২০২১ সালের সেরা ক্রাইম নন-ফিকশন : দেখে নিন তালিকা
বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্বসাহিত্যে নন-ফিকশনধর্মী রচনায় প্রায় একরকম বিপ্লব ঘটে গেছে। আমেরিকার সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল এনডোমেন্ট ফর দ্যা আর্টসের সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০০৮ সাল থেকে লাগাতার ফিকশন পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে এবং নন-ফিকশনধর্মী লেখার পাঠক বেড়ে চলেছে। পেঙ্গুইন র্যানডম হাউসও এই তথ্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জানাচ্ছে ২০১৩ থেকে ২০১৭ – এই পাঁচ বছরে তাদের নন-ফিকশন বিক্রির হার প্রায় ৩০% বেড়েছে।
নন-ফিকশনের ক্রাইম ধারাটিও এর ব্যতিক্রম নয়। এই ধারার এক নির্দিষ্ট পাঠকগোষ্ঠী বরাবরই ছিল, সে আজকালের কথা নয়। বিগত ১৫৫০ সাল থেকেই তদানীন্তন ব্রিটেনের “স্ট্রীট লিটারেচার”-এর একটা বড় অংশই ছিল সমকালীন হত্যাকাণ্ড বা অন্যান্য ক্রাইম নির্ভর লেখালেখি। এমনকি এই সব সত্যি ঘটনা অবলম্বনে বহু ব্যালাডও তৈরি হয়। ব্রিটেনের এই ক্রাইম নন-ফিকশন নির্ভর “স্ট্রীট লিটারেচার” প্রায় উনিশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল। ১৮৮৯ সাল নাগাদ স্কটিশ আইনজীবী William Roughead প্রায় ছয় দশক ধরে সমকালীন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলিকে প্রবন্ধের আকারে প্রকাশ করতে থাকেন। অনেকেই Roughead-কে আধুনিক ক্রাইম নন-ফিকশন জঁরের দিকদ্রষ্টা মনে করেন। পরবর্তীকালে আমেরিকান লেখক Edmund Pearson ১৯২৪ সাল নাগাদ “Studies in Murder” নামে সত্য ঘটনা নির্ভর এক সিরিজ প্রকাশ করেন। বই আকারে প্রকাশের আগে এই লেখাগুলি Liberty, The New Yorker, Vanity Fair-এর মতো নামী পত্রিকায় প্রকাশ পায়। যদিও Truman Capote দাবি করেন “In Cold Blood” (1965) বইটির মাধ্যমে তিনিই ক্রাইম নন-ফিকশন জঁরের পথ দেখিয়েছেন। কে প্রথম কে নয়, এই বিতর্কে না গিয়ে বরং জেনে নেওয়া যাক ফেলে আসা বছরের কিছু অসাধারণ ক্রাইম ননফিকশন বইয়ের হদিশ।
LAST CALL – Elon Green
জার্নালিস্ট Elon Green নব্বইয়ের দশক নাগাদ নিউইয়র্ক সিটিতে একের পর এক সমকামী পুরুষদের হত্যার ঘটনা অবলম্বনে রচনা করেছেন Last Call বইটি। LGBTQ কমিউনিটির উপর ঘৃণা থেকে সংঘটিত এই ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনার বাস্তব বিবরণসহ সরকারি ঔদাসীন্য সবকিছুই ধরা আছে বইটিতে। এটি Green-এর প্রথম ক্রাইম নন-ফিকশন হলেও এখানে ক্রাইমকে ছাপিয়ে গোটা কমিউনিটির উপর সঞ্চারিত ত্রাসের ভয়ালরূপ পাঠককে বাস্তবের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়।
THE UNFIT HEIRESS – Audrey Clare Farley
১৯৩৬ সালের জানুয়ারি নাগাদ বিখ্যাত আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার বিত্তশালী Peter Cooper Hewitt-এর সন্তান Ann তার মা Mayron-এর বিরুদ্ধে কোর্টে এক মামলা করে বসে। Ann-এর অভিযোগ ছিল তার মা ডাক্তারদের সঙ্গে অভিসন্ধি করে তার ফ্যালোপিয়ান টিউব দুটি বাদ দিয়ে তাকে সন্তান ধারণে অক্ষম করে দেন। Peter-এর উইল অনুযায়ী তার সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাওয়ার কথা ছিল কন্যা Ann-এর এবং এক-তৃতীয়াংশ অধিকারী ছিল স্ত্রী Mayron। কিন্তু এই উইলে শর্ত ছিল কন্যা Ann যদি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায়,তবে সব সম্পত্তিই Mayron-এর অধিকারে চলে যাবে। এই ঘটনা সমকালে বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল। এই ঘটনা অবলম্বনে Farley রচনা করেছেন The Unfit Heiress।
DIRTY GOLD – Jay Weaver, Nicholas Nehamas, Gim Wiss, Kyra Gurney
বিশ্বব্যাপী অবৈধভাবে খননকার্য চালিয়ে সোনা উত্তোলন এবং বেআইনি ব্যবসা চক্র – এই বিষয়কে কেন্দ্র করেই চমকে দেওয়ার মতো বই Dirty Gold। এই বইটি আমাদের সোনা এবং সোনা-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়গুলিকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়। কোকেনের চেয়েও লাভজনক এই অনৈতিক ব্যবসা চক্রের পরিণতি যথার্থ সাংবাদিকের শক্তিশালী কলমে অনবদ্যভাবে ধরা দিয়েছে।
PLUNDER – Menachem Kaiser
Menachem Kaiser একজন পোলিশ ইহুদি বংশোদ্ভূত নবীন লেখক। যিনি বেড়ে ওঠেন টরন্টোতে। পারিবারিক সূত্রে তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ইহুদিদের উপর নাৎসি অত্যাচারের অমানবিক ক্ষত। পোল্যান্ডের সোসনোভিকে ফেলে আসা পারিবারিক সম্পত্তি উদ্ধারের এক দীর্ঘ ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়েই Menachem Kaiser গড়ে তুলেছেন Plunder বইটি।
COUPLE FOUND SLAIN – Mikita Brottman
১৯৯২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিডার পোর্ট সেন্ট জো পুলিশ স্টেশনে এসে বছর বাইশের এক যুবক Brian Bechtold জানায়, সে গুলি করে তার বাবা-মাকে হত্যা করেছে। হত্যার অপরাধ কবুল করলেও তার শাস্তি হয় না। কারণ পরীক্ষায় জানা যায় Bechtold মানসিকভাবে অসুস্থ, স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। ফলত তার মানসিক চিকিৎসা চলতে থাকে। Mikita Brottman তার Couple Found Slain বইতে Bechtold-এর অপরাধ পরবর্তী জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। Bechtold-এর মানসিক চিকিৎসালয়ে কাটানো দীর্ঘ ২৭ বছর এর জবানী, চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে বারবার পালিয়ে যাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা, চিকিৎসাকেন্দ্রের অন্যান্য মানসিক রোগীদের ড্রাগ নেওয়ার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা, সর্বোপরি আমেরিকার সরকারি মানসিক চিকিৎসালয়গুলির দেয়ালের পিছনে ঘটে চলা না জানা বহু রহস্য জমা আছে এই বইতে।
THE CASE OF THE MURDEROUS DR. CREAM – Dean Jobb
এই রোমহর্ষক বইটিতে Dean Jobb ভিক্টোরিয়ান যুগের সিরিয়াল কিলার Dr. Thomas Neill Cream-এর রোমাঞ্চকর বাস্তব কাহিনি তুলে এনেছেন। “Lambeth Poisoner” হিসেবে পরিচিত Dr. Cream-এর আইনি ট্রায়াল হয় ১৮৯১ সালের লন্ডনে। তার চিকিৎসালয় ছিল তৎকালীন শিকাগো শহরের বেশ্যালয়ের কাছাকাছি কোন স্থানে। সেখানে পতিতাদের বেআইনি গর্ভপাত সংক্রান্ত কাজে তিনি জড়িত ছিলেন প্রথম জীবনে। পরবর্তীকালে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে একের পর এক নারীদের হত্যা করতে থাকেন Dr. Cream। অনেকটা Jack The Ripper-এর কিংবদন্তির সঙ্গে মিলে যায় Dr. Cream-এর ঘটনা। এমনকি ফাঁসির মঞ্চে Dr. Cream স্বীকার করেন তিনিই Jack The Ripper। যদিও এ ঘটনা সত্যি বলে মনে হয় না, কারণ ডক্টর ক্রিমের ট্রায়াল চলাকালীন Jack The Ripper-এর হত্যালীলা চলছিল। Dean Jobb এই ভিক্টোরিয়ান যুগের বাস্তব ঘটনার সঙ্গে যথার্থই সুবিচার করেছেন the case of the murderous Dr. Cream বইতে।
WHAT HAPPENED TO PAULA – Katherine Dykstra
১৯৭০ সালের জুলাই মাসে ১৮ বছরের Paula Oberbroeclling তার সিডার র্যাপিডস এলাকার বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। প্রায় চার মাস পর সিডার নদীর কালভার্টে Paula-র মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তার মৃত্যুর কারণ আজও অজানাই থেকে গেছে। এই ঘটনাকে অবলম্বন করেই নন-ফিকশন লেখিকা Katherine Dykstra, What happened to Paula বইটি লিখেছেন। Paula-র মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে Katherine-এর খানিকটা ব্যক্তিগত যোগসূত্রও রয়েছে। তার শাশুড়িমা ফিকশন লেখিকা Susan Taylor Chehak ছিলেন Paula-র সহপাঠী। একই এলাকায় তাঁরা বেড়ে ওঠেন। সহপাঠীর মৃত্যু রহস্যের বহু সন্ধান করেছিলেন Susan। পরবর্তীকালে Katherine-কেও Paula-র ঘটনা বিশেষভাবে নাড়া দেয়। এই বইতে Katherine ষাটের দশকে আমেরিকান সমাজের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে গিয়ে বাঁচতে চাওয়া, আপাত-উচ্ছল Paula-র মৃত্যুর ঘটনাকে এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন।
KARACHI VICE – Samira Shackle
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক Samira Shackle-এর প্রথম নন-ফিকশন কাজ KARACHI VICE। করাচি শহরের প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এই বইয়ের অবতারণা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বোমাবাজি – সব মিলিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের চেনা ছবি এঁকেছেন লেখিকা। বর্তমান কয়েক বছরে সারা বিশ্বে অপরাধমূলক কার্যকলাপের নিরিখে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি কিছুটা পরিবর্তিত হলেও সেখানকার যুবক এমনকি কিশোরদের রক্তক্ষয়ী হিংসায় জড়িয়ে পড়ার বাস্তব দৃষ্টান্ত ধরা পড়েছে Samira-এর কলমে।
.............
(ঋণ : www.crimereads.com)