বাঘের মাসি, নাকি বাঘমামার গল্প
বই: মশগুললেখক: শিবানী রায়চৌধুরীপ্রকাশক: থীমা
এক যে ছিল বেড়াল। ছিল তো ছিল, বিজলিমাসির ঝুপড়িতে আর কেলোর দোকানে ভালোই দিন কাটছিল তার। বিপত্তিটা ঘটল একদিন লোভে পড়ে রামবাবা খেতে গিয়ে। বিপদ বলে বিপদ! নন্দলাল জিউ লেনের মোড়ে কেলোর ছোট্ট দোকান থেকে বালিগঞ্জ পার্ক রোডের তিনতলা বাড়ি, কতদূরে চলে গেছে বেচারা! বড়ো রাস্তা পেরোতে গিয়ে মা যখন আকাশে চলে গেল, গুলগুলির নাম পালটে বিজলিমাসি নতুন নাম রাখল মশগুল। মা-র সঙ্গে হনুমানজি হোটেলের একতলায় থাকতে মাছ-ডিম-মুরগি ঢুকতে পেত না। আর বিজলিমাসির ঝুপড়িতে এক-একদিন মটরপনিরও জুটে যায়। তা ছাড়া কেলো খেতে দেয় চকোলেট বিস্কুট, ক্রিম দেওয়া কেক। তা সেই কেলোই বলল, ‘বড়ো হচ্ছিস, একটু এদিক সেদিক ঘুরে দেখ’। আর এমনি করেই হাজরার মোড় পেরিয়ে চকচকে কেকের দোকানটা চিনে ফেলেছিল মশগুল। আর কেকের দোকানে বিরাট বাক্সটাতে ঢুকেই তো হল যত মুশকিল। বাক্সটাতে অনেক খাবারের ঠোঙা দেখে মশগুল লোভ সামলাতে পারেনি। তার মধ্যে ঢুকে লুকিয়ে লুকিয়ে রামবাবা খেয়েছিল। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল কে জানে! এখন ঘুম ভেঙে দ্যাখে কিনা এই কাণ্ড!
আরও পড়ুন : ভারভারা রাওয়ের জেলজীবনের আখ্যান : ‘CAPTIVE IMAGINATION’
বালিগঞ্জ পার্কের বাড়িতেও কম গোল বাধেনি। এ বাড়িতে থাকে মোটে তিনটে লোক আর কুকুর গোলন্দাজ। রোজ খাবারদাবার চুরি হচ্ছে দেখে মানুদিদির মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। শেষমেশ ইঁদুর ঢুকছে ভেবে মণিলাল নিয়ে এল শ্যামদেশের এক স্টাইলিশ বেড়াল, তার নাম কোকো। আবার গেটের সামনে মশগুলকে শুকনো মুখে বসে থাকতে দেখে তাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এল মানুদিদি। বাড়িতে তখন দাদাসাহেবের জন্মদিনের হইচই, আর সেখানেই বসেছে ম্যাজিকের আসর।
তারপর? ছিল বেড়াল, ম্যাজিশিয়ান মিস্টার ফনফনিয়ার ইচ্ছাপূরণ বাক্সে ঢুকে সে কি হয়ে গেল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার? বিরাট কিছু হতে চাওয়ার ইচ্ছে কি শেষে মিটল তার? এই নিয়েই শিবানী রায়চৌধুরীর কলমে অভিনব এক রূপকথা, ‘মশগুল’। প্রচ্ছদে আর পাতায় পাতায় রয়েছে দেবাশীষ দেবের মন ভালো করে দেওয়া সব রংচঙে ছবি।
আরও পড়ুন : পাউডার কৌটোর টেলিস্কোপ
সাম্প্রতিক কালে ছোটোদের বইয়ের পাতা ওলটালে দেখা যায় শিশুসাহিত্যকে প্রাপ্তবয়স্ক করে তোলার জন্য এক প্রচণ্ড দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। একদিকে যন্ত্রনির্ভরতা আর আর-একদিকে তন্ত্রকাতরতার জোয়ার এসে লেগেছে সেখানেও। ইঁদুর দৌড়ের পৃথিবীটা খুবই সত্যি, সত্যি টাকাপয়সা-হিংসা-যুদ্ধ সবই, কিন্তু এর বাইরেও যে আরও কিছু রয়ে যায়, শিশুসাহিত্যও যদি তার খবর না দেয়, তবে কে দেবে! যাঁরা এখনও লীলা মজুমদার-মহাশ্বেতা দেবী-শৈলেন ঘোষের ঘোর কাটিয়ে বেরোতে পারেননি, এই বই তাঁদের ছোটবেলাকে হারিয়ে ফেলার মনখারাপ একটুখানি ভুলিয়ে দেবে, এ কথা জোর দিয়েই বলা চলে।
#মশগুল #শিবানী রায়চৌধুরী #থীমা #বেড়াল #শিশুসাহিত্য #কিশোরসাহিত্য #দেবাশীষ দেব #বই রিভিউ #Book Review #রণিতা চট্টোপাধ্যায় #সিলি পয়েন্ট #Silly Point