গল্প

রং ডেলিভারি

মানস দাস Oct 4, 2020 at 7:14 am গল্প



লড়ঝড়ে সাইকেলটা দরজার পাশে সিঁড়ির অন্ধকার কোনায় একদিক করে হেলিয়ে রাখলেন অবনীশবাবু। তারপর গলার স্বর একটু চড়িয়ে স্ত্রীকে বললেন,  জলের পাম্পটা বন্ধ করো এবার। অযথা জল খরচ হচ্ছে।

বাইরে ছাদ বেয়ে পাইপ থেকে তখন জলের অবিরাম ধারা নীচে বয়ে যাচ্ছে। বোধহয় বেশ কিছুক্ষণ হবে। 

ঘরে উঠে প্রথমে পাম্পের সুইচটা বন্ধ করলেন অবনীশবাবু। তারপর জামার পকেট থেকে বের করে রাখলেন  একতাড়া ওষুধের কিছু  বান্ডিল। 

নির্মলা ইনসুলিন নিচ্ছিলেন ঘরের ভেতর । 

অবনীশবাবুর গলা পেয়ে বললেন,  মৌমিতা ফোন করেছিল। কাল আসবে বলল।

-- আসছে। তা বেশ। কীসে আসবে বলল ? -- পাশের ঘরে  পোশাক পাল্টাতে পাল্টাতে বললেন অবনীশবাবু। 

-- ফ্লাইটে। 

-- হ্যাঁ। না এসেই বা কী করবে ! 

-- গবেষণার পেপারগুলো নাকি জমা দেওয়া নিয়ে খুব চাপে আছে। আসতে চাইছিল না। আমিই জোর করেছি।     

-- চাপ টাপ নেবার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে। কালকের দিনটায় না এলে হয় নাকি।   

অবনীশবাবু ওষুধগুলো নিয়ে নির্মলার বিছানায় রাখলেন। 

টেবিলে কিছু নতুন সিরিঞ্জের প্যাকেট পড়ে ছিল। নির্মলা ওদিকে তাকিয়ে বললেন, এগুলো একটু আগে দয়াময় দিয়ে গেল। দাম নিয়ে যায়নি। বলল তোমার কাছ থেকে নিয়ে নেবে। 

-- দিয়ে এসেছি । দয়াময় বলছিল ক্রিয়েটিনিনটা একবার দেখে নিতে। বিমলকে বলে দেব কাল ? -- বলে ফোনের কললিস্টে চোখ বোলাতে লাগলেন।

-- কত টেস্ট আর করাবে!  এই তো কবে চেক করানো হল। যা হবার তা হয়েছে। বাকি কিছু নেই। দিন দিন ওষুধের পেছনে যা খরচ হচ্ছে... 

অবনীশবাবু ফোনে কথা বলছেন বিমলের সাথে। বিমল কাল আসবে। সিরিঞ্জ পুরে রক্ত নেবে। পাঁচশটি টাকা নেবে। তার দুদিন পর রিপোর্ট দিয়ে যাবে। রিপোর্টে গড়বড়  থাকলে ডাক্তার দেখানো। তার টাকা। তারপর আবার ওষুধ। তারও টাকা। ট্রান্সপ্লান্টটা হয়ে থেকে এসবই চলছে।

নির্মলা তাঁর বিছানার পাশে ছোট টুলটায় রাখা একটা বাঁধানো ফটোতে চোখ রাখেন। ফটোটা বেশ পুরনো। তাঁদের ফ্যামিলি ফটো। মৌমিতা তখন খুব ছোট। ম্যাসানজোর ঘুরতে গিয়ে তোলা। ওখানকার লোকাল একজন তুলে দিয়েছিল। বঙ্কু, টুকাই, মেজ মামা,  নন্দাপিসি সবাই ছিল। একসাথে সেবার হইহই কাণ্ড। আজ সব কত দূরে চলে গিয়েছে। কতদিন কারো সাথে দেখাসাক্ষাৎ  নেই। তাঁর অপারেশন কেসটার সময়ই কাউকে পাওয়া গেল না। মেজমামা কিডনি দিতে রাজি হয়েছিল। অলকা দিতে দেয়নি। বলেছিল, বুড়ো বয়সে বাবা আবার এসব দিয়ে টিয়ে যদি সামলাতে না পারে! 

শেষে অবনীশ দালাল টালাল ধরে কোথা থেকে একটা ব্যবস্থা করলেন। আর একটু হলে তিনি মরতেই বসেছিলেন। কী দরকারই বা ছিল এত ঝামেলার। মৌমিতা বড় হয়ে গেছে। ওর সংসার হয়েছে। তাঁদের নিজেদের সময় কেটে গেছে। আর নাই বা থাকলেন কটা দিন। শুধু অবনীশ ছেড়ে দেননি।       

বিছানার বালিশে সোজা হয়ে হেলান দেয় নির্মলা। অবনীশবাবু ফোন রেখে আলমারির তাকে কী খুঁজছেন।

নির্মলা  বলেন,  হ্যাঁ গো..  এমনটা এবারই প্রথম না?... 

আলমারির দিকে মুখ রেখেই অবনীশবাবু জিজ্ঞেস করেন,  কী প্রথম ? 

ম্লান হেসে নির্মলা বলেন, মেয়ের জন্মদিন। আর মা পড়ে বিছানায়। কত রান্না করে করে খাইয়েছি। এবার সব তোমার ঘাড়ে। 

-- তাতে কী! মৌমিতাকে আসতে দাও। দেখবে ও-ই সামলে নেবে-- একটা প্যাকেট থেকে কমলা রঙের একটা ওষুধ বের করেন অবনীশবাবু। 

-- বাদ দাও এবার এসব। বেশি ঝামেলা করতে যেয়ো না। মৌমিতা এসে দুদিন থেকে গুছিয়ে যা ইচ্ছে হয় করে যাবে। তুমি একটু স্বস্তি নাও তো কটা দিন। বাড়ীর সমস্তটাই এখন তোমার ওপর দিয়ে যায়।

-- বেশ দেখা যাবে। এখন এটা গেলো দিকি-- একটা জলের বোতল আর ওষুধটা সামনে ধরেন অবনীশবাবু। 

নির্মলা জলের ঢোকটা গিলে নিয়ে মলিন গলায় বলেন অবনীশবাবুকে, হ্যাঁ গো... একটা কথা বলো দেখি, আমি এমন অসুস্থ হব, তুমি ভাবোনি না কখনও? 

-- কেউ কি জেনে বুঝে এমন ভাবে ... 

--- যদি এরপর কিছু হয়... 

অবনীশবাবু খানিকটা বিরক্ত হন। অকারণে নির্মলার এই আবেগ আজ নয়। বরাবর। আর এই সকালবেলায়... 

নির্মলা বুঝতে পারেন। অবনীশবাবু কোনো উত্তর না দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নির্মলা অসুস্থ হবার পর থেকে এই আবেগ রোগটা আরও বেড়ে গেছে তাঁর। মেয়েটা কাছেপিঠে থাকে না। তাই অবনীশের জন্য চিন্তাটা আরও বেশি করে হয়। নির্মলার বারবার মনে হয়, তিনি ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছেন অবনীশের কাছ থেকে। একা অবনীশ কি থাকতে পারবেন?  অসুখটা হবার পর থেকেই এই চিন্তাটা তাঁর প্রায়ই হয়। অবনীশ কি একা থেকে যেতে পারবেন? অবনীশ কি জানেন এখন প্রায়ই তিনি কথা বলেন একা একা! 


নজরে থাকুক  

জনক


**


  --৭২ বি বাই শরৎ বোস রোড, চ্যাটার্জি পাড়া, অশোকনগর, কলকাতা পঁচানব্বই-- কপালের ঘাম মুছতে মুছতে ঠিকানাটা দেখল একবার রজত। এর ঠিক নীচে ল্যান্ডলর্ডের নামটা অস্পষ্ট হয়ে রয়েছে। কী চ্যাটার্জি...  বুঝতে পারা যাচ্ছে না ঠিক। তবে বাড়ির নামটা রয়েছে। মোবাইল নং দেওয়া আছে অবশ্য। 

মাত্র কটা দিন হয়েছে রজত এই ডেলিভারি বয়ের কাজটা নিয়েছে। এই শহরের সবকটা গলি এখনও তার চেনা হয়ে ওঠেনি। 

আজ সকাল থেকেই অনেক কটা ডেলিভারি ছিল। অচেনা হলেও ফোন থাকাতে সেরকম অসুবিধে হচ্ছে না বটে। তবে সময়টা লাগছে বেশি। প্রথম প্রথম এই জিনিসটা হবে সে জানে। পরে হাতের তালু আর শহরের গলি এক হবে। তবে শেষের এই কেসটায় সে আটকে গেছে। কিছুতেই বের করতে পারছে না বাড়িটা। ভদ্রলোকের ফোনেও বেশ কবার ট্রাই মেরে নেওয়া গেল। কিন্তু ব্যাটা ফোন রিসিভ করলে তো.. । 

রজত গাড়ি ঘুরিয়ে একটা দোকানের নেমপ্লেট দেখে নিয়ে বুঝতে পারে ঠিক জায়গাতেই এসে পড়েছে সে। এখানে নিশ্চয়ই চিনবে কেউ অ্যাড্রেসটা। কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করবে? দোকানপাট রাস্তাঘাট সব ফাঁকা প্রায়। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ‍্যাখে রজত, দুপুর আড়াইটে বাজে এখন। মে মাসের গনগনে রোদ মাথায় তাপ লাগাচ্ছে। দরদর করে ঘামছে সর্বাঙ্গ। ঘুরতে ঘুরতে পেটের তেল শেষ প্রায়। আজই এটা ডেলিভারড হতে হবে। কিন্তু ভদ্রলোক ফোন না ধরলে কীভাবে তা হবে...

পেয়েছে...। শেষমেশ মৌমিতাকে খুঁজে পেয়েছে রজত। মানে যেখান থেকে ফিরে যাবার কথা ভাবতে শুরু করেছিল, তার সামান্য বাঁ হাতে মৌমিতা নামের বাড়িটা দেখতে পেল সে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল রজত।       

কলিং বেল বাজাতে চশমা চোখে এক বয়স্ক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন।

রজত ডেলিভারির প্যাকেটটা নিয়ে বলল, আপনিই মি. চ্যাটার্জি? কী নামে বলুন তো? 

ভদ্রলোক ভ্রূ কুঁচকে বললেন,  কে আপনি? 

রজত দ্রুত বলে, মি. চ্যাটার্জি, আপনার একটা পার্সেল ছিল। আপনার বাড়ির নাম মৌমিতা, তাই তো? ফোন ধরছিলেন না কেন? 

ভদ্রলোক ঠিক জবাব দিলেন না। একটু থমকে বললেন, হুঁ। হুঁ। হবে হয়তো।

রজত পার্সেলটি এগিয়ে দেয় ভদ্রলোকটিকে। উনি কী যেন ভাবছেন। হঠাৎ বললেন, আচ্ছা কীসের পার্সেল বলুন তো... ঠিক মনে করতে পারছি না। বলবেন একটু ? 

রজত দেখে নিয়ে বলে,  বার্থডে গিফট সম্ভবত স্যার। 

একটু ভেবে নিয়ে বললেন, ও হ্যাঁ, হ্যাঁ। মনে পড়েছে এইবার। আমার স্ত্রীর জন্মদিন আজকে। ঠিক ঠিক। 

রজত ভাবে, কী অদ্ভুত লোক রে বাবা... 

পার্সেলটা হাতে নিয়ে ভদ্রলোক বললেন, এক মিনিট দাঁড়ান... বলে উনি বাড়ির ভেতরে কিছুক্ষণ গিয়ে আবার ফেরত এলেন। 

এর মধ্যে রজত দরজায় দাঁড়িয়ে শুনতে পাচ্ছিল ভদ্রলোক স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করছেন,  কি গো কোথায় গেলে.. একবার দেখে যাও তো এটা কেমন হয়েছে ? 

মনে হয় গিফটটা উনি দেখাচ্ছেন ওঁর স্ত্রীকে। কিন্তু তাকে কেন দাঁড় করিয়ে রেখেছেন উনি, বুঝছিল না রজত। আর এখন ওর দাঁড়িয়ে থাকারও কোনো মানে হয় না। ভদ্রলোকের গলা আবার শুনতে পেল রজত। উনি বলছেন,  তাহলে রেখে দিই...  পছন্দ হয়েছে বলছ।

উফ্, কী আকাট লোক রে বাবা...  ওঁর পছন্দ অপছন্দে রজতকে ওয়েট করতে হচ্ছে। এই হচ্ছে সমস্যা। অনলাইন ডেলিভারির পুরো ব্যাপারটা এইসব মানুষরা ঠিক বোঝে না। এটা তো আর দোকানে দাঁড়িয়ে পছন্দ করে কেনা, না হলে তখনই ফেরত...  এইরকম নয়।  কে বোঝাবে এদের। খামোখা তার সময় নষ্ট।       

ভদ্রলোক অবশ্য তারপরই ফিরে এসেছেন দরজায়।   মুচকি হাসছেন ফিরে এসে। বললেন, খুব পছন্দ হয়েছে। খুব খুশি ও।    

-- যাক্। মিটল তাহলে-- রজত বেঁচে যায় যেন।

-- হ্যাঁ, হ্যাঁ..  আসুন  এবার -- ভদ্রলোক বলেন। 

রজতের হঠাৎ মনে হয় ভদ্রলোকের নামটা জানা হয়নি তার। ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করাতে উনি বললেন, আমার নাম অবনীশ চ্যাটার্জি। নির্মলা আজ খুব খুশি হয়েছে।

 -- আচ্ছা, আচ্ছা, ধন্যবাদ। ম্যাডামকে হাপি বার্থডে উইশ করছি... -- রজত আশ্বস্ত হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসে।

 ফেরার পথে বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে রজতের। পকেট থেকে বের করে নিয়ে দ‍্যাখে, আগের সেই নম্বরটা যেটাতে অবনীশবাবুকে বারবার ট্রাই করছিল সে। 

ফোনটা রিসিভ  করে কথা বলে বুঝতে পারে লোকটা একটা ফ্রড। পার্সেলটা  আসলে পরেশ চ্যাটার্জি নামে জনৈক ভদ্রলোকের। ওঁর বাড়ির নামও একই, মৌমিতা। 

রজত রাগে ফুঁসতে থাকে। সামান্য একটা গিফট পার্সেল... ধন্য মনুষ্য প্রজাতি। অবনীশবাবুর বাড়ির দরজায় ফের পৌঁছে কলিংবেল বাজায় দ্রুত। পরক্ষণেই আবার। তারপর আবার একবার। পরপর দুবার, তিনবার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাপারটার নিষ্পত্তি চায় রজত। শুধু ভাবছিল লোকটার সাথে দেখা হলে কী বলবে সে.. । কিন্তু কই? লোকটা তো এখনও দরজা খুলল না।


**


রঙিন নীল সাদা বাড়িটার সামনে রজত বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে। বাড়িটা তার বেশ চেনা। সদরের জং ধরা লোহার ছোট গেটটা পেরোতে গিয়ে কিছু কি মনে পড়ছে! দগ্ধ দুপুর... চশমা-চোখো বয়স্ক এক লোক... একটা ভুল বোঝাবুঝি হল... তারপর... তারপর কত যে কী হল। আস্তে আস্তে গেটটা ক্রস করে দরজার কাছে কলিংবেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রজত। তারপর ডান হাতের একটা আঙুল তোলে ওটায় চাপ দেবার জন্য...  ঠিক একইভাবে... যেমনটা সেবার দিয়েছিল। প্রথমে একবার। তারপর আবার একবার। পরপর দুবার, তিনবার। তারপর...  

রজত লক্ষ করে বাইরের দরজাটা ঠিকমতো লাগানো নেই। একটু ঠেকানো আছে কেবল। সামান্য চাপ দিতেই খুলে গেল দুটি পাল্লাই। 

-- অবনীশবাবু...  -- রজত হাঁকল একবার।

-- অবনীশবাবু, ভেতরে আছেন? দরকার ছিল একবার। -- ফের হাঁকল রজত। সাড়াশব্দটি পর্যন্ত মিলল না। আশ্চর্য!  লোকটা কি পাগল নাকি। দরজা খোলা। ডাকলে সাড়া মেলে না। অন্যের জিনিস  অনায়াসে নিজের বলে  চালিয়ে নেয়। ভারী অদ্ভুত তো। এমন অভিজ্ঞতা রজতের এই প্রথম।

হঠাৎই ওর নজর ঘোরে পাশের একটা ছোট্ট ঘরে। এখান থেকে দাঁড়িয়ে ও যতটুকু দেখতে পাচ্ছে তাতে একটা ছোট খাট আর তার পাশে একটা ছোট গোল টেবিল নজরে এল। টেবিলের ওপর কীসের একটা ফটোফ্রেম। সামনে একটা আধপোড়া মোমবাতি।  

রজত এগিয়ে গিয়ে ঘরটাতে প্রবেশ করে। মৃদুস্বরে ডাক দেয় -- অবনীশবাবু....বাড়ি আছেন ? 

আশ্চর্য, না অবনীশবাবু, না ওঁর স্ত্রী, কারো কোনো পাত্তা পাচ্ছে না বাড়িময়। এভাবে অচেনা লোকের বাড়িতে ঢোকাটাও ঠিক হচ্ছে না মনে হয়। হাল ছেড়ে ফেরার কথাই ভাবছিল রজত। হঠাৎ ঘর লাগোয়া বাথরুমের দিকে চোখ ফিরতেই চমকে ওঠে সে। দ্যাখে, অবনীশবাবু ডান হাতে মাথা গুঁজে  পড়ে আছেন বাথরুমে। সঙ্গে সঙ্গে একলাফে সেখানে পৌঁছে যায় রজত। অবনীশবাবুকে দুহাত দিয়ে ধরতে যায়। লক্ষ করে, ভদ্রলোকের বাঁ হাত বেয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত বয়ে নামছে বাথরুমের মেঝেতে। হাতটা তুলতে গিয়েই দ্যাখে হাতের শিরা কাটা। সর্বনাশ... উনি কি সুইসাইড করলেন নাকি!  তাহলে তো মহাবিপদ। ওঁর স্ত্রীই বা কোথায়। তাহলে উনিও কি একই পথ নিয়েছেন... । এ কোন ঝামেলায় পড়ল রজত! কী করবে এখন… লোকজন... লোকজনকে ডাকা দরকার আগে। মাথা কাজ করে না ঠিকমতো। অবনীশবাবুকে ফেলে উঠে আসে। এবার চোখ যায় তার টেবিলের ফটোটার দিকে। ফটোটার নীচে ছোট্ট করে বাঁধানো হরফে লেখা,  নির্মলা চ্যাটার্জি। ডেট অব বার্থ অ্যান্ড ডেট অব ডেথ... ইত্যাদি ইত্যাদি।   

তারপর চিৎকার 'হেল্প, হেল্প' বলে। এরপর হসপিটাল। থানায় ডায়েরি। অবনীশবাবুর সিজোফ্রেনিয়া। লোকটা কি তারপর বেঁচে ছিল...! খোঁজ নেয়নি। খোঁজ রেখেই বা কী হবে রজতের। সামান্য কিছু পুলিশি জিজ্ঞাসার পর রজত ছাড়া পায়। তারপর ফিরে যায় নিজের স্বাভাবিক কাজকর্মে।


**



সেদিনের সব ভয়ংকর স্মৃতি হুড়মুড়িয়ে চলে আসছিল মাথায়। দ্রুত স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে রজত। মাথাটা একবার ঝাঁকিয়ে নিয়ে চাপ দেয় কলিংবেলে।

দরজা খুলে বেরিয়ে আসে মধ্যতিরিশের এক মহিলা। রজত অভ‍্যাসমতো বলে, আপনি মৌমিতা চ্যাটার্জি? 

-- হ্যাঁ। 

-- একটা রিপ্লেসমেন্ট অর্ডার ছিল আপনার।

-- ও ইয়েস। প্লিজ।     

রজত আরও একবার পার্সেলটায় চোখ বুলিয়ে নেয়। আর একটা রং ডেলিভারির সাক্ষী থাকতে চায় না বলেই এমনটা অভ‍্যাস হয়ে গেছে এখন। পার্সেলটা হ্যান্ডওভার করে বেরিয়ে আসতে মনে পড়ল সইটা করিয়ে নিতে  ভুলে গিয়েছে সে। তড়িঘড়ি করে আবার ফিরে যায় ও বাড়িতে।

দরজা খোলা। ম্যাডামকে অল্প তফাতেই পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে। রজত শুনতে পায় তিনি বলছেন, এবার নাও বইটা। এই কপিটা ঠিকঠাক আছে। কোনো অসুবিধে হবে না বাবা।

রজত বুঝতে পারে অবনীশবাবুর সাথে কথা বলছেন মৌমিতা ম্যাডাম।

-- ম্যাডাম একটুখানি শুনবেন...?  -- এই বলে সামান্য কাত হয়ে দরজার ওপারে উঁকি মারে রজত। পলকে তার মুখ বিবর্ণ হয়ে যায়। দুচোখ বিস্ফারিত হয়ে ওঠে। নিঃঝুম বাড়িটায় মৌমিতা একা কথা বলছে তার বাবার সাথে... অবনীশবাবুর বিরাট ফটোফ্রেমটার সামনে।



অলংকরণ : বিবস্বান দত্ত

#Bengali #Story #Wrong Delivery #Manas Das #বাংলা #গল্প #রং ডেলিভারি #মানস দাস #Old Age #Parents #Delivery Boy #Book #Parcel

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

5

Unique Visitors

219289