়গিলে পাখি দেখা যায় না। ভারতে এখন শুধু দুটি রাজ্যেই রয়েছে এই প্রাণীটির বাস। অসম এবং অরুণাচল। যার মধ্যে মূলত অসমই এই পাখিটির ব্রিডিং গ্রাউন্ড। একসময় প্রচুর সংখ্যায় থাকা সত্ত্বেও এখন এরা বিলুপ্তপ্রায় কেন? কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক এবং গবাদিখাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার একটা সময় শকুন ও হাড়গিলের মতো শবভোজী পাখিদের পাচনতন্ত্রে মিশে তাদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে থাকে। ধীরে ধীরে তাদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। এটাই তাদের বিলুপ্তির প্রধান কারণ। অল্প সংখ্যক যেসব হাড়গিলে এখনও টিকে আছে তাদের বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে মানুষের কুসংস্কার। শ্মশানে-ভাগাড়ে ঘুরে বেড়ায়। দেখতেও কুশ্রী। সব মিলিয়ে কোনও এক অজানা কারণে অশুভ অনুষঙ্গের সঙ্গে জুড়ে গেছে এরা। তাই বহুকাল ধরেই মানুষের হাতে নানাভাবে নিধন চলছে এদের।
অসমে হাড়গিলেদের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে কমছে, এটা খেয়াল করেছিলেন ডঃ পূর্ণিমা দেবী বর্মণ। তাই ২০০৭-০৮ সাল নাগাদ তিনি এ ব্যাপারে সুচিন্তিত প্রচার কর্মসূচি নেন। প্রাথমিকভাবে গ্রামের মহিলাদের নিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর এই কর্মযজ্ঞ। মূলত অসমের বিভিন্ন স্থানীয় ও আদিবাসী উৎসবগুলিকে তিনি বেছে নেন প্রচারের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে। বোঝাতে শুরু করেন হাড়গিলার সৌজন্যেই ভাগাড় থেকে প্রাণঘাতী রোগ ছড়িয়ে পড়ে না গ্রামে। বাস্তুতন্ত্রে এরাও জরুরি ভূমিকা নেয়।
তাঁর লাগাতার প্রচারে গ্রামের মানুষজনের মধ্যে তৈরি হয়েছে সচেতনতা। গ্রামের মহিলাদের নিয়েই ডঃ বর্মণের প্রেরণায় তৈরি হয়েছে একটি বাহিনি যার প্রধান কাজ এই পাখিদের রক্ষা করা। ‘হাড়গিলে আর্মি’ নামেই পরিচিত যে দল। দলের সদস্য সংখ্যা এখন ১০ হাজার। এদের চেষ্টায় হাড়গিলেরা সংখ্যায় বাড়ছে।
২০০৮ সালে যেখানে, মাত্র ২০০-র কাছে নেমে এসেছিল হাড়গিলার সংখ্যা, আজ সেখানে এই সারসের সংখ্যা ১০০০-এর বেশি। ২০২১ সালে তাঁর তত্ত্বাবধানেই পাচারিয়া গ্রামের একটি সরকারি স্কুলে তৈরি হয় 'হাড়গিলে লার্নিং অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টার'। প্রায় দেড় দশকব্যাপী এই অসামান্য উদ্যোগের জন্য সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘চ্যাম্পিয়নস অফ দ্য আর্থ’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ডঃ বর্মণ।
...............
#Greater adjutant #Endangered Species #silly পয়েন্ট