গোরা (২) : হাসি, ঠাট্টা, গোয়েন্দাগিরি
বাংলা ওটিটি প্লাটফর্ম 'হইচই'-এ সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে জয়দীপ মুখার্জীর থ্রিলার ওয়েব সিরিজ 'গোরা - সিজন ২'। আপাদমস্তক হাসি, ঠাট্টা, মজায় ভরা এই সিরিজ গুরুগম্ভীর আর পাঁচটা থ্রিলার থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। ফেলুদার মতো চৌখস চেহারার গোয়েন্দা এখানে পাবেন না, যাঁর পকেটে রিভালভার গোঁজা। খুঁজে পাওয়া যাবে না ব্যোমকেশের মতো সত্যান্বেষীকেও। কিছুটা ক্ষ্যাপা, অহরহ লোকজনের নাম ভুলে যাওয়া গোরা সেন (ঋত্বিক চক্রবর্তী) এই সিরিজের প্রধান চরিত্র। এই গোরাবাবু ইন্সপেক্টর সরখেল (অভিজিৎ গুহ)-কে কখনও ডাকেন 'মক্কেল', আবার কখনো 'সাইকেল'।
এহেন 'সিরিয়াল কিলার স্পেশালিষ্ট' অবশ্য ভুলেও ভোলেন না কোনো বিশেষ মুহূর্তের চিত্রপট। বোন কঙ্কার (অনন্যা সেন) প্রেমিক এবং গোরার একমাত্র সঙ্গী, সারথি (সুহোত্র মুখোপাধ্যায়) প্রথম সিজনের মতো সাবলীল। বরং একটু বেশীই সপ্রতিভ বলা যায় তাঁকে। পরপর কয়েকটা বাচ্চা মেয়ের রহস্যজনক মৃত্যুকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে সিরিজটি। তাদের ভিতরে মিত্র বাড়ির দুটি শিশুও আছে, যাঁরা ড্রেমেডি নামক নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পেয়েও পরে রক্তবমি হয়ে মারা যায়। কদিনের মধ্যেই সিঁড়িতে পা হড়কে মারা যান ঐ নার্সিং হোমের তিন কর্মীও। কেন? যাঁরা সিরিজটি দেখেননি, স্পয়েলার দিয়ে তাঁদের মজা নষ্ট করব না। গোরার বিয়ে বিভ্রাট দিয়ে শুরু হওয়া এই সিজনের প্রথম কয়েকটা পর্বে রহস্য খুব একটা ঘনীভূত না হলেও তাঁর কান্ডকারখানা, বাড়ির আয়ার (মানালি দে) সঙ্গে সর্বক্ষণিক খিটিমিটি, ইন্সপেক্টর সরকেলের রসিকতা, আর সারথির নির্ভেজাল মজা দেখতে দেখতে দিব্বি কেটে যাবে। হাসি, ঠাট্টায় সময় পার করতে করতে কয়েকটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে পারে - মিত্র বাড়ির এক বৌমা কিভাবে মারা গেলেন? নার্সিং হোমের কর্মীদের বা অন্যান্য মৃত্যুগুলোর কি ময়না তদন্ত হয়েছিল?
প্রথম সিজন থেকেই গোরার চরিত্রে ঋত্বিক চক্রবর্তী অনবদ্য। কিন্ত এই সিজনে এসে যেনো নাম ভুলে যাওয়া, থুড়ি, বদলে দেওয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটা কিছুটা বেমানান লাগে। নির্মাতা জোর করে না হাসালেই পারতেন কিছু জায়গায়। ‘স্ল্যাপস্টিক’ জাতীয় কমেডি নির্মাণ করাও কম মুন্সিয়ানার কথা নয়। সেদিক থেকে দেখলে এই সিরিজটিকে উঁচুমানের কাজ বলা যাবে না মোটেই। তবে খুঁতখুঁতে মন সরিয়ে রেখে দেখতে বসলে বেশ লাগবে। ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ ছবিতে সিল্কের চরিত্রে বিদ্যা বালনের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে করা যাক - "এদেশে সিনেমা তিনটি জিনিসের জন্যেই চলে - এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট.."। সাহানা দত্তর গল্পের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই থ্রিলার সিরিজে সেই জিনিসটি প্রভূত পরিমাণেই রয়েছে।