আত্মকথনে উন্মোচিত করেছেন সমাজ-রাজনীতির অন্তর্লোক : সাহিত্যে নোবেল পেলেন অ্যানি এরনো
“...for the courage and clinical acuity with which she uncovers the roots, estrangements and collective restraints of personal memory.” ৮২ বছর বয়সী ফরাসি সাহিত্যিক অ্যানি এরনো-কে সাহিত্যে এ বছরের নোবেল দেবার কারণ হিসেবে নোবেল কমিটি এই বক্তব্যটি রেখেছেন।
ফরাসী উচ্চারণ অনুযায়ী বানান সম্ভবত অ্যানি এখনোঁ। সাহিত্যে নোবেলজয়ীদের মধ্যে অ্যানিই প্রথম ফরাসি মহিলা। লিখেছেন ৩০টিরও বেশি উপন্যাস। তাঁর জীবনের অধিকাংশ রচনাই আত্মজৈবনিক। মারসেল প্রুস্তের মতো লেখকের সঙ্গে হয়তো এইদিক থেকে তুলনা চলতে পারে তাঁর। পেশায় অধ্যাপক। ইতিহাসের ঘটনাবলীর সঙ্গে তিনি মিলিয়ে দিয়েছেন নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতিমালা। নারীর স্বাধীনতা, সামাজিক বৈষম্য ইত্যাদি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর রচনারীতিকে 'Literary sociology' বলে উল্লেখ করেছেন কোনও কোনও সমালোচক।
১৯৪০ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্যারিস থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের নিকটবর্তী ছোট্ট শহর ইভেতো (Yvetot)। এখানে অ্যানি কাটিয়েছেন তাঁর বৈচিত্র্যময় শৈশব-কৈশোর। তাঁর লেখায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে ইভেতো। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস Les Armoires vides (ক্লিনড আউট)’। এরপর একের পর এক আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস লিখে গেছেন। ১৯৮৪ সালে লিখেছেন works La Place (A Man's Place) উপন্যাস। প্রতিটি লেখায় নিজেকে অকপটে উজাড় করে দিয়েছেন, বেআব্রু করেছেন নিজের সমাজ ও পারিপার্শ্বিককে। তাঁর নিজের জীবনই তাঁর আখ্যান হয়ে উঠেছে। ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়েই হইচই ফেলে দেয় তাঁর উপন্যাস Happening। ২৩ বছর বয়সে নিজের অবৈধ গর্ভপাতের গল্পই এই উপন্যাসের মূল বিষয় করেছিলেন অ্যানি। পরবর্তীকালে এই উপন্যাসটি চলচ্চিত্রায়িত হয় এবং বিভিন্ন ফিল্ম উৎসবে প্রচুর পুরস্কার পায়। অবশ্য অ্যানির শ্রেষ্ঠ কাজ বলে বিবেচিত হয় ২০০৮ সালে প্রকাশিত Les Années (The Years) উপন্যাসটি ।
আরও পড়ুন : এই শতাব্দীর 'সেরা বইয়ের লেখক' : বিদায় নিলেন দু-বারের বুকারজয়ী হিলারি ম্যান্টল / সুমনা ঘোষ
অ্যানি লেখালিখিকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ হিসেবেই দেখেন। তাই কলমকে ব্যবহার করেন ছুরির মতোই। সমস্ত আড়াল ছিঁড়েখুঁড়ে সত্যকে বের করে আনেন সূর্যালোকে। সিমন দ্য বভেয়া আর পিয়ের বরদু -র লেখাই তাঁকে প্রাথমিকভাবে সাহিত্যরচনায় উস্কানি দিয়েছিল বলে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অ্যানি। তাঁর কথায়, বভেয়া আর বরদু-র বলিষ্ঠ বক্তব্যই নারীবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল তাঁকে। এর আগে অ্যানি ফরাসি অ্যাকাডেমি পুরস্কার, প্রিমিও স্ত্রেগা, প্রিমিও হেমিংওয়ের মতো সম্মানজনক সব পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের তালিকাতেও ছিলেন তিনি। তাঁর নোবেলপ্রাপ্তি নারীর দ্বিধাহীন, শিকলহীন বেঁচে থাকার স্বীকৃতি বললেও ভুল হয় না। অ্যানি নিজে অবশ্য মনে করছেন, এই পুরস্কারপ্রাপ্তি লেখক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দিল।
...............................
#Annie Ernaux #Nobel Prize in Literature #silly পয়েন্ট