সুন্দরবন বাঁচাতে এক পায়েই লড়ছেন ক্যানিংয়ের 'কোকোনাট ম্যান'
একটি পা নেই। তাতে পরোয়া কীসের! অবশিষ্ট একটি পা নিয়েই ক্রাচে ভর দিয়ে অক্লান্তভাবে গাছ লাগাচ্ছেন ক্যানিং মহকুমার ঝড়খালির বাসিন্দা সুকুমার সানা। রোধ করছেন নদী-ভাঙন। সুন্দরবনকে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে রেখে যেতে চান তিনি।
পেশায় কৃষক সুকুমার কাজের অবসরে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুরনো নারকেল বা তালের আঁটি চেয়ে সংগ্রহ করতেন। তারপর চারা বেরোলেই পুঁতে দিতেন বিদ্যাধরী নদীর ধারে। ২০০০ সালে চাষের কাজ করতে গিয়ে হ্যান্ড ট্র্যাক্টর উল্টে পড়ে পায়ের উপর। পচন ধরা বাঁ পা কেটে বাদ দিতে হয়। কোনোমতে প্রাণে বেঁচে যান সুকুমার। তখন থেকেই নিত্যসঙ্গী হয়ে যায় ক্রাচ। সুকুমার কিন্তু থেমে যাননি। তৈরি করেছেন পুরোদস্তুর বাহিনী। রয়েছেন সুকুমারের স্ত্রী কৌশল্যা এবং স্থানীয় শতাধিক মহিলা। তাঁরা সকলেই বাড়ির কাজ সেরে গাছ লাগান নদী পাড় বরাবর। সকলে মিলে একটি নার্সারিও তৈরি করেছেন।
প্রতি বছর নিয়মমাফিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসে বিধ্বস্ত করে দিয়ে যায় সুন্দরবনকে। গোটা এলাকাটাকে মানুষের বাসযোগ্য করে রাখা একটা সংগ্রামের চেয়ে কম কিছু না। প্রতিবারের ঝড়ঝঞ্ঝায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূল ও নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকা। সুকুমার মনে করেন, এ থেকে বাঁচার সবচেয়ে সহজ ও সুলভ উপায় গাছ। তাই ভাঙন ঠেকাতে নদীপাড়ের ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগান তিনি। ইতিমধ্যেই বিদ্যাধরী নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় হাজার চারেক গাছ লাগিয়েছেন সুকুমাররা। কোনও জায়গায় গাছের সংখ্যা কমছে দেখলেই নিজের হাতে সেখানে বসিয়ে দেন নারকেল, তাল ও বিভিন্ন ম্যানগ্রোভের চারা। মূলত নারকেল গাছ লাগান বলে লোকমুখে তাঁর নামই হয়ে গেছে 'কোকোনাট ম্যান'। সুকুমারের মতে, নদী উপকূলে ভূমিক্ষয় রোধে নারকেলের মতো গাছই সবচেয়ে সদর্থক ভূমিকা নেয়। তাছাড়া তাল বা নারকেলের মতো গাছ থাকলে বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়। নিজের চাষবাসের পাশাপাশি রোজ সবুজ বাহিনীর কাজেও অনেকটা সময় ব্যয় করেন তিনি। কারণ এ লড়াই অস্তিত্বরক্ষার লড়াই। সুকুমাররা জানেন, অদৃষ্টের হাতে সব ছেড়ে বসে থাকলে হবে না।
...............
তথ্য ও চিত্রঋণ : news18bengali
#সুন্দরবন #Tree Plantation #sundarban #silly পয়েন্ট #environment