'অমর একুশে বইমেলা' শুরু হয়েছিল ফুটপাথে চটের ওপর
কলকাতার গর্ব আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। ঢাকার গর্ব 'অমর একুশে বইমেলা'। দুই বাংলার এই দুই বিপুল জনপ্রিয় বইমেলা বাংলা ভাষা ও বাংলাভাষী মানুষজনকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে একটি আলাদা সম্মানের জায়গা দিয়েছে। কিন্তু জানেন কি, এই অমর একুশে বইমেলার সূত্রপাত হয়েছিল ফুটপাথে একটি চটের ওপর? তাও মাত্র ৩২ টি বই নিয়ে?
বাঙালির অন্যতম গর্বের একটি বিষয় এই বইমেলার ইতিহাস খুবই আকর্ষণীয়। স্বাধীন বাংলাদেশ তখন সবেমাত্র আত্মপ্রকাশ করেছে। অনেক বিশিষ্ট লেখক তখনও কলকাতায়। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের পক্ষে। কিন্তু তাঁদের মূল্যবান লেখাপত্র কি পৌঁছবে না দেশবাসীর কাছে? উদ্যোগ নিলেন প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা। তিনি স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা তৈরি করেছিলেন (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী নামে পরিচিত)। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চিত্তরঞ্জনবাবু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বর্ধমান হাউজের বটতলায় একটুকরো চটের উপর শরণার্থী লেখকদের ৩২টি বই নিয়ে বসে যান বিক্রি করতে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রাথমিক উপাদান ছিল এই বইগুলো। চার বছর তিনি একাই এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালে কিছু প্রকাশক এসে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমী এর সাথে সংযুক্ত হয়। পরের বছর এতে যোগ দেয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। ভাষা দিবসের শহিদদের সম্মানার্থে 'একুশে'-র অনুষঙ্গ জুড়ে দেওয়া হয় এই বইমেলার সঙ্গে।
১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা'-র উদ্বোধন করেন। কিন্তু একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য সে বছর বইমেলাটি করা যায়নি। পরের বছর বিপুল উৎসাহে বইমেলার আয়োজন করা হয়। সেই শুরু। তারপর ২০১৪ সালে এই মেলা বাংলা একাডেমী চত্বর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তরিত হয়। গোটা ফেব্রুয়ারি মাস জুড়েই এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। চিত্তরঞ্জন সাহা একটুকরো চটের উপর কয়েকটি বই সাজিয়ে যে মেলার সূচনা করেছিলেন, তা-ই আজ কয়েকশো স্টলের বর্ণাঢ্য মেলায় রূপান্তরিত।
.................