প্ল্যাটফর্ম স্কুল
এর চেয়ে বড় লজ্জার বিষয় কমই আছে যে রেনেসাঁর এত বছর পেরিয়ে এসেও আজও আমরা শিক্ষাকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারিনি। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এখনও কয়েক কোটি শিশুর কাছে সামান্য সাক্ষরতাও অধরা। উল্কার গতিতে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির মধ্যে জায়গা করে নিতে উদ্যত ভারতেও ঢাক ঢোল পিটিয়ে পাশ করানো ‘সবার জন্য শিক্ষা’ বিলের বিষয়টা কেবল খাতায় কলমেই থেকে গেছে। অনেক শিশুকে এখনও শৈশবের চৌকাঠ না পেরোতেই রুজির টানে পথে নামতে হয়; কখনও স্বেচ্ছায়, কখনও বাধ্য হয়ে তারা স্কুল পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না বা পড়াশোনা শুরু করলেও মাঝপথে ছেড়ে দিতে হয়। তবে ব্যক্তিগত বা দলগত উদ্যোগে ভারতের নানা প্রান্তে এইরকম শিশুদের কাছে ন্যূনতম শিক্ষা-সংস্কার পৌঁছে দিতে তৎপর হয়েছেন কিছু মানুষ।
‘If the child cannot come to the school, then the school must come to the child.’- এই আপ্তবাক্যের বাস্তবায়ন হয়েছে ভুবনেশ্বর শহরে। প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে ভুবনেশ্বরের 'রুচিকা সোশ্যাল সার্ভিসেস অর্গানাইজেশন' নামক সংস্থা একটা উদ্যোগ শুরু করে। রেলস্টেশন বা সংলগ্ন অঞ্চলে যেসব শিশুরা কাজ করে, ভিক্ষা করে বা বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়িয়ে বিক্রি করে রোজগারের জন্য; তাদের মধ্যে ন্যূনতম শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে এই সংগঠন। ভুবনেশ্বর শহরের বিভিন্ন স্টেশনগুলোতে এইরকম শিশুদের চিহ্নিত করে তাদের প্রাথমিকভাবে সাক্ষর করে তোলা, বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের স্বনির্ভরতার দিকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ওই শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার ও প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থাও করেছে এই সংগঠন। ১৯৮৫ সালে ইন্দরজিৎ খুরানার উদ্যোগে এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয় ভুবনেশ্বর ও তার আশপাশের রেলস্টেশনগুলোতে। শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান তাদের সমস্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই সংগঠন চার হাজারেরও বেশি শিশুর কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে পেরেছে। 'রুচিকা সোশ্যাল সার্ভিসেস অর্গানাইজেশনের' এই কর্মকান্ড পরিচিত ‘The Platform School' নামে। এই প্রতিষ্ঠান এখনও তাদের এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে রীতিমতো সাফল্যের সাথে।
ভারতে সব মিলিয়ে এমন অল্টারনেটিভ স্কুলের সংখ্যা কিন্তু নেহাত কম নয়। মূলস্রোত এবং জাতীয় নীতি যেখানে শিক্ষা জিনিসটাকে ক্রমাগত উচ্চবিত্ত বা উচ্চ- মধ্যবিত্তের সেবাদাসীতে পরিণত করবার চেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানে এমন সব খবর আশার আলো দেখায়।
#ভালো খবর