একশো উনপঞ্চাশ
- ভালো লাগছে?
- অসাম!
- যাক বাবা! তোমার কিছু পছন্দ হওয়া...।
- ইনটিরিয়ারটা ভালো করে প্ল্যান করতে হবে। অঞ্জুকে বলব, বুঝলে?
- বোলো।
- রন, নিচে একটা ধোঁয়া দেখতে পাচ্ছি। কী হচ্ছে বলো তো?
- কোথায়?
- এদিকে এসো। ওই যে।
- মনে হচ্ছে রুটিন বম্বিং। চাপের কিছু নেই। বোসো।
- রুটিন বম্বিং! মানে?
- গরিব এলাকাগুলোয় বম্বিং করছে।
- ওমা! সে কী?
- আকাশ থেকে পড়ার কী আছে? এ তো ওপেন সিক্রেট।
- কারা করছে?
- কারা করছে মানে? এটা তো পলিসি। নিজেরা তো হাত গন্ধ করবে না। মিলিট্যান্ট অরগ্যানাইজেশনগুলোকে মোটা টাকা দেওয়া হচ্ছে। নো স্ট্রিং অ্যাটাচড।
- কিন্তু কেন?
- মানুষ কমানোর জন্য, আবার কেন?
- তা বলে বম্বিং?
- তা আর কীভাবে করবে? একসঙ্গে একটা লাম্পসাম অ্যামাউন্ট তো মারতে হবে। খুচরোখাচরা রাস্তা নিয়ে তো লাভ নেই। ভাইরাস প্যানডেমিক করানো যেত। কিন্তু তাতে রিস্ক অনেক। কত লোক মরবে সেটা হাতে থাকবে না। বেশি লোক মরে গেলে আবার চাপ। ব্যবসা চলবে কী করে? তাই এটাই বেস্ট ওয়ে। স্মুদ, স্লিক অ্যান্ড ওয়েল-ক্যালকুলেটেড।
- এ তো অমানুষিক!
- দেশের জনসংখ্যা এখন কত বলো তো! একশো আশি কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এবার তো আমাদের জল হাওয়ায় টান পড়বে। তা ছাড়া এদের গোরু ছাগলের মতো বাঁচিয়ে রেখে লাভটা কী? সবচেয়ে সস্তার খাবার জল এগারোশো পঞ্চাশ টাকা লিটার যাচ্ছে। সবচেয়ে ছোটো এবং সস্তার অক্সিজেন সিলিন্ডার যাচ্ছে তিন হাজার সাতশো সামথিং। এরপর অমানুষিক হওয়া ছাড়া উপায় আছে?
- তা বলে এভাবে?
- এটা অনেক সভ্য এবং অনেস্ট প্রসেস। এবং ব্যাপারটার মধ্যে একটা চমৎকার শিল্প আছে। থ্রি টিয়ার প্রসেস। প্রথমে উগ্রপন্থীরা বোম মারবে। তারপর মিডিয়া ধর্মের নামে ব্যাপারটা চালাবে। সবশেষে পুলিশের কাজ। হিন্দুপ্রধান এলাকা হলে কয়েকটা মুসলিমকে ঝুলিয়ে দাও, মুসলিমপ্রধান এলাকা হলে খানকতক হিন্দুকে। এটা যদি শিল্প না হয়, তাহলে শিল্প তুমি কাকে বলবে? শিল্পই আমাদের ভবিষ্যৎ, আমি বহু আগেই জানতাম।
- হাসছ? লজ্জা করছে না কথাটা বলতে? জেনোসাইডকে শিল্প বলছ?
- দুহাজার সাঁইত্রিশ সালে দাঁড়িয়ে এর চেয়ে মহান শিল্প তো কিছু চোখে পড়ছে না। প্রতি বছর এত লোক স্রেফ পানীয় জলের অভাবে পচা জল খেয়ে মারা যায়, সেটা বেটার লাগে তোমার?
- সেটা কাদের দোষ?
- না। সেটা আমাদের সবার দোষ। শুধু বিজনেস টাইকুনদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সেই দুহাজার দশ থেকে জলের ব্যবহার নিয়ে সাবধান করেছেন বিজ্ঞানীরা। কেউ কান দিয়েছে? আজকের এই অবস্থার জন্য কেউ দোষ এড়াতে পারবে না। কোনও জিনিস এতটা কমে গেলে বাজারের স্বাভাবিক নিয়মেই তার দাম বাড়বে। যারা অ্যাফোর্ড করতে পারবে না তারা পাবে না। অ্যাজ সিম্পল অ্যাজ দ্যাট। মানুষ পেচ্ছাব করে খাবে এমন দিনও আসছে। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।
- তাহলে গরিব মানুষ বাঁচবে না? দুনিয়ায় গরিব থাকবে না?
- গরিব একেবারে না থাকলেই বা দুনিয়া চলবে কী করে? গরিবই তো মুনাফা। তবে মাঝে মাঝে একটু কমিয়ে নিতে হবে। দ্যাখো, আমি পার্সোনালি হ্যাভ নটসদের প্রতি যথেষ্ট সিমপ্যাথেটিক। কিন্তু এটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই যে গরিবগুলোই কুকুরের মতো বাচ্চা পয়দা করে করে দুনিয়াটাকে এই অবস্থায় এনে ফেলেছে।
- এক্সকিউজ মি, এই লাস্ট কথাটায় আমি প্রোটেস্ট করছি। এই যে এখন ন্যাচারাল সবজি বলতে গেলে পাওয়াই যাচ্ছে না, আলু পেঁয়াজও ল্যাবে ফলছে, তারপর ধরো মিঃ লালওয়ানির ছত্রিশটা হিমঘর মিলিয়ে প্রতি সপ্তাহে তিন মিলিয়ন মেট্রিক টনের কাছাকাছি খাবার পচে নষ্ট হচ্ছে- এগুলোও কি গরিব মানুষের দোষ?
- তুমি আজকাল এত র্যাডিকাল কথাবার্তা বলছ কেন বলো দেখি।
- এটা আমার কথার উত্তর হল না। জাদুগোরায় আবার বিকলাঙ্গ শিশু জন্মাচ্ছে। সেটা কি ওই শিশুদেরই দোষ? না ওদের বাবা-মায়েদের দোষ? নাকি বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউরেনিয়াম মাইন কিনে নিয়ে যে আবার খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে তার দোষ?
- বাজে কথা বোলো না। ওখানে রেডিয়েশন লেভেল এখন অনেক কম। আর তার জন্য আমাদের কয়েক কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। লোকাল পিপলের যাতে ক্ষতি না হয় সেটাই দেখা হয়েছে। যা হয়েছে আইন বাঁচিয়ে হয়েছে।
- আইনকে দিয়ে যারা প্রতিদিন মুজরো করায়, তাদের আইনের কথা না বলাই ভালো।
- সমানে পার্সোনাল অ্যাটাক করে যাচ্ছ।
- তুমি গোটা একটা রাজ্যের সরকার পুষছ, তোমায় করব পার্সোনাল অ্যাটাক?
- শোনো, প্রগতি জিনিসটাই কিছুটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ। কিছু করার নেই। এই যে তুমি যেটা খাচ্ছ, ব্লাডি মারি, সেটা একটা ক্লাস। অ্যাট দ্য সেম টাইম, ইটস নেমড আফটার আ রুথলেস ডিকটেটর। এই যে একশো উনপঞ্চাশ তলার ফ্ল্যাটে বসে বসে শহর দেখছ, তার দাম কারা দিচ্ছে হে? দিচ্ছে জাদুগোরার ওই বিকলাঙ্গ বাচ্চাগুলো। যেসব গ্রামের শেষ জলের বিন্দুটুকু শুষে নিয়ে সান কোম্পানি এক-এক বোতল মিনারেল ওয়াটার বাজারে ছাড়ছে, সেখানকার লোকজন তোমার মাথার ওপরের সিলিং আর পায়ের তলার কার্পেটগুলোর দাম দিচ্ছে। কার কার কাছে তুমি কী কী ভাবে ঋণী, সে বৃত্তান্ত কি ডিটেলে জানো? জানো না। তাহলে এত সস্তা পিরিত কেন দেখাও মাইরি?
- আমি নাহয় জানি না। তুমি তো জেনেশুনেই সব করছ। তুমি তো একটা ক্রিমিনাল।
- সেটা বললে ভুল হয় না। তবে সত্যিটা হল, সিভিলাইজেশন ইটসেলফ ইজ দ্য বিগেস্ট ক্রিমিনাল। আমরা তার বেতনভুক কর্মচারী মাত্র।
- কী চমৎকার সাফাই!
- পিয়া, আমি গরিব ঘর থেকে অরিজিনেট করেছি। তোমার মতো সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি। আমাকে ধাপে ধাপে উঠতে হয়েছে। ফলে কতটা আটায় কটা রুটি হয়, সে আমায় শেখাতে হবে না। বরং তোমারই ও জ্ঞানটির কিঞ্চিৎ অভাব রয়েছে। তবে হ্যাঁ, এটা বলতে পারো জেনেও আমি শেষমেশ কাজের কাজ কিছু করতে পারিনি। রাদার, করিনি।
- স্বীকার করো তাহলে?
- অবশ্যই করি। আমি দারিদ্র্য থেকে যতদূরে সম্ভব পালাতে চেয়েছিলাম। চোখ-কান বুজে নিজের আখের গুছিয়েছি। তাই করতে গিয়ে কখন যে বাঘের পিঠে উঠে পড়েছি টের পাইনি। এখন আর বাঘ আমায় নামাবে না।
- তোমার ক্লান্ত লাগে না রন?
- খুব কম। নিজেকে যন্ত্রের মতো করে নিয়েছি।
- আমার লাগে।
- বুঝতে পারি। সেজন্যই টেলিকমটা তোমায় দেখতে বলেছিলাম। কাজে ব্যস্ত থাকলে ক্লান্তি বা মনখারাপের মতো জিনিস পালাবার পথ পায় না। তুমি রাজি হলে না।
- আমার বোধহয় ডিপ্রেশন আসছে।
- তোমার জায়গায় থাকলে ডিপ্রেশন না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। তোমার কিছু চাওয়ার নেই।
- কে বলেছে চাওয়ার নেই? আমার মাঝে মাঝে বাইরে যেতে ইচ্ছে করে। ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে। গল্প করতে ইচ্ছে করে।
- চাওয়ার নেই বলতে আমি ট্যানজিবল জিনিসপত্রের কথা বলছি।
- আজকাল বড্ড অস্থির লাগে। মনে হয় কী যেন নেই। কিন্তু কী যে নেই বুঝে উঠতে পারি না। সেদিন রিংকিদের কিটি পার্টিতে যাচ্ছিলাম। জ্যাম ছিল বলে একটা গলি দিয়ে শর্টকাট নিল। নোংরা ঘিঞ্জি গরিবদের বস্তি। প্রচণ্ড বৃষ্টি। তার মধ্যে দেখি একটা মাঠে ছেলেরা ফুটবল খেলছে।
- বলো কী! কলকাতায় এখনও মাঠ-ফাঠ পড়ে আছে?
- ওরে বাবা! খেলা মানে সে এক কাণ্ড। কাদায় মাখামাখি হয়ে সব ভূত। ধড়াম ধড়াম পড়ে যাচ্ছে। আবার উঠছে। সে কী হইহুল্লোড়! দেখে হঠাৎ মনটা কেমন যেন করে উঠল।
- সর্বনাশ। কাদা, চিৎকার-চ্যাঁচামেচির মতো সাবস্ট্যান্ডার্ড জিনিস দেখে তোমার মন কেমন করছে? সন্ন্যাস- টন্ন্যাস নেবে নাকি?
- আমার কী নেই রন, যা ওদের আছে?
- একটু ভডকা নেবে?
- না। ওঠো তো।
- কেন?
- আজ পায়ে হেঁটে ওল্ড কলকাতা ঘুরব, চলো।
- মানে?
- পায়ে হেঁটে ঘুরব।
- ফালতু হ্যাজ দিয়ো না।
- আমি সিরিয়াস।
- আচ্ছা শেষ কবে তুমি কলকাতার রাস্তায় পায়ে হেঁটেছ বলো দেখি।
- মনে নেই।
- অক্সিজেন ছাড়া তুমি পারবে বাইরের হাওয়ায় শ্বাস নিতে? একটা লোককে তোমার গায়ে গায়ে ঘুরতে হবে সিলিন্ডার নিয়ে। পায়ে হাঁটার আনন্দটা পাবে তো? ভেবে দ্যাখো।
- ধুর। যাই তাহলে প্যারিসে শপিং করে আসি।
- সেই ভালো। প্যারিসে শুনলাম ভালো পুঁইশাক পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক আঁটি নিয়ে এসো।
- আচ্ছা রন, ইলিনা কি আমার বন্ধু?
- ইলিনা? কেন বলো তো?
- আমার কি কোনও বন্ধু আছে?
- তুমিই ভালো বলতে পারবে।
- তোমার কি কোনও বন্ধু আছে?
- মালহোত্রা বোধহয় বেনিফিটের বাইরেও আমাকে একটু ভালোবাসে। বোধহয়।
- তুমি লাকি। আমি এরকম কারও নাম ভেবে পাই না। ভডকা দাও তো একটু। ব্যস ব্যস। আর না।
- তুমি আজ বড্ড এলোমেলো কথাবার্তা বলছ।
- কাল ব্যালকনিতে, ছোট একটা পাখি, নাম জানি না, গায়ে সবুজের ওপর লাল লাল ছোপ, আমার পায়ের কাছে এসে পড়ল। তুলে দেখলাম গায়ে কালো কালো কীসব বেরিয়েছে। পাখিটা প্রচণ্ড হাঁপাচ্ছিল। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। ফ্রেডরিখকে চেঁচিয়ে ডাকলাম। কিন্তু ফ্রেডরিখ আসার আগেই পাখিটা নেতিয়ে পড়ল। আমার হাতের ওপরেই মরে গেল।
- হ্যাঁ, পাখি-টাখি মরছে। এত্ত পলিউশন। সেইজন্যই তো বলছি। হাঁটার ইচ্ছে হলে ব্যালকনিতে হাঁটো না গিয়ে! রাস্তায় হাঁটার কী আছে?
- আমাদের কি ওদের জন্য ফাইট করা উচিত ছিল?
- একটু ক্যাভিয়ার নেবে?
- শাট আপ। তুমি আমার একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিচ্ছ না।
- যে লোক নিজের স্ত্রীর জন্মদিনে এরকম একটা ফ্ল্যাট গিফট করে, সে একটা পাখির হয়ে লড়ার শক্তি কোত্থেকে পাবে?
- তোমার এত টাকা, এত ক্ষমতা, তুমি কিছু পারো না করতে?
- পাখিটার জন্য লড়াই মানে তো এগুলোর এগেইনস্টেই তো লড়াই। এগুলো নিয়ে এগুলোর এগেইনস্টে কী করে লড়ি?
- একটা ট্রাস্ট তো অন্তত করতে পারো।
- বাঁচাতে পারব না। রুশ বিপ্লবের গর্ভ থেকেও স্তালিনের মতো রাক্ষস বেরিয়েছিল।
- আচ্ছা রন, তুমি দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখছ?
- এখন একটা রাজ্যের সরকার পুষছি। তখন গোটা দেশের সরকার পুষব।
- আচ্ছা, তুমি চাঁদে কতটা জমি কিনতে পারবে?
- মানে?
- বলো না।
- আম্বানি বা মিত্তলদের মতো কি পারব? তবে বেশ খানিকটাই পারব আশা করি।
- তাহলে এখনই বুক করে দাও।
- তুমি কি এইসব পাগলামি করবে বলে এখানে আসার বায়না করলে? দুটো ডিল পিছিয়ে দিয়ে এলাম আমি।
- ওসব ডিল-ফিল আমায় দেখিয়ো না। তুমি কথা দিয়েছিলে আজ আমার জন্য টাইম রাখবে।
- তাই তো রেখেছি। ফোন অবধি সুইচড অফ রেখেছি।
- এমন কিছু মাথা কিনে নাওনি। শোনো, চাঁদে জমিটা বুক করো। দশ বছর বাদে আমরা চাঁদে ছোট্ট একটা দোতলা বাড়ি বানিয়ে থাকতে শুরু করব আর চাষবাস করব।
- বেশ। আর?
- মেয়ের নাম রাখব লুনা, ছেলের নাম টিক।
- ওরে বাবা, দুটো?
- ইয়েস। আমার দুটোই চাই।
- কিন্তু তুমি যে বলেছিলে তোমার সন্তানকে এই পৃথিবীতে আনবে না?
- সেইজন্যই তো চাঁদে জমি বুক করতে বলছি। পৃথিবীকে তো তোমরা শেষ করে রেখেছ। হাসছ কেন তুমি?
- তুমি পারবে না।
- মানে? কী পারব না?
- আমাকে শুধু একটা কথা বলো, পিস্তলটা জোগাড় করলে কোত্থেকে? হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলে কেন?
- মানে?
- ইনফ্রারেড ক্যামেরায় হিট সিগনেচার দেখতে পাচ্ছি তো। বোসো বোসো। এসব তোমার দ্বারা হবে না।
- এর মধ্যে ক্যামেরা লাগিয়ে ফেলেছ?
- প্রি-ইন্সটলড। জাপানি জিনিস। একেবারে লেটেস্ট টেকনোলজি। আমি এসেই সিগনাল পেয়ে গেছি। শুধু সিসিটিভিকে ফাঁকি দিলেই হবে ম্যাডাম? বাপেরও তো বাপ থাকে। কী হল, তুমি চাপ নিচ্ছ কেন? বোসো বোসো। আরেকটু ভডকা নেবে?
- দাও।
- বড় কঠিন জীবন। নিজের বউকেও বিশ্বাস করা যায় না বুঝলে।
- তানা মেরো না। ওই ঝাল কুকিজটা দাও দেখি।
- হিয়ার ইউ আর। কী হল? চুপ মেরে গেলে যে? আরে বাবা, এত গিল্টি ফিলিং-এর কিছু নেই। পৃথিবীর প্রায় সব বউরাই মনে মনে বরকে খুন করতে চায়।
- কী করে বুঝলে আমি পারব না?
- তোমার ধানাইপানাই দেখে। আর তা ছাড়া তুমি তো আমার অনেক আগে থেকেই বাঘের পিঠে উঠে বসে আছ। তোমার নামা আরও কঠিন।
- তুমি কিন্তু এটা ভেবো না যে শুধু তোমাকে খুন করার জন্য পিস্তলটা এনেছি।
- কী বলতে চাইছ? আমাকে মেরে নিজেও সুইসাইড করতে?
- হ্যাঁ।
- কেন পিয়া?
- তোমায় রেখে মরতে ইচ্ছে করল না।
- ওরকম চোখ-মুখ করে বোলো না। বিশ্বাস করে ফেলতে ইচ্ছে করে।
- সত্যি বলছি। প্লিজ। বিলিভ মি।
- তুমি নিজেই বা কেন মরতে চাইছ?
- আমার কী আছে বাঁচার মতো? রাস্তার একটা আধপেটা খেয়ে থাকা ভিখিরি মেয়েও আমার চেয়ে সুখী। তবু যে মুহূর্তে ঠিক করছি মরব, কোত্থেকে যে একটা শিকল এসে পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে।
- তোমার ভোগের কোটা শেষ হয়নি পিয়া। আমারও হয়নি। বাঘ আমাদের নামতে দেবে না।
- কতদিন আমরা মিট করিনি রন?
- সাত-আটমাস হবে।
- ন-মাস তেরো দিন। আমি জানি তুমি বাইরে গিয়ে এসকর্ট নাও। তুমিও জানো আমিও এখানে নিই। কেন তোমায় টেনে একটা চড় মারিনি বলো তো? তুমিই বা কেন গলা টিপে ধরোনি আমার?
- অভিশাপ, পিয়া। আমরা যে যার সাধ্যমতো পৃথিবীকে নিংড়ে নিয়েছি শুধু। নেমকহারামদের পৃথিবী ক্ষমা করবে না। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হবে তাদের, যারা সব জেনেবুঝেও নিজের সাধ্যটুকু করেনি, শুধু অজুহাত খুঁজেছে। এটাই আমাদের ডেস্টিনি।
- অ্যাম অ্যাই নট অ্যাট্রাকটিভ? আমার কোমর দেখেছ? ফারজানার চেয়ে সরু কি না বলো? লুক অ্যাট মাই বাম। জেসমিন কাপুরও লজ্জা পাবে। ডোন্ট ইউ ফাইন্ড মি অ্যাট্রাকটিভ, রন?
- একটু শান্ত হয়ে বোসো।
- না। আমার কথার উত্তর দাও। সেদিন রাকেশ মেহরার পার্টিতে কৃষ্ণাজি কী বলছিলেন জানো? বলছিলেন, পিয়া আই এনভি ইয়োর অ্যাসেটস।
- অ্যাভোকাডো নেবে একটু?
- শাট আপ। আনসার মি। ডু ইউ লাভ মি?
- ইয়েস।
- মিথ্যে কথা। ইউ ডোন্ট লাভ মি। আই ডোন্ট লাভ ইউ ইদার। আমরা পরস্পরের অভ্যেস ছাড়া কিচ্ছু না।
- জাস্ট বিকজ উই ডোন্ট মিট অফেন?
- ওটা একটা সিগনাল। একটা মৃত সম্পর্কের সিগনাল।
- এই যে একটু আগে তুমি বললে আমাকে রেখে মরতে পারবে না, এটাও তবে অভ্যেস?
- হ্যাঁ।
- প্রত্যেকটা ট্যুর থেকে ফেরার সময় আমার কী মনে হয় জানো? বাড়ি ফিরছি বলে মনে হয় না। মনে হয় পিয়ার কাছে ফিরছি। এটা যদি অভ্যেস বলো অভ্যেস। এটুকু নিয়েই আমি বেঁচে আছি। না হলে আমারই বা কী আছে? শরীর শরীরের নিয়মে উপশম খোঁজে। প্রবল ক্লান্তির মাঝে তাকে আমি আটকাই না। কিন্তু কোনও মেয়ের বুকেই যে আমি তোমার গন্ধ পাই না, এটা কি কিছুই না? এটা নিয়েই তো তাও মাঝে মাঝে নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়াই। না হলে আর কী আছে আমার?
- মাঝে মাঝে নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কী ছেঁড়ো? বাঘটা তোমায় নামতে দেবে? দশ বছর পর তুমি দেশের সরকার পুষবে।
- ইয়েস। ডেস্টিনি।
- দীর্ঘশ্বাস কেন ফেলছ? তুমি একটা মিথ্যুক।
- তা হতে পারি। কিন্তু ডিল ইজ ডিল, অ্যান্ড দিল ইজ দিল। এটুকু আলাদা করতে পারছি এখনও। বুঝলে?
- না।
- ভেরি গুড। আর তুমি সেক্স নিয়ে এত বদার্ড কেন?
- তুমি নও?
- বিন্দুমাত্র না।
- জানোয়ার লোক। আমি কাদের সাথে শুয়েছি সেই নিয়ে তুমি বদারড নও?
- না নই। আমরা হচ্ছি একশো উনপঞ্চাশ। সেক্সের সঙ্গে আমাদের মনের কোনও সম্পর্ক আর অবশিষ্ট নেই। আমরা আমাদের যৌনতাকেও আস্তে আস্তে আউটসোর্স করে দিচ্ছি।*
- শুধু মিথ্যুক নও, তুমি পারভার্টেডও।
- বেশ।
- শোনো, খুব জোরে আঁকড়ে ধরো আমাকে। আমার শীত করছে।
- এবার ঠিক আছে?
- হুঁ। শোনো, তুমি একটা কালপ্রিট। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না। বাট আই লাভ ইউ।
- আই লাভ ইউ টু।
- লায়ার।
- শরীরকে আমি পাত্তা দিই না। ভয় সেদিন পাব যেদিন মন টলে যাবে। বুঝলে?
- না।
- ভেরি গুড। একটু স্পিনাচ নেবে?
- শাট আপ। আমার কথাটা শোনো।
- বলো।
- চাঁদে জমি কিনো না।
- তাহলে?
- এখানেই থাকব।
- সে কী? লুনা আর টিকের কী হবে?
- আনব না। নিজেদের হাতে যে পৃথিবীকে শেষ করেছি, তাতে নিজের সন্তানকে কী করে আনি?
- তাহলে আমরা থেকে কী করব?
- দেখব কী করে সবটা শেষ হয়। ওপর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব। ব্লাডি মারি খেতে খেতে।
….…………………………………
* দার্শনিক স্লাভোই জিজেকের একটি বিখ্যাত মন্তব্য।