ইতিহাসের সংকট – কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আমরা যা কিছু শিখতে পারি
(The following prose has been translated from the original article “History in a crisis – Lessons for Covid-19” penned by Dr. David S. Jones and published in the New England Journal of Medicine. Dr Jones has long been a faculty at the Department of Global Health and Social Medicine, Harvard Medical School, Boston, and the Department of the History of Science, Harvard University, Cambridge, MA) This translation is an individual effort of this portal and NEJM did not participate in this process.
নিত্যনতুন অ্যান্টিবায়োটিক এবং রোগ প্রতিরোধের হরেক উপায়ের আবিষ্কারে বিজ্ঞানের অগ্রগতি যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ১৯৭২ সালের এক প্রবন্ধে, খ্যাতনামা অণুজীব বিশারদ ম্যাকফারলেন বার্নেট ও ডেভিড হোয়াইট মন্তব্য করেন, “আগামী পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে একটাই মাত্র পূর্বাভাস দেওয়া যায়, তাদের ভবিষ্যৎ বেশ সাদামাটা - বেশ ম্যাড়ম্যাড়ে”। যদিও তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন, নতুন কোন ভয়াবহ রোগের আকস্মিক আবির্ভাবের সম্ভাবনা খাতায়-কলমে উড়িয়ে দেওয়া যায়না, তবে কিনা “বিগত ৫০ বছরে এমন কিছু ঘটেনি”। অজানা মহামারী যেন বিজ্ঞানের নয়, ইতিহাসের বিষয় হয়ে গেছিল।
সময় পাল্টেছে। সেই সঙ্গে পাল্টেছে রোগের ধরন। সত্তর দশকের হার্পিস, লেজিওনেলা নিউমোনিয়া (ব্যাক্টেরিয়া বাহিত) থেকে এইডস্, ইবোলা, সার্স এবং সাম্প্রতিক কোভিড-১৯, সংক্রামক ব্যাধি মানবসভ্যতাকে ক্রমান্বয়ে চোখ রাঙিয়েই চলেছে। আজ তাই সেই মহামারীর ইতিহাসের দিকেই ফিরে তাকানোর পালা।
অতীতের বিশ্লেষণ করতে বসে ইতিহাসবিদের কাছে সেই সময়ের স্থানীয় প্রাসঙ্গিকতা অপরিসীম। কীভাবে হল, কেন হল – সব প্রশ্নের উত্তরে তাঁদের নজর থাকে আঞ্চলিক ঘটনাপ্রবাহের উপর। কিন্তু অতিমারী সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গী এর উল্টো – স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে মানবসমাজ কীভাবে অতিমারীর মোকাবিলা করেছে, সেইটিই মুখ্য। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা চার্লস রোজেনবার্গ সংক্রমণের গতিপ্রকৃতির আদিরূপটি বোঝার জন্য আলব্যেয়ার কামুর La Peste-এর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তাঁর মতে, নাগরিক সমাজের উপর মহামারীর প্রভাব অনেকটা তিন অঙ্কের নাটকের মতো। প্রাথমিক পর্যায়ে ইঙ্গিতগুলি সূক্ষ্ম; নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার তাগিদেই হোক বা অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার দায়ে, মানুষ ততক্ষণ সেই ইঙ্গিত অস্বীকার করে যতক্ষণ না পর্যন্ত রোগের প্রকোপ এবং মৃত্যুহার পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় অঙ্কে রোগটি স্বীকৃতি পায়। সবাই তখন এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দাবি করে এবং উপযুক্ত উত্তরের অভাবে নিজেরাই মনমতো কিছু নৈতিক ও তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা বানিয়ে নিতে থাকে। এইভাবে একের পর এক ব্যাখ্যা ও আলোচনা রোগ সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তিমূলক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যার অভিঘাত সংক্রমণের মতোই নাটকীয় ও ধ্বংসাত্মক। এইটি হল সর্বশেষ স্তর।
সব মহামারীই একসময় শেষ হয়। গোষ্ঠী সংক্রমণের ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকায় কিছু রোগ নিস্তেজ হয়ে পড়ে, কখনও বা সামাজিক স্বাস্থ্যবিধির সার্বিক প্রয়োগের সামনে কিছু রোগ পর্যুদস্ত হয়। রোজেনবার্গ তাঁর লেখায় বলছেন, “মহামারী একটি মুহূর্তে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে সীমিত পরিসরে সীমিত স্থিতিকাল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, এক অজানা উৎকণ্ঠার পারদ ঊর্ধ্বমুখী করে দ্রুতই ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত সংকটের জন্ম দেয় এবং পরিশেষে নিষ্প্রভ হয়ে যায়”। চীন থেকে শুরু হয়ে অন্যান্য দেশে কোভিড-১৯ ঠিক এই পথেই এগোচ্ছে।
কিন্তু ইতিহাসবেত্তারা শুধুমাত্র শুকনো তথ্য বা তত্ত্বের নিগড়ে আটকে না থেকে সমাজের গভীরে উঁকি মেরে দেখতে চেয়েছেন। রোজেনবার্গের মতে, মহামারী সমাজের উপর আঘাত হেনে তাকে বেআব্রু করে তার ভিতরের ক্ষয় -ক্ষমতা-দ্বন্দ্ব এমন ভাবে উন্মোচিত করে, যা হয়ত এমনিতে বোঝা সম্ভব ছিল না।
অতিমারী হয়ে ওঠে সামাজিক বিশ্লেষণের অন্যতম সূচক। সংকটের সময়ে প্রকৃত প্রয়োজন ও উচিত- অনুচিত বলতে নাগরিক সমাজ কী বোঝে, সেইটি পরিষ্কার বোঝা যায়। মহামারীর এমনই একটি নাটকীয় নাগরিক প্রতিক্রিয়া হল দায় চাপানোর খেলা। মধ্যযুগীয় ইউরোপের ইহুদী সম্প্রদায় থেকে শুরু করে আজকের ভিন্ন খাদ্যাভ্যাসী চীনদেশীয় মানুষ - যেমন করে হোক কাউকে না কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারলে আমাদের খানিক শান্তি মেলে। আর এই দোষারোপের কাঠামো সুচারুভাবে গড়ে ওঠে সমাজের পাঁজরে লুকিয়ে থাকা জাতিগত, ধর্মগত, বর্ণগত, লিঙ্গায়ত বিভিন্ন ভেদাভেদকে আশ্রয় করে। প্রশাসনও মহামারীর প্রত্যুত্তরে আরোপ করতে থাকে উত্তরোত্তর কঠোর বিধিনিষেধ, যেমন কোয়ারান্টাইন বা বাধ্যতামূলক টিকাকরণ। কিন্তু এই বিধিনিষেধের একদিকে থেকে যান ক্ষমতার শীর্ষে থাকা কর্তাব্যক্তিরা আর অন্যদিকে সাধারণ মানুষ। আর এই দুই শ্রেণীর মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষার অসাম্য ক্রমেই স্পষ্ট হতে থাকে।
ইতিহাস ঘাঁটতে বসলে মহামারীর চরিত্রের আরেকটি দিক সামনে আসে – স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিষয়ে প্রশাসনিক অপদার্থতা। স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কারের সূচনা হয়েছিল ১৭৯৮ খ্রীষ্টাব্দে, তবু প্রকৃত টিকাকরণের সাফল্যে পৌঁছতে সময় লেগেছিল প্রায় ১৮০ বছর। ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের গোড়ার দিকে সানফ্রান্সিস্কোর স্বাস্থ্য আধিকারিকরা কুখ্যাত বিউবোনিক প্লেগের প্রকোপ ঠেকাতে চায়নাটাউন এলাকার চারিদিকে দড়ি দিয়ে তৎকালীন কন্টেনমেন্ট জোন বানিয়েছিলেন; শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গদের (এবং প্লেগবাহী ইঁদুরদের) অধিকার ছিল সীমানা পেরিয়ে যাতায়াত করার! স্বাভাবিক ভাবেই মহামারী ঠেকানো যায়নি। বিশ শতকের অন্যতম ঘাতক সিফিলিস তার থাবা বসাতে এতটাও সক্ষম হত না যদি সবাই কঠোর ভাবে যৌন সুরক্ষাবিধি, সংযম ও একগামিতার আদর্শ মেনে চলত। কিন্তু এ জিনিস কখনোই হওয়ার নয়। বিশদ ব্যাখ্যার নিশ্চয়ই প্রয়োজন নেই। এ প্রসঙ্গে ১৯৪৩ সালে আমেরিকান আর্মির এক স্বাস্থ্য আধিকারিক সরাসরিই বলেছিলেন, “যৌনতাকে জনসাধারণের অপ্রিয় করে তোলা যায়না”! আবার যখন জানা গেল পেনিসিলিন ব্যবহারে এই রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব, কিছু বিশুদ্ধবাদী ডাক্তার এর বিরুদ্ধে মত দিলেন। তাদের ভয় ছিল, এর ফলে অবাধ যৌন বিশৃঙ্খলার পরিণাম সম্পর্কে মানুষ আর শঙ্কিত হবে না। এইড্স রোগের বাহকভাইরাস HIV-কে আশির দশকেই হয়ত কব্জা করা সম্ভব ছিল কিন্তু হয়ে ওঠেনি, এবং যদিও ১৯৯৬-এর মাঝামাঝি সফল অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসায় এই রোগজনিত মৃত্যুহার একধাক্কায় অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভবপর হয়, তা একেবারে শেষ করা যায়নি। জাতি-বর্ণ-লিঙ্গের পরিচিত ছকেও এই মারণরোগের প্রকোপের বৈষম্য ফুটে ওঠে। ইতিহাসবিদ অ্যালান ব্রান্টের কথায়, “ম্যাজিক বুলেটের প্রতিশ্রুতি কখনোই রক্ষিত হয়নি”।
বিগত সবরকম সংক্রামক রোগের ইতিহাস থেকে যে শিক্ষা আমরা পেয়েছি, তা অনুধাবন করে শ্রান্ত বোধ করা অস্বাভাবিক নয়। আজকে করোনাভাইরাসের এই প্রকার হয়ত নতুন, কিন্তু এই ঘটনা আমাদের কাছে নতুন নয়। চীনের মাটিতে অজানা জীবাণুর উৎপত্তি? আজ প্রথম নয়। এর আগেও অনেক অতিমারীর উৎসস্থল ছিল চীন। জনমানসে সচেতনতার অভাব? কামু তাঁর লেখায় এমনটাই তো বারবার দেখিয়েছেন। রোগের প্রাদুর্ভাব ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা? সর্বত্রই! প্রশাসনিক স্বৈরাচারিতা? তারও উদাহরণ কম নেই, তবে চীনের মতো ঘটনা হয়ত অভূতপূর্ব। কোয়ার্যান্টাইন সত্ত্বেও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না? আগেও যায়নি। বিশেষত যেখানে রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই রোগী সংক্রামক হয়ে পড়েন, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সার্স। এর মানে এমন নয় যে রোগদমনের প্রচেষ্টা করাই ভুল। ১৯১৮ সাল নাগাদ যখন আমেরিকায় ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব ঘটে, বিভিন্ন শহর বিভিন্ন ভাবে তার মোকাবিলা করেছিল। প্রথম ঝাপটা যাদের উপর দিয়ে গেছে, তাদের ভুল থেকে অন্যরা শিক্ষা নিয়েছে। যেসব শহর কঠোর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে স্কুল বন্ধ করেছে, জনসমাগমে রাশ টেনেছে, আরও বিভিন্ন ভাবে কোয়ার্যান্টাইন ও আইসোলেশনের শর্ত শিথিল হতে দেয়নি, তারা মহামারীর গতিরোধ করে মৃত্যুহার কমাতে সক্ষম হয়েছিল। চীনের আগ্রাসী নীতি হয়ত একইভাবে বিশ্ব জুড়ে অতিমারীর প্রসার কিছুটা হলেও বিলম্বিত করেছে।
যে কোনও মহামারীর মোকাবিলায় দুটো পরিচিত এবং দুঃখজনক দিক বারবার উঠে আসে। প্রথমত, ক্ষতিকারক প্যাথোজেনের সঙ্গে সঙ্গেই আসে অন্যকে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। চীনবিরোধী মারমুখী মনোভাব আজকের সমস্যা নয়, সেই ১৯০০ সালের সানফ্রান্সিস্কোর প্লেগ থেকে ২০০৩ সালের সার্স – ছবিটা সর্বত্রই এক। দ্বিতীয়ত, মহামারীতে সর্বাধিক বলি যায় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাণ। মধ্যযুগীয় ইউরোপের প্লেগ থেকে ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দের ফিলাডেলফিয়ায় পীতজ্বর, ২০১৪ সালের ইবোলা মহামারী থেকে আজকের কোভিড-১৯, চিকিৎসাকর্মীদের রেহাই নেই। যদিও এই ঘটনা বুঝিয়ে দেয় সাধারণের প্রাণরক্ষার্থে তাঁরা নিজের জীবন বাজি রাখতে সদাপ্রস্তুত, তবু একই সঙ্গে তা প্রশাসনকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করায়, যে প্রশাসন তার স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ও সরঞ্জাম ছাড়াই মহামারীর মোকাবিলায় ঠেলে দেয়।
অতীতের ঘটনাবলীকে যত্ন নিয়ে ক্রমানুসারে সাজিয়ে রাখতে ইতিহাস যতটা দড়, ভবিষ্যতের দিকনির্দেশে তার ততটাই অস্বস্তি। সাম্প্রতিক অতিমারী নিয়ে আমাদের কতটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত? কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের মতে, পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এই বছরের শেষের মধ্যেই সংক্রমিত হবে, যার ফলে মৃত্যুসংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে দশ কোটি! নিশ্চতই ইতিহাস আমাদের সামনে সাজিয়ে রেখেছে যুগান্তর ব্যাপী মহামারী ও অতিমারী যেমন প্লেগ, হাম, গুটি বসন্ত, কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মারবার্গ ভাইরাস ও মার্স (Middle East Respiratory Syndrome)-এর পুঙ্খানুপুঙ্খ আলেখ্য। কিন্তু এমন সর্বনাশা অতিমারী যা নিমেষে লক্ষ লক্ষ প্রাণ নিয়ে নেয়, তা সততই বিরল। অন্তত বিগত সহস্রাব্দে তার উপস্থিতি হাতে গোনা। তবে কি আমরা সেই বিরল সন্ধিক্ষণেই দাঁড়িয়ে? আমাদের সামনে কি তবে এমন জীবাণু উপস্থিত, যার মধ্যে রোগের তীব্রতা ও রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা যথার্থ (ভয়াবহ) মাত্রায় মিশেছে, জীবজগত যার হাতে তুলে দিয়েছে সঠিক পরিমাণ মানুষ-পশু সংসর্গ, বিশ্বজনীন ভ্রমণের সুবিধা, সামাজিক বৈষম্যের ক্ষোভ আর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ? ইতিহাসে যার আভাস নেই বর্তমানে তার আবাস নেই, এমনটা আমরা ভাবতেই পারি। কিন্তু নতুন ইতিহাসের শুরুয়াত তো অসম্ভব নয়!
ইতিহাস সাক্ষী আছে, অযথা আতঙ্কজনিত হঠকারি পদক্ষেপও আমাদের কম ক্ষতি করেনি। এমন আতঙ্কের ঐতিহাসিক উদাহরণ আছে যেখানে রোগ শেষ অবধি আর মহামারীর আকার নেয়নি (১৯৭৬, ২০০৬ ও ২০০৯-এর H1N1 ইনফ্লুয়েঞ্জা)। এমন অগণিত উদাহরণ আছে যেখানে তাৎক্ষণিক সংকটের (যেমন, ২০১৪-এর আমেরিকায় ইবোলা সংক্রমণের আশঙ্কা) দুশ্চিন্তায় নাগরিকরা বৃহত্তর সংকটের দিকে ফিরেও তাকায়নি। ১২ই মার্চ (মূল লেখার প্রকাশকাল) অবধি আমেরিকায় SARS-CoV-2 এর বলি হয়েছেন প্রায় ৫০০০ নাগরিক, যার কয়েকগুণ বেশি মানুষ প্রতি বছর ফ্লু-এর আক্রমণে প্রাণ হারান। কোভিড-১৯ মহামারীর এই কঠিন সময়েও, চীনের প্রায় ৫০০০ মানুষ প্রতিদিন ইস্কেমিক হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে চলেছেন। তবে কেন অধিকাংশ আমেরিকান ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী নন? কেন চীনে যে তৎপরতায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ঝাঁপ ফেলা হল, সেই একই তৎপরতায় সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ হয় না? সমাজ এবং তার বাসিন্দারা, উভয়েই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যত ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তাদের সবার আপেক্ষিক গুরুত্বের তুল্যমূল্য বিচারে ভুল করে ফেলে। কোভিড-১৯-এর গতিপ্রকৃতি কী হতে চলেছে আমাদের জানা নেই (হয়ত বছরশেষে আমাকেই নিজের কথার জন্য অনুতাপ করতে হবে)। এতদ্সত্ত্বেও, নাগরিকদের ও তাদের নেতাদের ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে, সংকটের প্রাসঙ্গিকতা বিচার করে এমন নীতি প্রণয়ন করতে হবে যা এই সমস্যার প্রকৃত বিস্তারের সঙ্গে মানানসই।
এত আলোচনা কিন্তু ঘুরেফিরে শেষ অবধি ইতিহাস ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি এক চূড়ান্ত প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। ফিরে তাকানো যাক ১৯৭৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে, যখন আমেরিকায় সোয়াইন ফ্লু- এর ভয় জাঁকিয়ে বসেছে। এমতাবস্থায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেরাল্ড ফোর্ডের আগ্রাসী নীতিতে শুরু হয় গণ-টিকাকরণ কর্মসূচী। যখন প্রচুর মানুষ টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন, কিছু মানুষ মারা যান, এবং শেষ অবধি সেই মহামারী সেভাবে দানাও বাঁধে না, তখন এই ঘটনাই পরবর্তী নভেম্বরে ফোর্ডের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার ১৯৮১ সালে যখন এইডসের প্রাদূর্ভাব হয়, রোনাল্ড রেগন তার মেয়াদের প্রথম ভাগটা এই মহামারীকে উপেক্ষা করেই কাটিয়ে দেন, তা সত্ত্বেও পুনর্নির্বাচন জিতে আসতে তাঁর কোন অসুবিধাই হয়নি। সৌভাগ্যের বিষয়, বর্তমান প্রশাসন অন্তত রেগানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে না। তবু ফোর্ড যেখানে ভুল করেছিলেন, সেইখানে কি এরা সফল হবে? সরকারের প্রাথমিক মূল্যায়নে এখনও অবধি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। মহামারীর ইতিহাসের দেওয়াল-লিখন আমাদের তবেই সাহায্য করতে পারে, যদি আমরা সেই ইতিহাস জানি এবং যথার্থ প্রাজ্ঞতা দিয়ে গ্রহণ করতে পারি।
মূল রচনা : Jones DS. History in a Crisis - Lessons for Covid-19. N Engl J Med. 2020;382(18):1681- 1683. doi:10.1056/NEJMp2004361
Link - https://www.nejm.org/doi/full/10.1056/NEJMp2004361 [লেখক : সায়নদীপ গুপ্ত ]
#বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি