স্মৃতির রিজার্ভ বেঞ্চ (ষষ্ঠ কিস্তি) : গার্গী ব্যানার্জী ও সরস্বতী সাহা
আধুনিক দুনিয়ায় খেলা বরাবরই সবচেয়ে গ্ল্যামারাস জিনিসগুলোর একটা। সব খেলা নয় অবশ্যই। এ দুনিয়ায় কোনও কোনও খেলা ধর্মের সমার্থক হয়ে যায়, আর কোনও কোনও খেলার কুশীলবেরা স্বীকৃতি না পেয়েই চলে যান - চুপিচুপি, একা একা। তবে স্মৃতি জিনিসটা বড় প্রতারক। আজকের গ্ল্যামার নিমেষে ফিকে হয়ে যায় আগামীর ধুলো পড়ে। একটু পুরোনো হয়ে গেলেই প্রায় সব স্মৃতি এক পংক্তিতে বসে যায়। ভুস করে তাদের মুখে ধোঁয়া ছেড়ে এগিয়ে যায় আমাদের বাস। স্মৃতি খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে রিনিউ করতে করতে ডিলিট করতে থাকে পুরোনো জিনিসপত্র। এই তথ্যবিপ্লবের যুগে কিছুদিন আগের ঘটনাই যেন মনে হয় কত শতাব্দী পিছনে ফেলে আসা - সেপিয়া টোনে ছোপানো মনকেমন। বেহালার আগেও তো অনেক গর্ব করার মতো গল্প ছিল বাঙালির খেলায়। পঙ্কজ রায়েরও আগে ছিল কিছু গল্প। এমনকী কিছু গল্প ছিল সেই সাদা- কালো যুগের গোবরবাবুরও আগে। আমরা খবর রাখি না। কেমন হয় যদি ধুলো- টুলো ঝেড়ে তুলে আনা যায় পুরোনো দিনের এমন কয়েকজন বিস্মৃতপ্রায় ক্রীড়াব্যক্তিত্বের গল্প? সিলি পয়েন্টের এই নতুন সিরিজে সেই চেষ্টাই ধরা থাকল, খেলা-প্রেমীদের জন্য। আজ ষষ্ঠ কিস্তিতে নিকট অতীতের দু'জনের গল্প। ক্রিকেটার গার্গী ব্যানার্জী ও দৌড়বীর সরস্বতী সাহা।
গার্গী ব্যানার্জী ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের এই প্রাক্তনী দেশের হয়ে বারোটি টেস্ট ম্যাচ ও ছাব্বিশটি ওয়ান-ডে ম্যাচে খেলেছেন। ছোটবেলায় ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল ও ফুটবল খেললেও তিনি ১৯৭৬-এ ওয়াইএমসিএ-তে ক্রিকেট শিখতে শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইডেন গার্ডেন্সে ওয়ান-ডে বিশ্বকাপে ম্যাচে তাঁর অভিষেক ঘটে। দেশের হয়ে খেলার পাশাপাশি তিনি পশ্চিমবঙ্গের হয়ে জাতীয় স্তরের লিগেও খেলেছেন। ১৯৮৪-তে তাঁর টেস্ট অভিষেকে তিনি অর্ধ-শতরান করেন ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কটক টেস্টে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন। এই কৃতিত্বের জোরেই তিনি ১৯৮৬-তে ভারতের প্রথম ইংল্যান্ড সফরকারী মহিলাদের দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের ব্ল্যাকপুলে খেলা টেস্ট ম্যাচে তিনি উভয় ইনিংসেই অর্ধ-শতরান করেছিলেন। গার্গী ব্যানার্জী মহিলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের অধিকারিণী যিনি তাঁর কেরিয়ারে একটিও শতরান করেননি। খেলোয়াড়-পরবর্তী জীবনে তিনি ক্রিকেটের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত থেকেছেন এবং বিভিন্নভাবে ভারতীয় মহিলাক্রিকেটের মানোন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের নির্বাচক কমিটির সভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন । ২০১৭ সালে এপ্রিল মাসে তাঁকে ‘ম্যারিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব’ (এমসিসি)-এর আজীবন সাম্মানিক সদস্যপদ প্রদান করা হয়। তিনি আজও আগ্রহী মেয়েদের ক্রিকেটকে কেরিয়ারে হিসেবে বেছে নিতে অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছেন।
সরস্বতী সাহাত্রিপুরার এই প্রাক্তন মহিলা ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড স্প্রিন্টার দেশের হয়ে অনেক আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জন করেছেন। পি.টি. উষার এই সহ-খেলোয়াড় ২০০২ সালে লুধিয়ানায় ন্যাশনাল অ্যাথলেটিক মিটে ২০০ মিটার রেসে ন্যাশনাল রেকর্ড গড়েন মাত্র ২২.৮২ সেকেন্ডে । তিনি ২৩ সেকেন্ডে সীমা অতিক্রমকারিণী প্রথম ভারতীয় মহিলা স্প্রিন্টার হন যা আজও ন্যাশনাল রেকর্ড। ১৯৯৮ সালে এশীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ৪x১০০ মিটার রিলে রেসে সরস্বতী অংশগ্রহণ করেন যেখানে তাঁর দলে ছিলেন পি.টি উষা, ই.বি. শায়লা ও রচিতা মিস্ত্রি। এই রেসে তাঁরা ৪৪.৪৩ সেকেন্ডে জাতীয় রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জয় করেন। ২০০০ সালের জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় তিনি একশো মিটার প্রতিযোগিতায় রৌপ্যপদক জয় করেন। ২০০২ বুসান এশিয়ান গেমসে দুশো মিটার ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতে তিনি তাঁর অ্যাথলিট জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি স্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি ২০০০ ও ২০০৪ সালের অলিম্পিকে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।ভারত সরকার অ্যাথলেটিক্সে তাঁর অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাঁকে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত করেন। ২০০৬-এর জুলাই মাসে তিনি অ্যাকিলিস টেন্ডনের চোটের কারণে অ্যাথলেটিক্স থেকে চিরতরে অবসর গ্রহণ করেন।
[পোস্টার ডিজাইন : অর্পণ দাস।]
#নিবন্ধ #নিবন্ধ সিরিজ #স্মৃতির রিজার্ভ বেঞ্চ #অলর্ক বড়াল