রোমান হলিডে
...........................
পড়শিনগর : তৃতীয় কিস্তি
.................................
ডান হাত সামনের দিকে তুলে ধরা। তর্জনী , মধ্যমা, অনামিকা, কনিষ্ঠা আসন্ন অনিশ্চয়তায় সংকুচিত। বৃদ্ধাঙ্গুলি মাটির সঙ্গে সমান্তরাল। কপালের ভাঁজে বিন্দু বিন্দু ঘাম। দর্শক আসন থেকে আসা সমস্ত চিৎকার এখন তাঁর পায়ের কাছে শান্ত, অবনত,অপেক্ষমাণ। এবারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার খেলা।
এ সব দেখতে পাচ্ছি আমি। শুনতে পাচ্ছি অগণিত মানুষের প্রার্থনা। আমিই কি ম্যাক্সিমাস!? আমিই কি মার্সিফুল!? দেশ-কালের হিসেব ভুল হয়ে যাচ্ছে। জাপ্টে ধরছে ক্লাস এইটের সাদাকালো ইতিহাস বই। প্রচ্ছদে যে ছবির ওপর স্টিকার লাগিয়েছি, নাম রোল নাম্বার লিখে ফেলেছি যে সৌধের দেওয়ালে, সেই মুদ্রিত কলোসিয়াম আজ খুব জ্যান্ত হয়ে ঘিরে ধরেছে আমায়। দাঁড় করিয়ে দিয়েছে পাশবিক বিনোদনের এক নিস্তব্ধ রঙ্গমঞ্চে। পিন পড়লেও যেন শব্দ শোনা যাবে, এমনই নৈঃশব্দ এখন। সহপর্যটকদের অনেককেই কাঁদতে দেখছি। হয়তো এই নিস্তব্ধতার ওজন সামলাতে পারেন নি। 'ভয়ংকর সুন্দর' এই আপাত সরল শব্দবন্ধের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপের অভিজ্ঞতা খানিক এইরকমই।
কলোসিয়াম থেকে বেরিয়ে বড্ড দিশেহারা লাগছিলো। ঘুরে বেড়াচ্ছি তখন এ রাস্তা, সে রাস্তায়। ওসব রাস্তার দু'ধারে লম্বা লম্বা বাড়ি। কোনটা এক'শো, কোনটা দেড়'শো কোনটা আবার হাজার বছরের পুরোনো। বাড়ি ভর্তি লম্বা লম্বা জানলা। কোনটার বয়স এক হাজার, কোনটা দু'হাজার কোনটার আবার কয়েক লক্ষ বছর। আসলে জানলা দিয়ে সময় যতটা তাড়াতাড়ি পেরোয়, বাড়িগুলো তার সাথে তালমেলাতে পারেনা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখলে যদিও ওদের সমবয়েসী মনে হয়, কিন্তু ওই লম্বা দরজা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই অন্য হিসেব।
দরজা গুলোও কেমন যেন হিংসুটে। বাইরে থেকে ঢুকতে গেলে হাজার হ্যাপা। ঠিক চাবিটা বের করে আনতে হবে, ঠিক দিকে মোচড় দিতে হবে, ঠিক সময়ে ঠেলে ঢুকে পড়তে হবে অথচ ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার সময় কিন্তু কোনো জোরজুলুম নেই। রাস্তা থেকে দেখলে যদিও এই যাওয়া আসাও একই রকম।
আরও পড়ুন : কলকাতা কলিং / শ্রীময় ভট্টাচার্য
আসলে রাস্তা বিষয়টাই বড্ডো গোলমেলে। তফাৎ করতে জানেনা।