খেলা

স্মৃতির রিজার্ভ বেঞ্চ (তৃতীয় কিস্তি) : ব্রজেন দাস

অলর্ক বড়াল Aug 2, 2020 at 3:58 am খেলা

আধুনিক দুনিয়ায় খেলা বরাবরই সবচেয়ে গ্ল্যামারাস জিনিসগুলোর একটা। সব খেলা নয় অবশ্যই। এ দুনিয়ায় কোনও কোনও খেলা ধর্মের সমার্থক হয়ে যায়, আর কোনও কোনও খেলার কুশীলবেরা স্বীকৃতি না পেয়েই চলে যান - চুপিচুপি, একা একা। তবে স্মৃতি জিনিসটা বড় প্রতারক। আজকের গ্ল্যামার নিমেষে ফিকে হয়ে যায় আগামীর ধুলো পড়ে। একটু পুরোনো হয়ে গেলেই প্রায় সব স্মৃতি এক পংক্তিতে বসে যায়। ভুস করে তাদের মুখে ধোঁয়া ছেড়ে এগিয়ে যায় আমাদের বাস। স্মৃতি খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে রিনিউ করতে করতে ডিলিট করতে থাকে পুরোনো জিনিসপত্র। এই তথ্যবিপ্লবের যুগে কিছুদিন আগের ঘটনাই যেন মনে হয় কত শতাব্দী পিছনে ফেলে আসা - সেপিয়া টোনে ছোপানো মনকেমন। বেহালার আগেও তো অনেক গর্ব করার মতো গল্প ছিল বাঙালির খেলায়। পঙ্কজ রায়েরও আগে ছিল কিছু গল্প। এমনকী কিছু গল্প ছিল সেই সাদা- কালো যুগের গোবরবাবুরও আগে। আমরা খবর রাখি না। কেমন হয় যদি ধুলো- টুলো ঝেড়ে তুলে আনা যায় পুরোনো দিনের এমন কয়েকজন বিস্মৃতপ্রায় ক্রীড়াব্যক্তিত্বের গল্প? সিলি পয়েন্টের এই নতুন সিরিজে সেই চেষ্টাই ধরা থাকল, খেলা-প্রেমীদের জন্য। আজ তৃতীয় কিস্তিতে সাঁতারু ব্রজেন দাস।

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯৫০-৬০ এর দশকে বহু বাঙালি সাঁতারু বিশ্বমঞ্চে দুর্দান্ত কীর্তি স্থাপন করেছিলেন, এঁদের মধ্যে মিহির সেন, আরতি সাহার নাম সর্বজনবিদিত। এঁদের পাশাপাশি অধুনা পূর্ব পাকিস্তানের বিক্রমপুরের ব্রজেন দাসও জলে নেমে অভাবনীয় কিছু কীর্তি গড়ে গেছেন। তিনিই প্রথম এশীয় ব্যক্তিত্ব যিনি সাঁতরে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়েছিলেন।

কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের গ্র্যাজুয়েট ব্রজেন দাস কিশোর বয়স থেকেই বুড়িগঙ্গা নদীতে সাঁতরে অভ্যস্ত। তাঁরই উদ্যোগে ১৯৫৩ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ক্রীড়ানিয়ামক সংস্থা ঢাকা শহরে বার্ষিক সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তিনি একটানা এই প্রতিযোগিতার ১০০, ২০০, ৪০০ ও ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইল বিভাগে জয়ী হন। ১৯৫৮-এ তিনি ‘বিলি বাটলিন ইংলিশ চ্যানেল সুইমিং কম্পিটিশন’-এ আমন্ত্রিত হন। এর ঠিক একমাস আগেই তিনি ইতালির ক্যাপরি দ্বীপ থেকে নেপলস্‌ পর্যন্ত তেত্রিশ কিলোমিটারব্যাপী লং ডিস্টেন্স প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।

১৯৫৮-এর ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় ব্রজেনবাবু পুরুষ প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম হন। ইংলিশ চ্যানেল তাঁর মুকুটে একটি অসাধারণ পালক যুক্ত করেছিল। তিনিই প্রথম সাঁতারু যিনি মোট ছয়বার (১৯৫৮-১৯৬১) ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছেন। ১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর ষষ্ঠ ইংলিশ চ্যানেল প্রতিযোগিতায় মাত্র দশ ঘন্টা পঁয়ত্রিশ মিনিট সময়ে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করার নজির তিনি স্থাপন করেন।

সারাজীবনে ব্রজেন দাস অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত ‘প্রাইড অফ পারফরমেন্স’ পুরস্কার ও ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ (মরণোত্তর)। এছাড়া ১৯৬৫ সালে তাঁর নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল ম্যারাথন সুইমিং হল অফ ফেম’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮৬-তে ‘চ্যানেল সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন অফ দ্য ইউনাইটেড কিংডম’ তাঁকে ‘লেটোনা ট্রফি’ ও ‘কিং অফ দ্য চ্যানেল’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।



[কভার পোস্টার ডিজাইন : অর্পণ দাস]

#নিবন্ধ #নিবন্ধ সিরিজ #খেলা #বিস্মৃত বাঙালি খেলোয়াড়

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

20

Unique Visitors

214982