গন্ধ কতটা প্রভাব ফেলে আমাদের কেনাকাটায়?
সুগন্ধ বিষয়টা সবারই ভালো লাগে। কিন্তু গন্ধের তারতম্য কি সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে আমাদের কেনাকাটায়? এর উত্তরে আধুনিক মনোবিজ্ঞান কিন্তু বেশ মজাদার কিছু তথ্য তুলে ধরছে।
উপভোক্তা-আচরণ বা Consumer Behavior-এর বিশ্লেষণ আজকের পুঁজিনির্ভর সভ্যতায় একটি অপরিহার্য বিষয়। ছোট-বড় সমস্ত কোম্পানি নিজের নিজের মতো করে এই বিষয়টিকে বুঝতে চায়, এর পিছনে খরচ করে প্রচুর টাকা। এই বিষয়ের ওপর নির্ভর করেই সাজানো হয় ব্যবসায়িক কৌশল বা বিজ্ঞাপনের প্যাঁচপয়জার।
গন্ধ যে আরও অনেক কিছুর মতো আমাদের কেনাকাটাকেও প্রভাবিত করে, এমন একটা কথা গত তিরিশ বছর ধরেই কিছু বিজ্ঞানী বলে আসছেন। সে কথার প্রমাণও পাওয়া গেছে। ১৯৯০ সালে বিখ্যাত জুতো-প্রস্তুতকারক সংস্থা নাইকি-র একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, পাশাপাশি দুটি ঘরের মধ্যে যে-ঘরে সুগন্ধ ছিল, সেখানের ক্রেতাদের মধ্যে ক্রয়প্রবণতা ছিল ৮৪ শতাংশ বেশি। অন্য ঘরটিতে ছিল সাধারণ গন্ধ। তবে নিছক সুগন্ধ থাকলেই যে ক্রেতা আরও বেশি করে ফুরফুরে অনুভব করে বেশি বেশি জিনিস কিনে ফেলবেন, ব্যাপারটা এত সহজ-সরল নয় কিন্তু। তাহলে এই নিয়ে এত গবেষণার দরকারই পড়ত না। একেবারে সাম্প্রতিক সময়ে এমনই একটি সমীক্ষা করেছিল এক নামী রেস্টুরেন্ট। তাঁদের দুটি ঘরের একটিতে ল্যাভেনডারের গন্ধ ছিল, আরেকটিতে ছিল লেবুর সুগন্ধ। ল্যাভেনডারের গন্ধওয়ালা ঘরে উপভোক্তারা বেশিক্ষণ সময় কাটাচ্ছেন, যার ফলে খাবার ও পানীয় অর্ডারও হচ্ছে বেশি। দেখা গেছে ভ্যানিলা, ল্যাভেনডার, দারচিনি জাতীয় জিনিসের গন্ধ সবসময়ই ক্রেতার মনে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।
ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরিক স্প্যাজেনবারগ (Eric Spangenberg)মনে করেন, ব্র্যান্ড তৈরিতে মস্ত ভূমিকা নেয় গন্ধ। ব্র্যান্ডের মূল্য ৩০ শতাংশ অবধি বাড়াতে পারে গন্ধ। হোটেল হোক বা রেস্তোরাঁ, আসবাবের দোকান হোক বা বাথরুম-সামগ্রীর শো রুম, একেকটি ব্র্যান্ড ক্রেতাদের কাছে অনন্য হয়ে উঠতে পারে তাঁদের গন্ধ-ব্যবহারের কারণেই। বড় বড় হোটেল চেইনগুলি পরীক্ষামূলকভাবে তাঁদের রিসেপশন, ঘর, বাথরুম, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি জায়গায় আলাদা আলাদা সুগন্ধও ব্যবহার করেন যাতে উপভোক্তাদের সন্তুষ্টিবিধান করা যায়। স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মারিয়ানো আলকানিজ (Mariano Alcañiz) ও তাঁর সহকর্মীরা আবার দাবি করছেন মানুষের শরীরের গন্ধও প্রভাব ফেলে অন্যান্যদের ব্যয়ে। আসলে গন্ধ বিষয়টা অনেকসময় আমাদের অনুভবের নানা জটিল স্তরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়ে খুঁড়ে বের করে আনে অনেক পুরনো স্মৃতি, কিংবা উস্কে দেয় কিছু আবেগ। মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে ঘ্রাণজ তথ্য নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষমতা। স্নায়ুবিজ্ঞানের এ-এক চমৎকার দিক। এই নিয়ে আরও আরও গবেষণা হচ্ছে। গন্ধের মধ্যে বিপুল ক্ষমতার খোঁজ যখন পাওয়া যাচ্ছে, পুঁজি তো বিষয়টা নেড়েচেড়ে দেখবেই।
......................
ঋণ : bigthink.com