আহা রে জীবন!!
সপ্তাহান্তে একদিন বাড়ি ফিরে এসে উঠোনে দাঁড়িয়ে কুয়োর জল নিয়ে চোখে মুখে ঝাপটা দিচ্ছিলন সুধারঞ্জন বাবু। পাশে গামছা হাতে দাঁড়িয়ে তাঁর বৌ। কপালে সিঁদুর, নাকে ফুল, হাতে শাঁখা। এই গামছা হাতে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য সে গোটা সপ্তাহ অপেক্ষা করে। মাটির দাওয়ায় পেতে দেয় আসন। বড়ো কাঁসার থালায় ভাত, চারপাশে অর্ধবৃত্তের মতো বাটিতে সাজানো পুঁইমিটুলির চচ্চড়ি, ভাজা মুগের ডাল, চিংড়ি দিয়ে পেঁপে-ডুমুরের ডালনা, ফুলকপি দিয়ে রুই এর ঝোল, জলপাই এর চাটনি। হাতপাখার হাওয়া দিতেও সুখ পায়। হাত টনটন করে ওঠে না। এক জীবনে আর কি চাই!! লক্ষীর ভাঁড়, মাটির উনুন, সুখী গৃহকোণে ফোঁড় তোলার মতো, সুঁচে রঙিন সুতো। উঠোনে নারকেল গাছের পাতায় রোদ নেমে আসে। কুয়োর জলে দড়ি বালতি ফেলে জীবন টেনে ওঠায় প্রতিদিন। ক্লান্তি নেই, চাওয়া নেই, পাওয়া নেই, শুধু আছে সপ্তাহান্তে জামার বোতাম সেলাই করে দেওয়ার মতো একটা আস্ত মানুষ। আছে সপ্তাহভর অপেক্ষা।
তার মতো সুখী আর ক' জনা?
আরও পড়ুন : দিন ও লিপি (পঞ্চম কিস্তি) / বিবস্বান দত্ত
মেলার মাঠের ভিড়ে হারিয়ে গেলে, তোমাকে কেউ খুঁজবে। জ্বরে চোখ ছলছল করলে, খবরের কাগজ টেবিলে ফেলে রেখে আলনা থেকে জামা টেনে বার করে চশমা না পরেই ওষুধের দোকানে ছুটবে। আবার রোদে ছাতা নিয়ে বেরোবার কথা মনে করিয়ে দেবে। এক জীবনে এর চেয়ে বেশি আর কি চাই?
আঁকড়ে ধরার মতো আর একটা জীবন ।
কুয়ো থেকে জল ওঠানোর মতো দড়ি-বালতির যুগলবন্দি ।
[অলংকরণ : ঐন্দ্রিলা চন্দ্র]
#গদ্য #Discourse #তানিয়া #সিলি পয়েন্ট #ঐন্দ্রিলা চন্দ্র