জানেন কীভাবে সময়ের সঙ্গে বদলেছে ক্যাডবেরি ডেয়ারি মিল্ক চকলেটের মোড়ক?
ফটোকপি আর জেরক্স যেমন আজ সমার্থক, তেমনই সমার্থক ক্যাডবেরি আর চকলেট। অনেকেই যেমন জানেন না যে জেরক্স একটি কোম্পানির নাম মাত্র, তেমনই অনেকের এ কথাও খেয়াল থাকে না যে ক্যাডবেরি ছাড়া অন্যান্য কোম্পানির চকলেটও আছে এই ধরাধামে। প্রায় আড়াই শতক ধরে বিশ্বজুড়ে এমনই উন্মাদনা ক্যাডবেরির চকলেটকে নিয়ে। ১৮২৪ সালে বার্মিংহ্যামে চা, কফির পাশাপাশি পানীয় চকলেট দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন এই কোম্পানির আদিপুরুষ জন ক্যাডবেরি। দুধের সঙ্গে কোকো বীন, কোকো পাউডার নিয়ে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা করতে করতে তিনি মিল্ক চকলেটের নানা রকমফের তৈরির চেষ্টা করছিলেন। তবে কোম্পানির উন্নতি হয় জনের দুই ছেলে রিচার্ড আর জর্জের হাত ধরে। ১৯০৫ সালে ক্যাডবেরি কোম্পানি লঞ্চ করে ডেয়ারি মিল্ক বার। বাকিটা ইতিহাস। খুব কম সময়ের মধ্যেই আট থেকে আশি সকলের প্রিয় হয়ে ওঠা এই চকলেট বারের সঙ্গে জনপ্রিয়তায় আজও পাল্লা দিতে পারবে না গোটা দুনিয়ার আর কোনও কনফেকশনারি। একটা দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র চকলেটের বাজারে যে সেভাবে কঠিন কোনও প্রতিযোগিতা তৈরিই হয়নি, তার অনেকটা কৃতিত্ব এই একটি প্রোডাক্ট দাবি করতে পারে। ডেয়ারি মিল্ক প্রায় একার দায়িত্বে ক্যাডবেরি কোম্পানিকে এনে দিয়েছে নিশ্চিন্ত নিরঙ্কুশ আধিপত্য।
একেবারে শুরুতে ডেয়ারি মিল্ক চকলেট বিক্রি হত মোড়কহীন বড় মাপের ব্লক হিসেবে। অবশ্য তার মধ্যে চৌকো ছোটোমাপের ব্লক কাটা থাকত, যাতে সুবিধামতো ভেঙে নেওয়া যায়। তবে দ্রুতই মাপ ছোটো করে তাকে মোড়কবন্দী করা হল। প্রথম মোড়কে হালকা মভ রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর লাল অক্ষরে নাম লেখা হল। পরবর্তী মোড়ক থেকেই চলে এল বেগুনি রং, তার ওপর সোনালি ক্যালিগ্রাফি। মোটের ওপর এই রঙের ধাঁচই স্থায়ী হয়ে গেল ডেয়ারি মিল্কের মোড়কে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, ধীরে ধীরে বেগুনি রং গাঢ় হয়েছে। ‘ক্যাডবেরি’জ’ কথাটা সোনালি অক্ষরেই থেকে গেছে। ‘ডেয়ারি মিল্ক’ শব্দবন্ধ বহুদিন পর্যন্ত সোনালি জমির ওপর বেগুনি রঙে ছিল।
চকলেটের রাংতার সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই আমাদের অনেকের অনেক নস্টালজিয়া জড়িয়ে ছিল। সেই রূপকথা শেষ হলেও ডেয়ারি মিল্কের কৌলীন্য কোনওভাবে কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব নেই। কিন্তু ক্যাডবেরির এই একটি সৃষ্টির জয়যাত্রা অব্যাহত। সভ্যতার ইতিহাসে এমন কালজয়ী জিনিস আর কটাই বা আছে।