পরিবেশ ও প্রাণচক্র

গাছের গায়ে যথেচ্ছ পেরেক আর ব্যানার : ক্ষত সারাচ্ছেন ওয়াহিদ সরদার

টিম সিলি পয়েন্ট May 19, 2021 at 4:22 am পরিবেশ ও প্রাণচক্র

গাছেরও যে প্রাণ আছে, এ কথা আমাদের বেশিরভাগের কাছে একটা শুকনো নীরস তথ্যের চেয়ে বেশি কিছু নয়। কার্যক্ষেত্রে এ কথা আমাদের অনেকেরই মনে থাকে না। তাই কারণে-অকারণে গাছের গায়ে পেরেক মেরে ব্যানার বা বিজ্ঞাপনের বোর্ড লাগানো চলতে থাকে। এরকম দৃশ্য ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র দেখা যায় অথচ যাতায়াতের পথে চোখে পড়লেও আমরা এ নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করি না। কিন্তু এই সামাজিক কু-অভ্যেস বাংলাদেশের যশোর জেলার ওয়াহিদ সরদারকে ভাবিয়েছে। গাছের ক্ষত নিরাময়ে নিজেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন পেশায় রাজমিস্ত্রী, নেশায় গাছ-পাগল এই ভদ্রলোক। ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে তিনি এই কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। যশোর, ঝিনাইদহ ও খুলনার বিভিন্ন রাস্তার ধারে থাকা গাছের গা থেকে পেরেক আর বোর্ড অপসারণ শুরু করেন এবং মাত্র চার মাসের মধ্যে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন রাস্তার গাছ থেকে ১২৭ কেজি পেরেক তুলে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেন।

আর্থিক অনটনের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোতে পারেননি। বেছে নিয়েছিলেন রাজমিস্ত্রীর পেশা। কিন্তু গাছগাছালি বরাবর তাঁর প্রাণ। ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত বৃক্ষরোপণের কাজ করে আসছেন। ২০১৮ সালে ‘বিবিসি বাংলা’-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ওয়াহিদ বলেন, "গাছকে আমি খুব ভালোবাসি। বিজ্ঞান বলছে গাছের জীবন আছে, যেহেতু জীবন আছে তার মানে তার যন্ত্রণা, ব্যাথা আছে। আজ চারপাশে দেখছি গাছ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, গাছ মারা যাচ্ছে তারকাঁটা বা পেরেকের আঘাতে। এ কারণে আমি এ কাজটি করছি।" গাছের গায়ে নির্বিচারে পেরেক মারা এবং পোষ্টার বিলবোর্ড লাগানো যেভাবে আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে, ওয়াহিদ তার দায় চাপিয়েছেন সমাজের শিক্ষিত এবং উচ্চশ্রেণির ওপর। তাঁর কথায়, "যারা এসব করছে তারা সব শিক্ষিত, পয়সাওয়ালা। তাই পেরেক তুলতে গিয়ে অনেক সময় আমাকে প্রতিরোধ, হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। কারণ তাদের বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা আমি সরিয়ে ফেলছি।” কোনও কটূক্তি বা হুমকিই ওয়াহিদকে থামাতে পারেনি। অনেকে বাঁকা প্রশ্ন ছুঁড়েছেন যে এই কাজ করে তাঁর লাভ কী হচ্ছে, কিংবা কত বেতন পাচ্ছেন তিনি। কেউই বিশ্বাস করতে চান না যে ওয়াহিদের এই কাজ সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম। ওয়াহিদের কথায়, "অনেকে প্রশ্ন করে পেরেকগুলো কী করি? যদি বলি সংরক্ষণ করি, তারা বলে, না আপনি বিক্রি করেন, এখানে তো অনেক পয়সা আছে। অর্থাৎ তারা আমাকে বিশ্বাস করে না। একটা মানুষ এমন কাজ করতে পারে তা কেউ বিশ্বাস করে না। আপনি ভালো কাজ করলে এমন সমালোচনার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। " এমনকি ওয়াহিদের নিজের পরিবারও প্রথমদিকে তাঁর এই ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’-কে সমর্থন করেনি। পরে যখন আত্মীয়-পরিজন বুঝেছেন যে গাছকে ভালোবেসে এই স্বেচ্ছাশ্রম আসলে ওয়াহিদের অস্তিত্বের সমার্থক, তখন আর অসহযোগিতা করেননি। গাছবন্ধু ওয়াহিদ সরদারের থেমে যাবার কোনও পরিকল্পনা নেই। আড়াই বছর পেরিয়ে নিজের কাজের সীমানা ক্রমশ বাড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর কাছে এ এক পবিত্র যুদ্ধ। গাছের গায়ে বিজ্ঞাপনের বোর্ড লাগানোর প্রথার বিরুদ্ধে, বলা ভালো আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের এক ন্যক্কারজনক মানসিকতার বিরুদ্ধে তাঁর এ ধর্মযুদ্ধ চলবে।

আরও পড়ুন : পরিবেশকর্মী কিঙ্করী দেবী: দুন উপত্যকার ‘ঝাঁসি কি রানি’ / সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়

...................................

[তথ্যসূত্র - বিবিসি নিউজ, বাংলা]

#সিলি পয়েন্ট #Web Portal #Environment #Tree #Wahid Sardar #ওয়াহিদ সরদার #পরিবেশ #গাছ #টিম সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

18

Unique Visitors

219122