সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দের কবিতার বই এবং সুকুমার সেন
আধুনিক বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে এমন ঘটনার অভাব নেই, যেখানে পূর্বজ কবি বা পণ্ডিতরা নতুন কবিদের কাব্যভাষার রসগ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন, কিংবা যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথ যেমন জীবনানন্দ, সুধীন দত্ত প্রমুখের কবিতার গুণগ্রাহী হলেও একাধিকবার স্বীকার করেছেন যে খুব ভালো করে বুঝতে পারেননি তিনি তাঁদের সৃষ্টিকে। আবার পরবর্তীকালে বুদ্ধদেব বসুর মতো ব্যক্তিত্বও একই সমস্যায় পড়েছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়দের প্রজন্মকে নিয়ে। কিংবদন্তী ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে এভাবেই বিড়ম্বিত করেছিল জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ। মজার এই ঘটনাটির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন আরেক কিংবদন্তী সুকুমার সেনও।
যাঁরা বাংলা বিদ্যাচর্চার জগতের খবরাখবর রাখেন, একথা তাঁদের অজানা নয় যে সুকুমার সেন ছিলেন সুনীতিকুমারের ছাত্র। আমৃত্যু তাঁদের মধ্যে অসাধারণ সম্পর্ক ছিল। গুরুর প্রতি শিষ্যের তো বটেই, শিষ্যের প্রতিও গুরুর ছিল শ্রদ্ধা। সুকুমারবাবুর কাজের অত্যন্ত গুণগ্রাহী ছিলেন সুনীতিকুমার। ছাত্র হলেও সবসময় তাঁকে ‘আপনি’ এবং ‘সুকুমারবাবু’ বলে সম্বোধন করতেন। অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন তাঁর মতামতকে। সুকুমারবাবুর ছেলে সুভদ্রকুমার সেন সুনীতিবাবুর তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেছিলেন। সুনীতিবাবু তাঁকে দিকনির্দেশ দিতেন, লেখা সংশোধন করে দিতেন এবং সবশেষে বাবাকে একবার দেখিয়ে নিতে বলতেন। এহেন সুনীতিবাবুর একবার ইচ্ছে হল আধুনিক কবিতার নমুনা চেখে দেখবেন। তিনি কবিতার জগতের লোক ছিলেন না। বিশেষত হালের বাংলা কবিতা সম্বন্ধে তেমন ধারণা ছিল না তাঁর। সুকুমারবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন আধুনিক কোন কবির কবিতা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। সুকুমারবাবু জীবনানন্দ দাশের নাম করলেন। কলেজস্ট্রিট থেকে সুনীতিবাবু কিনে আনলেন জীবনানন্দের একটি কবিতার বই। পড়লেন। কিন্তু একেবারেই ভালো লাগল না। বরং বিরক্তি জন্মাল। এর মধ্যেই একদিন সুভদ্রকুমার গিয়েছেন তাঁর বাড়ি। সুনীতিবাবু জীবনানন্দের বইটি সুভদ্রকুমারের হাতে দিয়ে বললেন, “বইটি আপনার বাবাকে দেবেন। বলবেন, অকারণে তিনি আমার এমন অর্থদণ্ড ঘটালেন কেন?”
ঋণ : বরুণকুমার চক্রবর্তী / একটি অবিস্মরণীয় সাক্ষাৎকারে গুরু-শিষ্য প্রসঙ্গ / কোরক, প্রাক শারদ সংখ্যা, ২০১৬
#Teachers' Day #শিক্ষক দিবস #Sunitikumar Chatterjee #Sukumar Sen #Jibanananda Dash #সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় #সুকুমার সেন #জীবনানন্দ দাশ #গুরু-শিষ্য