ধার করেছিলেন সুকুমার সেন, আবেস্তীয় ভাষায় শোধ চেয়েছিলেন সুনীতিকুমার
ছাত্র ধার করেছে মাস্টারমশাইয়ের কাছে। করে বেমালুম ভুলে গেছে। মাস্টারমশাইয়ের কিন্তু টাকাটার বেশ প্রয়োজন। এদিকে চাইতেও পারছেন না। কী করবেন তিনি! ভারী মুশকিল।
ছাত্র আর মাস্টারমশাই দুজনেই বিখ্যাত। ছাত্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার, ভাষাবিদ, অধ্যাপক সুকুমার সেন। আর মাস্টারমশাই প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।
সেটা ১৯২৪-২৫ সাল। প্রতি সপ্তাহে শান্তিনিকেতনে গিয়ে স্টেন কেনোর কাছে খোটানী ধম্মপদ আর শক ভাষা শিখছেন দুজনেই। ছাত্র-শিক্ষক তখন সহপাঠী। প্রতি শুক্রবার বিকেলের ট্রেনে কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন যান একসঙ্গে। আবার ফিরে আসেন রোববার বিকেলের অথবা সোমবার সকালের ট্রেনে। কোনোদিন বা সুকুমার সেন বর্ধমান থেকে ওঠেন। আবার ফেরার সময় নেমে পড়েন বর্ধমানে। বর্ধমানেই তো তাঁর বাড়ি।
একবার শান্তিনিকেতন থেকে ফেরার সময়, ভাঙানি ছিল না বলে সুনীতিবাবুর কাছে একটি টাকা ধার নেন সুকুমার। তারপর যা হয়। রাস্তায় গল্পে গল্পে সেই কথা একদম ভুলে গেলেন তিনি। বর্ধমান এসে গেল। নেমে যাবেন সুকুমার। এদিকে সুনীতিবাবুর টাকাটা প্রয়োজন। সঙ্গে বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব আছে। তাঁদের সামনে ছাত্রের কাছে টাকাটা ফেরৎ চাওয়া ভালো দেখায় না। সুনীতিবাবু পড়লেন মহা মুশকিলে।
কিন্তু তিনি সুনীতি চাটুজ্জে। এর কয়েক বছর পরেই যিনি লিখবেন O.D.B.L., Origin and Development of Bengali Language। সাড়া পড়ে যাবে ভাষাতত্ত্বের জগতে। আর ছাত্রটিও যে সে নয়। খোদ সুকুমার সেন।
সুনীতিবাবু সুকুমার সেনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “অএবম্ এরেজতম্ দজ্দী”। সুকুমার সেন খুব লজ্জিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা দিয়ে দেন।
প্রাচীন ইরানের বেদস্থানীয় আবেস্তার ভাষায়, গত শতাব্দী বা এই শতাব্দীতে মনে হয় না আর কেউ ধার ফেরত চেয়েছেন! “অএবম্ এরেজতম্ দজ্দী”-এর মানে, একটা টাকা দাও।
কৃতজ্ঞতা: দিনের পরে দিন যে গেল, সুকুমার সেন, আনন্দ পাবলিশার্স, ২০১০
*********
#সুনীতিকুমার #সুকুমার সেন #ভাষাতত্ত্ব # বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস # বাংলা ভাষা # শিক্ষক দিবস # ছাত্র-শিক্ষক জুটি # ফিচার # বিবস্বান দত্ত # সিলি পয়েন্ট # বাংলা পোর্টাল # ওয়েবজিন # শান্তিনিকেতন #web portal