গান লিখেছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়?
ছন্দব্যবহারে অভাবনীয় কুশলতা। তার ওপর নিজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে ছিলেন বাম রাজনীতির সঙ্গে। স্বভাবতই কমিউনিস্ট রাজনীতির সেই স্বর্ণযুগে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রচুর কবিতায় সুরারোপ করে গান তৈরি করা হয়েছিল। তবে সেটাকে তো ঠিক গান লেখা বলা যায় না। সুভাষ মুখোপাধ্যায় কি গান লেখার জন্যই গান লিখেছিলেন কখনও?
সুভাষের ‘চিরকুট’ কাব্যগ্রন্থের বিখ্যাত ‘বজ্রকণ্ঠে তোলো আওয়াজ’ কবিতাটির নামই ‘জনযুদ্ধের গান’। গান হবে ভেবে লেখেননি নিশ্চয়ই, তবে এই কবিতায় সুর দেওয়া হয়েছিল এবং সে গান রাজনৈতিক মঞ্চে যথেষ্ট জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। সুর দিয়েছিলেন বিনয় রায় অথবা জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র। জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র সুভাষের ‘মে দিনের কবিতা’ (প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য) – তেও সুর দিয়েছিলেন। ‘অগ্নিকোণ’ কবিতায় সুর দিয়েছিলেন সলিল চৌধুরি। একেবারে মূলস্রোতের সুরকার সুধীন দাশগুপ্তের সঙ্গেও সুভাষের দারুণ সম্পর্ক ছিল। জয় বাংলা (১৯৭১) নামে একটি ছবিতে সুধীনবাবু সুভাষের বেশ কয়েকটি কবিতা গান হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, যাদের মধ্যে ‘স্ট্রাইক’ গান হিসেবে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এছাড়াও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অজিত পাণ্ডে, প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রমুখেরা সুভাষের কবিতায় সুর দিয়েছিলেন এবং গেয়েছিলেন। অনেকেরই জানা নেই একেবারে আধুনিককালে ইন্দ্রনীল সেন, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রীকান্ত আচার্যের মতো গায়করা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় সুর করা গান গেয়েছেন। শ্রীকান্ত আচার্য কেরিয়ারের একেবারে শুরুর দিকে গেয়েছিলেন ‘ফুলগুলো সরিয়ে নাও’। ‘পাথরের ফুল’ নামে সুভাষের অতিপরিচিত এই কবিতাটিতে সুরারোপ করেছিলেন প্রবীর মুখোপাধ্যায়। তবে এসব তো গেল সুভাষের কবিতা থেকে গান হবার ফিরিস্তি। গান লেখা বলতে যা বোঝায়, যতদূর জানা গেছে, সেটা সুভাষের জীবনে ঘটেছিল মাত্র একবার। এবং তার কারণ ছিল বন্ধুকৃত্য।
রাজনৈতিক সংস্কৃতিচর্চার সেই প্রবল সুপবনেও গান লেখা ব্যাপারটার প্রতি সুভাষ কোনওদিনই আগ্রহ দেখাননি। তাঁর জীবনের একটিমাত্র গান লেখার নিমিত্ত ছিলেন গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। হেমন্তর সঙ্গে একসময় অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ছিল তাঁর। আকাশবাণীতে হেমন্ত একটি গান গেয়েছিলেন বলে জানা যায়, যেটি সুভাষের লেখা। সুর করেছিলেন হেমন্ত নিজেই। গানের শুরুর লাইন ছিল ‘আমার গানেতে এলে চিরন্তনী।’ তবে গানটির সম্পূর্ণ পাঠ পাওয়া যায় না। অনেক পরে রবীন্দ্রসদনে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এক সংবর্ধনা-সভায় নাকি হেমন্ত গানটির সামান্য অংশ শুনিয়েছিলেন।
তথ্যঋণ : স্বপন সোম, এই সময়, ৪ মার্চ ২০১৮।
#সুভাষ মুখোপাধ্যায় #Subhas Mukhopadhyay #Poet #Revolutionary Poet #Song #Hemanta Mukherjee #Singer #হেমন্ত মুখোপাধ্যায় #ফিচার #ব্যক্তিত্ব #টিম সিলি পয়েন্ট #Team Silly Point