'সবুজ বিপ্লবের জনক'-কে নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায়
দেশকে খাদ্যের দিক থেকে স্বনির্ভর করে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। একশো ভাগ সাফল্যের সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছিলেন এম এস স্বামীনাথন (MS Swaminathan)। সবুজ বিপ্লব মডেল ভারতের কৃষিক্ষেত্রে এক মাইলস্টোন। সদ্য প্রয়াত হলেন সেই অভাবনীয় সাফল্যের নায়ক স্বামীনাথন।
স্বামীনাথনের জন্ম ১৯২৫ সালের ৭ অগস্ট, তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর জেলায়। ‘ইন্ডিয়ান অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (Indian Agricultural Research Institute) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি পান। দেশে ফিরে যুক্ত হন একাধিক গবেষণা সংস্থার সঙ্গে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চের প্রধান পরিচালকের দায়িত্ব বহন করেন। কর্মজীবন থেকে অবসরগ্রহণের পরেও দেশ-বিদেশের একাধিক পরিবেশগত এবং কৃষি সংক্রান্ত সংস্থায় পরামর্শদাতা কিংবা সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন তিনি।
ভারত সরকারের ‘সবুজ বিপ্লব’-এর পরিকল্পনায় যুক্ত হন স্বামীনাথন। কৃষিতে বিপ্লবের ধারণাটি এর আগে প্রয়োগ করেছিলেন আমেরিকান কৃষিবিজ্ঞানী নরম্যান বোরলগ (Norman Borlaug)। বোরলগের সহায়তায় স্বামীনাথন ভারতে সেই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। ভারতে স্বামীনাথনের নেতৃত্বে কৃষিক্ষেত্রে উন্নত সরঞ্জাম, উচ্চ ফলনশীল বীজ, কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে শুরু দেশের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে সবুজ বিপ্লব।
১৯৭১ সালে তিনি পেয়েছে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, যাকে বলা হয় এশিয়ার নোবেল। ১৯৮৭ সালে কৃষিক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য বিশ্বের প্রথম খাদ্য পুরস্কারের সম্মান অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালে ‘টাইম’ পত্রিকার বিচার অনুযায়ী তিনি এশিয়ার ২০ জন সবচেয়ে ‘প্রভাবশালী’ মানুষদের তালিকায় ছিলেন। এই তালিকার অন্য দু’জন ভারতীয় ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্মা গান্ধী। রাজনীতির জগতেও পা রেখেছিলেন। রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছিলেন দু’বার।
সব মিলিয়ে তাঁকে ভারতের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বলতে দ্বিধা হয় না। কিন্তু সবুজ বিপ্লবের বিষময় ফলকেও কি ভোলা যায়? উত্তরপ্রজন্মকে নানা দুরারোগ্য ব্যাধি উপহার দিয়েছে তো এই সবুজ বিপ্লবই। একটা সদ্য-স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে ছিল ঠিকই, কিন্তু এই উচ্চমাত্রায় সার প্রয়োগ বা উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহারের ভবিষ্যৎ স্বামীনাথনের মতো মেধাবী বিজ্ঞানী জানতেন না এমন নয়। তাৎক্ষণিক সাফল্যের জন্য তাঁকে অবহেলা করতে হয়েছিল সার্বিক জনস্বাস্থ্যের দিকটি? তাঁর মৃত্যুতে সারা দেশের শোকের পাশাপাশি সামনে চলে আসবেই এই প্রশ্ন।
#M. S. Swaminathan #Indian agronomist #agricultural scientist