ফিচার

জাপানি ভাষায় সংস্কৃত অমরকোষ অনুবাদ করেছিলেন শান্তিনিকেতনের প্রথম বিদেশি ছাত্র

টিম সিলি পয়েন্ট Sep 15, 2020 at 5:11 am ফিচার

শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে প্রথম বিদেশী ছাত্র ছিলেন এক জাপানি তরুণ। নাম শিতোকু হোরি সান (১৮৭৬- ১৯০৩)। বিখ্যাত জাপানি চিন্তক ও বুদ্ধিজীবী ওকাকুরা কাকুজোর সূত্রে তিনি শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন।
সানের ভারতে আসার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সংস্কৃত ভাষা শেখা। তাছাড়াও পুরাতত্ত্ব ও প্রাচীন ভারতবিদ্যায় তাঁর আগ্রহ ছিল। বিশেষ আগ্রহ ছিল বৌদ্ধদর্শনে। বুদ্ধগয়া, বারাণসী, বেলুড় প্রভৃতি স্থান ঘুরে তিনি শান্তিনিকেতনে আসেন। সে সময় কোনও ভারতীয় ভাষা তিনি জানতেন না। ইংরেজিও জানতেন না। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ইংরেজি ও সংস্কৃত শেখার ব্যবস্থা করেছিলেন। শান্ত, মিষ্টভাষী এই তরুণটিকে শান্তিনিকেতন আশ্রমের সকলেই পছন্দ করতেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথেরও খুব প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিলেন সান। তাঁর চিঠিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বিদেশী ছাত্রের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে যাতে বিশেষ নজর দেওয়া হয় সে বিষয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে রথীন্দ্রনাথের ওপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন সানের সুবিধা- অসুবিধার খোঁজখবর রাখার। সেই সূত্রেই রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে সানের সখ্য গড়ে উঠেছিল। এই উজ্জ্বল তরুণ জগদীশচন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিত্বেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রিয় বন্ধু ও শান্তিনিকেতন- প্রকল্পের বড় সমর্থক জগদীশচন্দ্র চেয়েছিলেন হোরি সানকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে চিন ও জাপানের মতো দেশের শাস্ত্রীয় আদান প্রদানের একটি নিয়মিত ক্ষেত্র তৈরি হোক। রবীন্দ্রনাথকে লেখা জগদীশের চিঠিপত্র থেকে জানা যায় তিনি এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথকে তিনি উৎসাহ দিয়েছিলেন।

নজরে থাকুক
শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে প্রচলিত ছিল অভিনব এক ‘জাপানি’ খেলা

সানের মধ্যে প্রকৃত গবেষকের অনুসন্ধিৎসা ছিল। তাই তাঁর শেখার গতিও ছিল অতি দ্রুত। বিদ্যাচর্চার বাইরে সানের আরেকটি আগ্রহের জায়গা ছিল ফোটোগ্রাফি। তাঁর তোলা ছাতিমতলা ও কাচের মন্দিরের ছবি শান্তিনিকেতনে সংরক্ষিত আছে। দুর্ভাগ্যবশত, শান্তিনিকেতনে আসার পর খুব কম দিনই তিনি বেঁচে ছিলেন। পাঞ্জাব ভ্রমণে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। এক বছরেরও কম সময় সান কাটাতে পেরেছিলেন শান্তিনিকেতনে। তার মধ্যেই জাপানি ভাষায় অনুবাদ করে ফেলেছিলেন অমরসিংহের সংস্কৃত অমরকোষ। শান্তিনিকেতনের প্রথম বিদেশী ছাত্রের অসীম সম্ভাবনা বিকশিত হবার আগেই মর্মান্তিকভাবে ঝরে গিয়েছিল। ১৯০৩ সালে আমরা অকালে হারিয়েছিলাম ভবিষ্যতের অত্যন্ত প্রতিভাবান এক বিদেশী ভারতবিদ্যাবিশারদকে।

ঋণ : ১) জগদীশচন্দ্র বসু / রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : দুই বন্ধুর চিঠি পারস্পরিক ও পারম্পরিক, ১৮৯৯-১৯৩৬ ২) সমীর সেনগুপ্ত / রবীন্দ্রসূত্রে বিদেশীরা।

ছবি ঋণঃ parabaas.com

#India #Shantiniketan #Bolpur #Japan #Sanskrit #foreign student #biswabharati #translator #amarkosh #ভারত #শান্তিনিকেতন #বোলপুর #জাপান #সংস্কৃত #বিদেশী ছাত্র #বিশ্বভারতী #অনুবাদক #অমরকোষ #শিতোকু হোরি সান #1876 #1903 #ওকাকুরা

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

33

Unique Visitors

217849