শিন-চ্যান কথা
![](https://firebasestorage.googleapis.com/v0/b/sillypoint-3.appspot.com/o/images%2Fthumbs%2F547Xe1598675837018flat%2C750x%2C075%2Cf-pad%2C750x1000%2Cf8f8f8_1366x1366.jpg?alt=media)
শিন চ্যান নোহারাকে মনে আছে তো? সেই যে, বছর পাঁচেকের জাপানি বাচ্চাটা, যে তার দুষ্টুমির ঝুলি নিয়ে বিকেল পাঁচটার সময় আমাদের টিভির পর্দায় হাজির হত। মা মিসাই, বাবা হিরোশি, বোন হিমাওয়ারি আর কুকুর শিরোকে নিয়ে তার এক বিরাট মজার জগৎ। বাচ্চাদের কাছে তো সে দুষ্টুমির সিদ্ধপুরুষ। বড়োরা অবশ্য শিন চ্যানের কথা আর আচার-আচরণে রসুন-পেঁয়াজের আমিষ গন্ধ পাবেন। একটু তলিয়ে দেখলে ‘ডার্ক কমেডি’ আর ব্যাঙ্গাত্মক প্রহসনের আমেজ খুঁজে পাওয়াও অসম্ভব নয়। সব মিলিয়ে গোটা বিশ্বের ছোটো-বড়ো সবার কাছে শিন চ্যান হয়ে উঠেছে তুমুল জনপ্রিয় এক চরিত্র।
সেই জনপ্রিয়তার সঙ্গেই শিন চ্যানকে নিয়ে তৈরি হয়েছে হরেক রকম গল্পকথা। সেই কাহিনি এতোটাই মর্মান্তিক যে আজকের ইন্টারনেট-বিশ্বে তা ‘ভাইরাল’ হতে সময় নেয়নি। গল্পটা এরকম যে শিন চ্যান নামে সত্যিকারের একটা পাঁচ বছরের ছেলে জাপানের কাসুকাবে শহরে তার পরিবার নিয়ে থাকত। একদিন মা’র সঙ্গে সে ও তার বোন হিমাওয়ারি দোকানে গেছিল। মা মিসাইয়ের অন্যমনস্কতার সুযোগে হিমাওয়ারি রাস্তায় চলে আসে। শিন চ্যান তা দেখতে পেয়ে বোনকে বাঁচাতে ছুটে যায়। কিন্তু গাড়ির ধাক্কায় দুজনেরই মৃত্যু ঘটে। মা মিসাই পুরো ঘটনার জন্য নিজেকে দায়ী করে অবসাদে ভুগতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ছেলের স্মৃতিতে তিনি ‘ক্রেয়ন’ দিয়ে শিন চ্যানের ছবি ও গল্প লেখা শুরু করেন। সেই ঘটনা জানতে পেরে ইউশিতো উসুই নামের এক মাঙ্গা কার্টুনিস্ট মিসাইয়ের সঙ্গে দেখা করে ধারাবাহিক ভাবে শিন চ্যানের মাঙ্গা আঁকা শুরু করেন। অনেকে তো এমনও মনে করেন, যে গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনায় শিন চ্যান মারা যায়, সেই গাড়ির ড্রাইভার ছিল ইউশিতো উসুই স্বয়ং। অনুশোচনা থেকেই তিনি প্রতিজ্ঞা নেন যে, তিনি শিন চ্যানকে অমর করে দেবেন।
আরও পড়ুন
বিখ্যাত আলতামিরা গুহাচিত্র আবিষ্কার হয়েছিল আট বছরের একটি ছোট্ট মেয়ের দৌলতে
শিন চ্যানকে অবশ্য ইউশিতো উসুই অমর করে দিয়ে গেছেন। সেটা তার ছবি সৃষ্টিতে, সরস সংলাপে, পরিবার কেন্দ্রিক গল্প বলার দক্ষতায়। ফলে শিনচ্যানের বাস্তব অস্তিত্বও নেহাতই ‘আরবান লেজেন্ড’। স্বয়ং ইউশিতো উসুই এবং ফুতাবা পাবলিশার্সের প্রাক্তন অধিকর্তা কাৎসুয়ুকি হায়াশি সেই কথা স্পষ্ট করে বলে গেছেন। শিন চ্যানের প্রকাশনার ইতিহাসও এই ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়। ১৯৮৫ সালে উসুই ‘ডারাকুয়া স্টোর মনোগাতারি’ নামে একটি ধারাবাহিক মাঙ্গা লিখছিলেন। হায়াশি বাবুর অনুরোধে তিনি সেই মাঙ্গার একটি চরিত্র শিনোশুকে নিকাইদোকে নিয়ে ১৯৯০ সাল থেকে আলাদা মাঙ্গা কাহিনি লিখতে থাকেন। তারই নাম শিনোশুকে নোহারা। নিকাইদো ও নোহারার মধ্যেও অসংখ্য মিল। দুজনকেই দেখতে একরকম, দুজনেই বয়সে বেশি মহিলাদের সঙ্গে ফ্লার্ট করতে অভ্যস্ত, দুজনেই যখন-তখন নগ্ন হয়ে যায়। প্রথমে ৩ পাতার কাহিনি হিসাবে শুরু হলেও প্রবল জনপ্রিয়তার কারণে শিনোশুকে-কে দ্রুত ১৬ পাতার করে দেওয়া হয়। ১৯৯২ সালে টিভিতে অ্যানিমে শুরু হলে তার নাম হয় শিন-চ্যান। পরে শিন চ্যানকে নিয়ে সিনেমাও তৈরি হয়েছে।
শিন চ্যানকে নিয়ে একটা অনুযোগ আছে যে, বয়সের তুলনায় সে অতি পাকা। কিন্তু যদি লক্ষ্য করা যায়, তাহলে বোঝা যাবে, শিন চ্যান আসলে সেই বাচ্চাটা যে এই ‘বড়োদের’ দুনিয়ার অনবরত মিথ্যে কথা আর দ্বৈতসত্তাকে ব্যঙ্গ করে। এই যে তার ‘ফ্লার্টবাজ’ প্রবণতা, সেটা তো শিখেছে সে তার বাপ-ঠাকুর্দার থেকে। জাপানি সমালোচক সুনেহিরো উনো শিন চ্যানের প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “Child notices things more than we think they do.” আমরা বড়োরা যে শিশুদের জন্য ‘আদর্শ’ উদাহরণ হয়ে উঠছি না, সেটাই শিন চ্যানের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। এটা সে করে এমন সরস নিষ্পাপ ভঙ্গিতে যে হাসি না পেয়ে উপায় থাকে না।
২০০৯ সালে মূল কার্টুনিস্ট উসুই একটি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর কিছুদিন মাঙ্গা প্রকাশনা বন্ধ রাখা হয়। পরে অবশ্য সাপ্তাহিক মাঙ্গা অ্যাকশনের অধিকর্তা কেন্জি হন্ডা জানান যে তাঁরা উসুইয়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আবার শিন চ্যানের কাহিনি প্রকাশ করবেন। কিন্তু এই নিয়েও রটে গেছে গুজব। উসুই নাকি শিন চ্যানের সেই অ্যাক্সিডেন্টের অবসাদে আত্মহত্যা করেন। এমনও গল্প আছে যে, শিন চ্যান অ্যানিমের শেষ এপিসোড নাকি কখনোই সম্প্রচার করা হয়নি, কারণ সেখানে নাকি তার গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু দেখানো আছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই, শিন চ্যানের অ্যানিমে এখনও চলছে। ফলে শেষ এপিসোড দেখানোর প্রশ্নই ওঠে না। আর সেটা এভাবেই চলতে থাকুক, এটুকুই কামনা।
#শিন চ্যান #কার্টুন #অ্যানিমে #cartoon #animation #ফিচার #বিনোদন #Yoshito Usui