ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম 'পিছরেবর্গ' অভিনেত্রী : পি.কে. রোজি-কে ডুডলে স্মরণ গুগলের
মালয়ালি ছবির প্রথম অভিনেত্রী হিসেবে তাঁকেই গণ্য করা হয়। কিন্তু তাঁর অভিনয়ে আসার সামাজিক-রাজনৈতিক তাৎপর্য অন্যত্র। আমাদের ভারত যাঁদের 'অস্পৃশ্য' বলে দাগিয়ে দিয়ে এসেছে, তিনি জন্মসূত্রে ছিলেন সেই সমাজের। একে মহিলা, তায় দলিত - ফলে সহজেই অনুমেয় যে তাঁর সেলুলয়েড এন্ট্রি কতটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। সমাজের উচ্চবর্গের রোষে রাজ্যছাড়া হতে হয়েছিল তাঁকে। আজ ১০ ফেব্রুয়ারি, রোজির ১২০ তম জন্মবার্ষিকীতে গুগল তাঁকে স্মরণ করছে বিশেষ ডুডলের মাধ্যমে।
রোজির আসল নাম ছিল রাজাম্মা। জন্ম ১৯০৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, ত্রিবান্দ্রমে। তিনি পুলায়া সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন, কর্ণাটকে যে সম্প্রদায়কে শিডিউলড কাস্ট হিসেবে ধরা হত। রোজি ধ্রুপদী নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন। তামিল লোকনাট্যের একটি বিশিষ্ট রূপ কাকিরাসি (Kakkirasi)-তে তালিম ছিল তাঁর। সেখান থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। কিন্তু ভদ্র ঘরের মহিলাদের জন্য অভিনয় তখনও নিষিদ্ধ। তাঁরা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। সে কারণেই তাঁর নাম পরিবর্তিত হয়েছিল। ১৯২৮ সালে প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক জে.সি. ড্যানিয়েল (J. C. Daniel) তাঁকে বেছে নেন নিজের একটি ছবির মুখ্য নায়িকা হিসেবে। ড্যানিয়েলের Vigathakumaran (The Lost Child) ছবিতে রোজি অভিনয় করেন সরোজিনী নামের একটি চরিত্রে। চরিত্রটি ছিল নায়ার পদবীর, অর্থাৎ তথাকথিত উচ্চবর্গের। কর্ণাটকের সে সময়ের গোঁড়া বর্ণহিন্দু সমাজ উত্তাল হয়ে উঠেছিল এই ঘটনায়। একজন 'দলিত' মহিলা হয়ে নায়ারের চরিত্রে অভিনয় করাটাকে অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছিল সমাজের মাথারা। শোনা যায়, রোজির বাড়ি নাকি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। রোজি কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়ে একটি ট্রাকে করে তামিলনাড়ু পালান। কেশবন পিল্লাই নামে সেই ট্রাক-ড্রাইভারের সঙ্গেই তিনি বাকি জীবনটা কাটিয়েছিলেন। রুপোলি পর্দার সঙ্গে আর কোনও সংস্রব রাখেননি।
আমাদের স্মৃতি থেকে কার্যত হারিয়েই গেছিলেন এই অভিনেত্রী। ২০১৩ সালে জে.সি. ড্যানিয়েলের জীবনীভিত্তিক একটি ছবিতে তাঁর চরিত্রটিকেও গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালে মালয়ালম ফিল্ম দুনিয়ার এক মহিলা সংগঠন Women in Cinema Collective (WCC) পি.কে. রোজি-র নামে একটি ফিল্ম সোসাইটি তৈরি করার ঘোষণা করেন। আর গুগলের সৌজন্যে আজ আবারও সবার মনোযোগ আকর্ষণ করল তাঁর কাহিনি।
জাত-পাতের ভেদাভেদ আমাদের উপমহাদেশে আবহমান এক অভিশাপ। এই অভিশাপের শিকার হয়েছিলেন পি.কে. রোজি।
সেলুলয়েডকে তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আগুন জ্বলবে জেনেও তিনি যে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি, এই সাহসটুকুর জন্যই রোজিকে আমরা মনে রাখব। শুধু অভিনেত্রী হিসেবে নয়, জাত-পাতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক জ্বলন্ত প্রতীক হিসেবেও। গুগলের তরফ থেকে সঙ্গত কারণেই লেখা হয়েছে "Thank you for your courage and the legacy you leave behind, PK Rosy"।
..................